-->

১০ টাকার ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা এখন ৯০ টাকা !

ময়মনসিংহ ব্যুরো
১০ টাকার ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা এখন ৯০ টাকা !
ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা (ফাইল ফটো)।

‘তিন মাস আগে ব্রয়লার মুরগির একদিনের বাচ্চার পিস কিনেছি আট থেকে ১০ টাকা। এখন সেই বাচ্চা কিনছি ৯০ টাকায়। এর আগে পোলট্রি খাদ্যের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। লাগামহীনভাবে বাচ্চা ও খাদ্যের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে ব্রয়লার মুরগির দাম নাগালের বাইরে চলে গেছে।’

 

এসব কথা বলেছেন ময়মনসিংহ সদরের বড়বিলার পাড় গ্রামের ব্রয়লার মুরগির খামারের মালিক শাহিনুর ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ঈদ সামনে রেখে উৎপাদন কোম্পানি ও ডিলাররা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে এক দিনের ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন কয়েকগুণ। এখন মুরগির বাচ্চা কিনতে আমাদেরও হিমশিম খেতে হয়। ময়মনসিংহ সদরের বড়বিলার পাড় গ্রামের ব্রয়লার মুরগির খামারের মালিক শাহিনুর ইসলাম।

 

গত ১২ মার্চ খামারে এক দিন বয়সি ৫০০টি ব্রয়লারের বাচ্চা উঠিয়েছি উল্লেখ করে শাহিনুর ইসলাম বলেন, ‘ভালুকার সানি চিক্স ইন্ডাস্ট্রির ডিলারের কাছ থেকে ৯০ টাকা করে একেকটি বাচ্চা কিনেছি। ৩০ দিন এসব বাচ্চা লালনপালনের পর বিক্রির উপযোগী হবে।

 

প্রতিটি বাচ্চা ৩০ দিনে খাদ্য গ্রহণ করবে আড়াই কেজি। প্রতি কেজি খাদ্যের দাম ৭৩ টাকা। হিসাবে প্রত্যেকটি মুরগির খাদ্যের খরচ পড়বে ১৮৩ টাকা। সেইসঙ্গে মেডিসিন, বিদ্যুৎ, তুষ ও কর্মচারী খরচ আরো ২০ টাকা। সবমিলে একটি বাচ্চাকে ৩০ দিন লালনপালন করতে উৎপাদন খরচ পড়ে ২৯০ টাকা।

 

ওই মুরগির সর্বোচ্চ ওজন হবে এক কেজি ৭০০ গ্রাম। প্রতি কেজি মুরগির উৎপাদন খরচ পড়বে ১৭২ টাকা। এই অনুযায়ী বিক্রি করে লাভ কিংবা লোকসান গুণতে হবে।’

 

শাহিনুর আরো বলেন, ‘গত ১৭ মার্চ ৪০০টি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করেছি। ৩০ দিন বয়সি প্রতিটি মুরগির উৎপাদন খরচ পড়েছিল ২৬২ টাকা। প্রতিটি মুরগি বিক্রি করতে পেরেছি ৩৬০ টাকা দরে। এই হিসাবে লাভ হয়েছে ৩৯ হাজার ৩৬০ টাকা।’

 

সদরের দিঘারকান্দার খামারি রাসেল মিয়া বলেন, ‘মুরগির বাচ্চার দাম বেড়ে যাওয়ায় কয়েক মাস আগে লোকসানে পড়েছিলাম আমরা। তখন অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে। উৎপাদন কমে গেছে। এর মধ্যে মুরগির দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। তবে এখন আবার একটু কমতির দিকে আছে।’

 

উৎপাদন কোম্পানি ও ডিলাররা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে এক দিনের ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন কয়েকগুণ। মেসার্স গুরু পোলট্রি ফার্মের পরিচালক রেজাউল করিম জয় বলেন, ‘কৃত্রিম সংকট তৈরি করে কোম্পানিগুলো বাচ্চার দাম বাড়িয়ে দেয়ায় বাজারে ব্রয়লারসহ অন্যান্য মুরগির দাম ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মনিটরিং না থাকায় পোলট্রি খাতে অরাজকতা চলছে।’

 

তিনি আরো বলেন, ‘পোলট্রি কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে এক দিনের প্রতিটি বাচ্চা ৭০-৮০ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। এই দামে এক হাজার বাচ্চা কিনলে সঙ্গে বাধ্যতামূলক ২৫০০ কেজি পোলট্রি খাদ্য নিতে হয়। তবে পোলট্রি খাদ্য না নিলে এক দিনের প্রতিটি বাচ্চার দাম ৯০ টাকা দিতে হয়।’

 

হঠাৎ মুরগির বাচ্চার দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে সানি চিক্স এগ্রো ইন্ডাস্ট্রির ময়মনসিংহ জোনের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার মোকাম্মেল হোসেন বলেন, ‘ঈদ সামনে রেখে অনেক মৌসুমি খামারি ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা লালনপালন করায় এক দিনের বাচ্চার চাহিদা বেড়ে গেছে।

 

সেইসঙ্গে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাচ্চার দাম বেড়েছে। ঈদের পর এই সমস্যা অনেকটাই কেটে যাবে। তখন ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার দাম স্বাভাবিক হবে।’

 

এ বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সোমেরি খাতুন বলেন, ‘জেলায় ছোট-বড় মিলে পোলট্রি খামারি রয়েছেন ১১ হাজার। লোকসান গুনতে গিয়ে এর মধ্যে অনেক খামারি মুরগি লালনপালন বন্ধ করে দিয়েছেন। উৎপাদন কমে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় মুরগির দাম অনেকাংশে বেড়েছে। আবার খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে। ফলে বাচ্চা কিংবা বড় মুরগি অর্থাৎ সবখানে প্রভাব পড়েছে।’

 

ময়মনসিংহ নগরীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে ব্রয়লার মুরগির কেজি ২৩০, সোনালি ৩৫০, লেয়ার ৩২০, দেশি ৬০০, কক ৩২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

 

পাশাপাশি ব্রয়লার মুরগির পা ও কলিজার কেজি ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version