-->

আপনারা অভিযোগ করেন, আমার কিচ্ছু হবে না

রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
আপনারা অভিযোগ করেন, আমার কিচ্ছু হবে না
দুপুর ১২টায় বন্ধ পশ্চিম পোমরা কমিউনিটি ক্লিনিক

ঠিকমতো ক্লিনিকে আসেন না দায়িত্বরত কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডর (সিএইচসিপি) জুবলু বড়ুয়া। এতে রোগীরা ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, আপনার বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করব। এ কথা শুনে পশ্চিম পোমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের দায়িত্বে থাকা কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডর (সিএইচসিপি) দম্ভোক্তি প্রকাশ করে বলেছেন, ‘আপনারা যতই অভিযোগ করেন, আমার কিচ্ছু হবে না।’

 

সেবাগ্রহীতাদের অভিযোগের ভিত্তিতে যাওয়া হয় ওই কমিউনিটি ক্লিনিকে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায়। তখনো ক্লিনিকের দরজা বন্ধ সিএইচসিপি আসেনি। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে এলাকাবাসী তুলে ধরলেন অভিযোগের ঝাঁপি।

 

আবারো বেলা সাড়ে ১১টায় গেলে পথে দেখা যায় ক্লিনিক খুলেছেন সিএইচসিপি জুবলু বড়ুয়া। ঘণ্টাখানেক পর ফিরে এসে দেখা যায়, দরজা বন্ধ করে চলে গেছেন। তবে দরজায় ছিটকিনিও নেই। একটি অটোরিকশা করে চলে যাচ্ছেন ক্লিনিকের দায়িত্বে থাকা সিএইচসিপি জুবলু বড়ুয়া। ইচ্ছে হলে খোলেন দরজা-যখন তখন বন্ধও করেন।

 

এদিকে কমিউনিটি ক্লিনিক থাকলেও নেই কোনো সাইনবোর্ড। সামনে গেলে বোঝা মুশকিল এটি কমিউনিটি ক্লিনিক নাকি গোয়াল ঘর। ওষুধপত্র ও সরঞ্জামাদি পড়ে রয়েছে যত্রতত্র।

 

সেবাপ্রার্থী এলাকাবাসীদের থেকে জানতে চাইলে অনেকেই বলেন, উনি আসেন, বসেন, চলে যান। নিজ দায়িত্বে দরজা খুলেন, নিজ দায়িত্বে দরজা বন্ধও করেন। সেবা নিতে গেলে দরজা বন্ধ থাকে। কারণ সিএইচসিপি ঠিকঠাক আসেন না। ওনাকে অনেক মাসে শুধু ৮-৯ দিন আসতেও দেখা যায়। কারো ওষুধ নিতে হলেও নেয়ার সুযোগ নেই।

 

পরিবার পরিকল্পনার একটি সূত্র জানায়, সিএইচসিপি জুবলু বড়ুয়া আগেও পশ্চিম পোমরা কমিউনিটি ক্লিনিকে দায়িত্বে ছিলেন। পরে অন্যত্র বদলি হয়ে চলে যেতে হয় তাকে। তবে আবারো লবিংয়ের মাধ্যমে চলে আসেন একই কমিউনিটি ক্লিনিকে। আসার পর থেকেই এভাবে ইচ্ছেমতো দরজা খোলা-বন্ধের মাধ্যমে চলতে থাকে ক্লিনিক।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় সেবা নিতে যাওয়া এক মহিলা বলেন, প্রয়োজন মতো ওষুধ পাওয়া যায় না। যত্রতত্র অবস্থা। ওনি ঠিকমতো না আসায় ওনার বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দিব বললে তিনি বলেন, অভিযোগ করেন, আমার কিচ্ছু হবে না।

 

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক থাকলেও পর্যাপ্ত সেবা নেই। দায়িত্বে যিনি রয়েছেন তিনি সপ্তাহে দুদিনও আসেন না। কোনো ওষুধ নিতে গেলে দেখা যায় দরজা বন্ধ। তালা কেনার টাকা না থাকায় তালাও ঝুলাতে পারেন না। সেবা নামেমাত্র, ওনি ইচ্ছেমতো আসে আবার ইচ্ছেমতো চলে যায়।

 

এদিকে কমিউনিটি ক্লিনিক সকাল ৯টা থেকে খোলার কথা থাকলেও ক্লিনিক খোলার কোনো টাইম নির্ধারিত থাকে না। কখনো তিনি আসেন ১১টা কিংবা ১২টা। কোনোদিন দুপুরের পর আবার কোনো সময় ঘোষণাবিহীন বন্ধও রাখা হয় দিনভর।

 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পশ্চিম পোমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডর জুবলু বড়ুয়া জানান, বৃহস্পতিবার আমি দ্রুত চলে আসছি আমার ভাইয়ের বিবাহ অনুষ্ঠানে। এ কারণে আমার ছুটির প্রয়োজন, দেরিতে আসলে ছুটি মঞ্জুর হবে না। অন্যান্য দিন সঠিক সময়ে ক্লিনিকে যাওয়া আসা করি। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে পারে তবে সঠিক নয়।

 

‘আপনারা অভিযোগ করেন, আমার কিচ্ছু হবে না’ এই বাক্যটি বলেছেন কি না জানতে চাইলে জুবলু বড়ুয়া বলেন, হ্যাঁ বলেছি কারণ আমি ন্যায়ভাবে কাজ করলে অভিযোগ দিলে সমস্যা নেই। তারা ইচ্ছেমতো ওষুধ চাইতে আসে, ইচ্ছেমতো না পেলে এমন আচরণ করে। ভুক্তভোগী না এসে বাচ্ছাদের পাঠানো হলে কীভাবে ওষুধ দিব।

 

জুবলু বড়ুয়া আরো বলেন, যখনই প্রয়োজন আমি ক্লিনিকে গিয়েছি। তবে প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, একটা ফ্যান নেই, শৌচাগার নেই এমনকি প্রয়োজনমতো লোকবল নেই। আমি উত্তর রাঙ্গুনিয়া থেকে পোমরা ক্লিনিকে যাওয়া আসা করি। অনেকদূর হেঁটে যেতে হয় আমাকে। তাই ঠিকমতো অফিস করতে পারি না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। তবে স্থানীয় ইউপি সদস্য কোনোরূপ সহযোগিতা করেন না বলেও অভিযোগ জুবলু বড়ুয়ার।

 

স্থানীয় ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আলমগীর তালুকদার রনি বলেন, সিএইচসিপি জুবলু বড়ুয়া ঠিকমতো অফিস করে না এমন অভিযোগ অনেকদিন আগের। তবে তিনি নানা অজুহাত দেখিয়ে ক্লিনিকে আসেন না। স¤প্রতি ক্লিনিক চুরির ঘটনা ঘটলে তার অজুহাতে আরো না আসার সুযোগ করে নেন।

 

এ বিষয়ে সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক চন্দন বড়ুয়া বলেন, ওই ক্লিনিকে একজন স্বাস্থ্য সহকারী, একজন এফডবিøউএ থাকার কথা থাকলেও কেউ নেই। লোকবল সংকটের কারণে ‘সিএইচসিপি’ জুবলু বড়ুয়া ছুটিতে থাকলেও বন্ধ থাকে, এমনিতেও বন্ধ থাকে।

 

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয় রাঙ্গুনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. দেব প্রসাদ চক্রবর্তীর কাছে। তিনি বলেন, অভিযোগগুলো প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version