-->

তামাক চাষ ছেড়ে সবজি-ফল আবাদে ঝুঁকছেন কৃষক

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
তামাক চাষ ছেড়ে সবজি-ফল আবাদে ঝুঁকছেন কৃষক
কুষ্টিয়ার মিরপুরে সবজির ক্ষেতে ব্যস্ত চাষি

প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নের মাঠজুড়ে কয়েক বছর আগেও এ সময়টাতে তামাক আবাদ চোখে পড়ত। তবে স্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব, পরিশ্রম অনুযায়ী লাভ কম এবং রবি ফসলের বাড়তি দাম পাওয়ায় এ চিত্র বদলে গেছে। এ চিত্র দেখা গেছে কুষ্টিয়ার মিরপুরে। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে কৃষকদের সচেতন করার পাশাপাশি প্রণোদনা বাড়ার কারণে তামাক চাষ ছাড়ছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা।

 

চলতি বছর শুধু একটি ইউনিয়নের ১১টি গ্রামে প্রায় ৭০০ কৃষক পুরোপুরিভাবে তামাক চাষ ছেড়েছেন। আরো ৪০০ কৃষক তামাক আবাদ কমিয়ে এনেছেন। যেসব ক্ষেতজুড়ে আগে তামাকের আবাদ করতেন কৃষকরা সেখানে শীতকালীন নানা শাকসবজির পাশাপাশি কুল জাতীয় ফল ও সরিষার আবাদ করছেন তারা। সবজির বাজার দর তুলনামূলক ভালো থাকায় কম প্ররিশ্রম ও অল্প পুঁজিতে বেশি আয় হচ্ছে। এর ফলে কৃষকরা তামাকবিমুখ হচ্ছে বলে মনে করছেন কৃষিবিদ ও তামাকবিরোধী জোটের নেতারা।

 

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নের বলিদাপাড়া গ্রামের কৃষক তুহিন হোসেন। প্রতি বছর ৭ থেকে ১০ বিঘা জমিতে তামাক আবাদ করতেন। তবে বেশ কয়েক বছর আগে থেকে তামাক আবাদ পুরোপুরি ছেড়ে দিয়েছেন এ কৃষক। এখন ৭ বিঘা জমিতে তার কুল বাগান আছে। এ বাগান থেকেই প্রতি বছর তিনি আয় করছেন তিন থেকে ৪ লাখ টাকারও বেশি, যা তামাকের থেকে কয়েক গুণ বেশি। খরচ ও পরিশ্রমও কমেছে তার। তামাক পোড়ানোর সময় পরিবারের নারী-পুরুষ ও শিশুদের ওপর যে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ত তা থেকেও বেরিয়ে আসতে পেরেছেন বলে জানান তিনি।

 

তুহিন বলেন, স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘দিশা’ তাকে তামাক চাষ ছাড়তে উৎসাহ দেয়। তারা তাকে কুল আবাদসহ অন্য ফসল আবাদের ওপর ট্রেনিং করায়। বীজ, সার ও বালাইনাশক বিনামূল্যে দিয়ে সহযোগিতা করায় তিনি এখন সফল।

 

মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, তামাক আবাদের চিত্র বদলে যাচ্ছে। তিন থেকে ৪ বছর ধরে প্রতি মৌসুমেই তামাক আবাদ কমছে। কৃষকরা এ থেকে বের হয়ে আসছেন। গত বছর মিরপুর উপজেলার মাঠে আনুমানিক ৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে তামাক আবাদ হলেও চলতি বছরে কমে তামাক আবাদ হয়েছে ৬ হাজার ৩৯৫ হেক্টর জমিতে, যা আগের বছরগুলোর তুলনায় প্রায় ১৫ ভাগ কম।

 

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, কুষ্টিয়া-মেহেরপুর মহাসড়ক ঘেঁষে বারুইপাড়া ইউনিয়নের অবস্থান। মহাসড়ক ঘেঁষে যেসব ক্ষেতে তামাক চাষ হতো তার বড় অংশ জুড়ে এবার নানা জাতের সবজিসহ রবি ফসলের আবাদ হচ্ছে। বিশেষ করে গম, সরিষা, ভুট্টা, মটর, মসুর আবাদ করছেন কৃষকরা। এমন পরিবর্তন হচ্ছে প্রতি বছরই। মিরপুরের কয়েকটি এলাকায় তামাক আবাদ নিরুৎসাহিত করতে কাজ করছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘দিশা’।

 

দিশার কৃষিবিদ জিল্লুর রহমান কাজ করছেন প্রায় ৫ বছরের বেশি সময় ধরে। প্রথমে বারুইপাড়া ইউনিয়নের কেউপুর গ্রামে তারা কাজ শুরু করেন। কৃষকদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পান। যেসব কৃষক তামাক আবাদ ছাড়তে চান তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া, সার, বীজ ও বালাইনাশক দিয়ে সহযোগিতা করছে এ সংস্থাটি।

 

জিলল্লুর রহমান জানান, বারুইপাড়া ইউনিয়নে ১৭টি গ্রাম আছে। এখন ১১টি গ্রামে তারা কাজ করছেন। ১১টি গ্রামের ৭০০ কৃষক পুরোপুরি তামাক আবাদ ছেড়ে রবি ফসল আবাদ করছেন। আরো ৪০০ কৃষক তামাক আবাদ কমিয়ে এনেছেন। তারাও তামাক আবাদ ছাড়বেন বলে মনে করছেন তিনি।

 

ফকিরাবাদ গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম ও আমকাঁঠালিয়া গ্রামের জান মাহমুদ বড় তামাক চাষি ছিলেন। তারা বছরে প্রায় ৩৫ বিঘার ওপর তামাক আবাদ করতেন।

 

এ দুই কৃষক জানান, তারা এখন এক কাঠা জমিতেও তামাক আবাদ করেন না। অন্য ফসল আবাদ করে তামাকের থেকে কয়েক গুণ বেশি আয় করছেন। বিষের হাত থেকে পরিবেশ রক্ষা পাচ্ছে।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version