-->

বৈরী আবহাওয়ার কারণে দক্ষিণাঞ্চলে বোরো উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে

বরিশাল ব্যুরো
বৈরী আবহাওয়ার কারণে দক্ষিণাঞ্চলে বোরো উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে

দক্ষিণাঞ্চলে ৩ লাখ ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদে বীজতলা তৈরির লক্ষ্য অতিক্রম করলেও পৌষের শুরু থেকে তাপমাত্রা অব্যাহত ভাবে স্বাভাবিকের নিচে থাকার পাশাপাশি ঘন কুয়াশায় ‘কোল্ড ইনজুরি’ নিয়ে শঙ্কিত কৃষিযোদ্ধাগণ।

 

চলতি রবি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলায় বোরো ধান থেকে প্রায় ১৭ লাখ টন চাল পাওয়ার লক্ষ্য স্থির করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। সদ্য সমাপ্ত খরিপ-২ মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে ৮ লাখ ৫৭ হাজার ১৩৮ হেক্টরে আমন আবাদ লক্ষ্য অতিক্রম করে প্রায় ২০ লাখ ৫৬ হাজার টন চাল উৎপাদন লক্ষমাত্রা অতিক্রম করেছে বলে মনে করছে কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর-ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল।

 

কিন্তু মৌসুমের শুরু থেকে তাপমাত্রার পারদ অব্যাহতভাবে স্বাভাবিকের নিচে থাকায় জনস্বাস্থ্যের সঙ্গে রবি আবাদ ও উৎপাদনে যথেষ্ঠ বিরূপপ্রভাব পড়ছে।

 

অথচ বিগত খরিপ ১ ও খরিপ-২ মৌসুমের পরে চলতি রবি মৌসুম মিলিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৫০ লাখ টন দানাদার খাদ্য উৎপাদনের কথা। এমনিক তাপমাত্রা স্বাভাবিকের নিচে নামার সঙ্গে কুয়াশায় দক্ষিণাঞ্চলে শীতকালীন সবজির উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে গুণগত মানও। চলতি রবি মৌসুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১১ জেলায় প্রায় ৭০ হাজার হেক্টরে শীতকালীন সবজির আবাদ হচ্ছে। উৎপাদন লক্ষ্য প্রায় ১৫ লাখ টন।

 

এবার ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’-এ ভর করে কার্তিকের নজিরবিহীন প্রবল বর্ষণে দক্ষিণাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকার আগাম শীতকালীন সবজিসহ অন্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতির পরেও কৃষিযোদ্ধাগণ পুনরায় রবি ফসল আবাদে মাঠে। ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াশ’,‘অশণি’ ও ‘সিত্রাং’-এর মতো ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে অব্যাহত লড়াই করছে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিযোদ্ধাগণ। বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১১ জেলায় একের এপর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ কৃষকদের দুশ্চিন্তা বৃদ্ধি করছে।

 

এবার শীত মৌসুম শুরুর আগেই তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের নিচে নামতে থাকে। বরিশালে তাপমাত্রা ইতোমধ্যে প্রায় ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে গেছে। যা স্বাভাবিকের প্রায় ৪ ডিগ্রি নিচে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলমান মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়েছে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি জেলাও। মাঘের শুরুতেই তাপমাত্রা স্বাভাবিকের ২-৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস নিচে নেমে যাওয়ার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমের হীমেল হওয়ায় বোরো বীজতলা ক্রমাগত ‘কোল্ড ইনজুরি’ কবলে পড়তে যাচ্ছে।

 

পাশাপাশি হাড় কাঁপানো শীতে কৃষক ও কৃষি শ্রমিকরা মাঠে নামতে পারছেন না। অথচ সপ্তাহ দুয়েক আগেও সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের মাঠে মাঠে আমন কাটার ধুম চলেছে। তবে চলমান শৈত্যপ্রবাহ গম উৎপাদনে যথেষ্ঠ ইতিবাচক ফল দেবে বলে আশাবাদী কৃষিবিদগণ। চলতি রবি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৫৫ হাজার টন গম উৎপাদনের লক্ষ্যে কৃষিযোদ্ধাগণ কাজ শুরু করেছেন।

 

প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করে আউশ ও আমনের সফলতার পরে বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১১ জেলায় আরো প্রায় সাড়ে ১৭ লাখ টন বোরো চাল পাওয়ার লক্ষ্যে বীজতলা তৈরি সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু অব্যাহত শৈত্যপ্রবাহ আবাদ লক্ষ্য অর্জনে ঝুঁকি বৃদ্ধি করছে। ইতোমধ্যে প্রায় ১ লাখ হেক্টরে বোরো আবাদ সম্পন্ন হলেও বীজ নিয়ে কৃষকের দুশ্চিন্তা বাড়ছে। তবে ভাটি এলাকার বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের অনেক এলাকায় আমন কর্তন সম্পন্ন হওয়ার পরে কিছুটা বিলম্বে বীজতলা তৈরি হওয়ায় ফেব্রুয়ারীর শুরু থেকে মার্চের মধ্যভাগ পর্যন্ত বোরো আবাদ চলবে বলে মাঠ পর্যায়ের কৃষিবিদগণ জনিয়েছেন।

 

বিগত প্রায় ৩টি বছরের করোনা মহামারি সংকটে কৃষিযোদ্ধারাই সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে মুখ্য ভ‚মিকা পালন করেন বলে মনে করছেন অর্থনীতির শিক্ষকগণ। তাদের মতে, একের পর এক প্রকৃতিক দুর্যোগ আর করোনা মহামারি সারা দেশের মতো দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতিতে যে বিরূপ পরিস্থিতি তৈরি করে, তা থেকে উত্তরণে কৃষক ও কৃষির ভ‚মিকা ছিল অপরিসীম।

 

আর কৃষিনির্ভর দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতিকে সচল রাখতে নিরলশ পরিশ্রম করে যাচ্ছেন কৃষিযোদ্ধারাই। বিগত খরিপ-১ ও ২ মৌসুমসহ চলতি রবি মৌসুমে আউশ,আমন, বোরো, গম, ডাল, তেলবীজ ও তরমুজসহ বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি উৎপাদনে প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করেছে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিযোদ্ধারাই।

 

খাদ্য উদ্বৃত্ত দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি অর্থনীতি এখনো যথেষ্ঠ শক্ত অবস্থানে থাকলেও তার প্রায় পুরোটাই প্রকৃতি নির্ভর বলেই মনে করছেন কৃষিবিদগণও। আর প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি, কৃষক ও কৃষি অর্থনীতিকে টিকে থাকতে হচ্ছে বলে মনে করছেন কৃষি অর্থনীতিবিদগণও।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version