-->

কদর বাড়ছে কুইচ্যা মাছের, হচ্ছে রপ্তানিও

খুলনা ব্যুরো
কদর বাড়ছে কুইচ্যা মাছের, হচ্ছে  রপ্তানিও
কুইচ্যা মাছ

মাছ, কাকড়া, শুঁটকির পর এবার উপকূলীয় অঞ্চলে কুইচ্যা মাছের কদর দিন দিন বেড়েই চলছে। দক্ষিণাঞ্চলের কুইচ্যা মাছ দেশের মাটি ছাপিয়ে চলে যাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। এ অঞ্চলের জেলেরা এ মাছ থেকে অর্জন করছেন বৈদেশিক মুদ্রা।

 

দক্ষিণের উপকূলীয় অঞ্চলের এ কুইচ্যা মাছ রপ্তানিতে উন্নত প্রক্রিয়াজাতকরন উদ্ভাবন ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সম্ভাবনাময় এ খাত থেকে কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

 

উপকূলীয় সুন্দরবন সংলগ্ন খুলনা, বাগেরহাট, সাথক্ষীরা, বরগুনার অধিকাংশ জায়গা অসংখ্য নদী-নালা ও খাল-বিল দ্বারা বিস্তৃত। এক সময় এসব নদীনালা, খালবিল ছিল মৎস্য সম্পদে সমৃদ্ধ। পরবর্তীতে আশির দশকে বিদেশে চিংড়ির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় হাজার হাজার চাষি চিংড়ি চাষে ঝুঁকে পড়ে।

 

চিংড়ির পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, কাকড়া ও শুঁটকি বিদেশে রপ্তানি শুরু হলে এসব চিংড়ি ঘেরে ভিন্ন প্রজাতির মাছ হিসেবে কুইচ্যা মাছ বেড়ে ওঠে। এক সময় কুইচ্যা মাছ রপ্তানি শুরু হয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।

 

কুইচ্যা মাছ বিভিন্ন প্রজাতির হয়ে থাকে। স্থানীয়ভাবে কয়েকটি প্রজাতির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কুইচ্যা, আইজ ও বন্ট্রা। এদের দেহ লম্বাটে এবং শরীর গোলাকৃতির হয়ে থাকে। এ অঞ্চলের হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেক লোকেরা এ মাছ খেয়ে থাকে বলে সুন্দরবন পার্শ্ববর্তী চাষিরা জানায়।

 

স্থানীয় অধিকাংশ কুইচ্যা মাছ চাষিরা জানান, গত পাঁচ-ছয় বছর যাবৎ কাকড়া ও অন্যান্য মাছের সাথে ব্যাপক হারে এ মাছ বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে।

 

সূত্র মতে, বছরের অধিকাংশ সময় কুইচ্যা মাছ পাওয়া গেলেও শীত মৌসুমে এ মাছ বেশি ধরা পড়ে। বর্তমানে এ অঞ্চলে প্রায় দেড় লাখ হেক্টর জমিতে চিংড়ি চাষের পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে কুইচ্যা মাছ চাষ হচ্ছে। এ এলাকার অধিকাংশ ঘের অক্টোবর থেকে জানুয়ারির মধ্যে শুকিয়ে ফেলা হয়।

 

কুইচ্যা চাষিদের মতে, এ মাছ সাধারণত মাটির গভীর গর্তে লুকিয়ে থাকে। এজন্য চিংড়ি ঘের শুকানোর মৌসুমে কুইচ্যা বেশি পরিমাণ ধরা পরে থাকে। কুইচ্যা আহরণে বড়শি, ছোট বাধা জাল, স্কালা জাতীয় উপকরন ব্যবহার করা হলেও শুকনো মৌসুমে জেলেরা ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকে।

 

বিশেষজ্ঞদের মতে, কুইচ্যা সাধারণত জলজ প্রাণী খেতে অভ্যস্ত। এ কারণে ঘের মালিকরা অন্যান্য মৎস্য সম্পদ আহরণের পর ঘেরের পোনা যাতে কুইচ্যা না খেতে পারে সে জন্য ঘের মালিকরা আগেভাগেই কুইচ্যা ধরার ব্যবস্থা করে।

 

সুন্দরবনাঞ্চলীয় জেলেদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এ অঞ্চলে শত শত নারী-পুরুষ কুইচ্যা আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার রামনগরের বাসিন্দা রিপন মন্ডল ও তার স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা মন্ডল এ প্রতিবেদককে জানান, তারা প্রতিদিন অন্তত ১০ কেজি কুইচ্যা মাছ আহরণ করে থাকেন এবং স্থানীয় পাইকারদের কাছে ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হলেও এ মাছ কেজি প্রতি বিদেশের মাটিতে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে।

 

পাইকগাছা বাজারের কুইচ্যা মাছ ব্যবসায়ী বিধান চন্দ্র মন্ডল জানান, আহরণকারীদের কাছ থেকে ক্রয়কৃত কুইচ্যা জীবিতগুলো ঢাকায় রপ্তানিকারক পাইকারদের নিকট সরবরাহ করা হয় এবং মারা যাওয়া কুইচ্যা শুঁটকি তৈরি করে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দরে কেজিপ্রতি বিক্রি হয়ে থাকে।

 

সূত্রমতে, এ অঞ্চলে মাসে প্রায় ৮০ লাখ থেকে দেড় কোটি টাকার কুইচ্যা মাছ রপ্তানি হয়ে থাকে।

 

ভোরের আকাশ/নি

মন্তব্য

Beta version