-->

ফেনীতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে নানা জাতের ‘কুল’

ফেনী প্রতিনিধি
ফেনীতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে নানা জাতের ‘কুল’
ফেনী শহরের ফলেশ্বরে ৪০ শতক জমিতে কাশ্মীরী, বল সুন্দরী, বাউকুল, আপেল কুলসহ নানা জাতের কুল চাষ করছেন কৃষক আছমত আলী।

ফেনীতে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ হচ্ছে নানা জাতের কুল। গড়ে উঠেছে উচ্চ ফলনশীল জাতের কুল বাগান। ভরা মৌসুমে পাকা-কাঁচা কুলে থোকায় থোকায় ভরে গেছে বাগানগুলো। বলসুন্দরি, কাশ্মীরি, ভারত সুন্দরি ও টক-মিষ্টি কুলের ব্যাপক চাহিদা থাকায় জেলায় ছোট-বড় বাগান গড়ে উঠেছে।

 

অল্প সময়ে কুল চাষ একটি লাভজনক ব্যবসা হওয়ায় কৃষক ও শিক্ষিত বেকার যুবকরা ঝুঁকছেন কুল চাষে। চলতি মৌসুমে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে নতুন নতুন কুল বাগান বেড়েছে। জেলা কৃষি বিভাগ সঠিক তথ্য না দিতে পারলেও কৃষক পর্যায়ে কথা বলে জানা যায় চলতি মৌসুমে এ জেলায় প্রায় কোটি টাকার কুল উৎপাদন হবে।

 

গেল বছর ফেনী পৌর শহরের ফলেশ্বরে ৪০ শতক জমিতে কাশ্মীরী, বল সুন্দরী, বাউকুল, আপেল কুলসহ নানা জাতের কুল চাষ করছেন কৃষক আছমত আলী। তার সাফল্যের খবর সংবাদ মাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরে সারা জেলায়।

 

ফলশ্রুতিতে এ বছর বেড়েছে আরও বেশ কয়েকটি বাগান। কৃষকরা বলছেন তাদের উৎপাদিত এসব কুল বাজারে নেওয়ার আগেই ক্রেতারা বাগান থেকেই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন কুল। একদম তাজা, নানা স্বাদের কুল পেয়ে ক্রেতারা যেমন খুশি বিক্রেতারাও তেমন খুশি।

 

ফেনী সদর উপজেলার আমিন বাজার এলাকায় ৩ বন্ধু মিলে জান্নাত এগ্রো নামে একটি কৃষি প্রকল্পে ৫ একর জমিতে ৮ হাজার গাছের কুল বাগান করেছেন। ৩ বন্ধু হলেন- তোফায়েল আহমেদ রনি, জাহিদুল ইসলাম ও মাসুদুর রহমান।

 

তোফায়েল আহমেদ রনি জানান, গত বছর তারা গাছগুলো লাগিয়ে ছিলেন এ বছর ফলন এসেছে। ইতোমধ্যে ১৩০ টাকা কেজী দরে ৫’শ কেজী কুল বিক্রি করেছেন তারা। চলতি মৌসুমে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকার কুল বিক্রি করার লক্ষ্যমাত্র রয়েছে তাদের।

 

ফেনী শহরতলীর আলী আজ্জম সড়কের পাশে আছমত আলীর বাগানে গিয়ে দেখা যায় সেখানে গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে বল সুন্দরী, ভারত সুন্দরী, আপেল কুল, বাউকুলসহ পাঁচ প্রজাতির কুল।

 

আছমত আলী জানান, গত বছরে ৪০ শতকের পর এবার আরও ১০ শতক জমিতে কুল চাষ বাড়িয়েছি। সে বছর ফলনের পাশাপাশি দামও ভালো ছিলো। এবার চলতি বছরে সব মিলিয়ে লাখ খানেক টাকা খরচ হলেও মৌসুমের শুরতেই ৫০ হাজার টাকার মতো কুল বিক্রি হয়েছে। পুরো মৌসুমে এই বাগান থেকে দেড় থেকে সাড়ে ২ লাখ টাকার কুল বিক্রি করার অশা করা হচ্ছে।

 

ফেনী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমীন আক্তার বলেন, এ সব কুল চাষিরা কৃষি বিভাগ থেকে কোনো প্রণোদনা না পেলেও প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। বাগান করার জন্য উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা তাদের নিয়মিত বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন।

 

উপ সহকারী কৃষি অফিসার (উন্নয়ন শাখা) মাহমুদুল করিম জানান, ফেনী সদরের বিভিন্ন এলাকায় কুল চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষকদের যে কোনো সমস্যায় তাদের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

 

কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তর ফেনীর উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মিঠুন ভৌমিক বলেন, জেলায় প্রায় ৮৬ হেক্টর জমিতে কুলের আবাদ হয়েছে। যার উৎপাদন প্রায় লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৯৩৮ মেট্রিক টন। তবে কৃষক সংখ্যার সঠিক কোনো তথ্য দিতে পারেনি এই কর্মকর্তা।

 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরর ফেনীর উপ-পরিচালক মো. একরাম উদ্দিন বলেন, ফেনীতে কুলের বাণিজ্যিক আবাদ বাড়ছে। সদরের কে পাহারিয়া এগ্রোসহ কয়েকটি কুল বাগান পরিদর্শন করে দেখা যায় কুলের ফলন অন্য অঞ্চল থেকে ভাল। সবমিলিয়ে বলা যায় এই অঞ্চলের মাটি কুলের চাষাবাদের জন্য উপযুক্ত।

 

তিনি আরও বলেন, যে কোনো ধরনের মাটিতেই কুলের সন্তোষজনক ফলন পাওয়া যায়। কুলগাছ লবণাক্ততা ও জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে। তবে ভারি ও সামান্য ক্ষারযুক্ত বেলে দো-আঁশ মাটিতে কুলের ভালো ফলন পাওয়া যায়। ফেনীতে এ ধরনের জমি রয়েছে।

 

এ কৃষিবিদ বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার একটি বড় লক্ষ্য পুষ্টি নিশ্চিত করা। সে লক্ষ্যে এবং সরকার কৃষিকে বাণিজ্যিকীকরণ করার লক্ষ্যে বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার উচ্চ মূল্যের ফল, বিভিন্ন শাক-সবজি এবং ফসল উৎপাদনে গুরুত্ব দিচ্ছে। এ লক্ষ্য সফল কুল চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে প্রান্তিক কৃষকদের।

 

আনাবাদী জমির ব্যবহার

 

কৃষি কর্মকর্তা ও মাঠ পর্যায়ের কৃষকরা বলেন, কুলের আবাদের জন্য চাষের জমির খুব একটা প্রয়োজন হয় না। বাগান আকারে চাষের জন্য উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি ভালো। তাছাড়া বাড়ির আনাচে-কানাচে, পুকুর পাড়ে বা আঙিনায় পড়ে থাকা অনুর্বর মাটিতেও গর্ত করে চাষ করা যায়।

 

 

পতিত জমিতে কুল চাষ করে ইতোমধ্যে অনেক চাষি আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হচ্ছেন, অন্যদিকে পুষ্টির ঘাটতি পূরণসহ জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন। পতিত জমিতে চাষ করে কৃষিতে নতুন বিপ্লব সম্ভব।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version