-->

বাগেরহাটে নির্মাণাধীন বেড়িবাঁধে ফাটল, স্থায়িত্ব নিয়ে শঙ্কা

মো. কামরুজ্জামান, বাগেরহাট
বাগেরহাটে নির্মাণাধীন বেড়িবাঁধে ফাটল, স্থায়িত্ব নিয়ে শঙ্কা
বাগেরহাটের ভাতছালা-মুনিগঞ্জ বেড়িবাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে।

মো. কামরুজ্জামান, বাগেরহাট: বাগেরহাট সদর উপজেলার ভাতছালা-মুনিগঞ্জ বেড়িবাঁধে কাজের শুরুতেই ফাটল দেখা দিয়েছে। এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার তিন দিন পর তাড়াহুড়া করে বেড়িবাঁধে দেয়া বালু মাটি দিয়ে ঢেকে দিচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

 

নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই কয়েক জায়গা ধসেও গেছে নির্মাণাধীন বাঁধটির। বাঁধ নির্মাণে বালু এবং নদীর চরের বালুমাটির ব্যবহার ও বাঁধের কাছ থেকে মাটি সরিয়ে নেয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কাজ শেষের আগেই বাঁধে ফাটল দেখা দেয়ায় প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন এই বাঁধের স্থায়িত্ব নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। জোরপূর্বক মালিকানাধীন জমি থেকে মাটি নিয়ে বাঁধ নির্মাণ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।

 

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বাগেরহাট কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ভৈরব নদীর পানি থেকে মুনিগঞ্জ-ভাতছালাবাসীকে রক্ষার জন্য ষাটের দশকে নাজিরপুর উপ-প্রকল্পের অধীনে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। ঝড়-জলোচ্ছ¡াস ও বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বাঁধটি বেশ নিচু হয়ে গেছে। ফলে কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বর্ষা মৌসুমে অমাবস্যা-পূর্ণিমা তিথিতে নদীর পানি উপচে মুনিগঞ্জ, ভাতছালা, ভদ্রপাড়া ও চরগ্রাম প্লাবিত হতো। স্থানীয়দের দুর্ভোগ লাঘবে গত বছরের নভেম্বরে ভাতছালা থেকে মুনিগঞ্জ পর্যন্ত তিন কিলোমিটার বাঁধটি সংস্কার শুরু করে পাউবো।

 

৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে পূর্বের চেয়ে ৩ থেকে ৪ ফুট উঁচু করা হবে বাঁধটি। জরুরি ভিত্তিতে ডিপিএম (সরাসরি ক্রয়) পদ্ধতিতে ঠিকাদার শেখ শহিদুল ইসলাম এ কাজ বাস্তবায়ন করছে। চলতি মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও মাত্র ৫০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। তবে বাঁধের পুরো কাজ শেষ করতে প্রকল্পের সময় কিছুটা বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন পাউবোর এক কর্মকর্তা।

 

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বাঁধের বিভিন্ন স্থানে বালু ব্যবহার করা হয়েছে। চরগ্রামের আবুল বাশারের বাড়ির অদূরে ধসে গেছে। ফাটল ধরেছে কয়েক জায়গায়। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে বাঁধের একদম গোড়া থেকে ১৫-২০ ফুট গভীর করে মাটি খুঁড়ে নেয়া হয়েছে। যার ফলে বৃষ্টি ও জলোচ্ছ¡সে বাঁধ ধসে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। জোরপূর্বক বাঁধের দুই পাশে স্থানীয়দের বাড়ির উঠোন, বাগান ও ধানি জমি থেকে মাটি নেয়ার চিহ্ন দেখা গেছে। অতিরিক্ত গভীর করে মাটি নেয়ায় স্থানীয় ফাতেমা জান্নাতের ভবনের সামনের উঠানেও ফাটল ধরেছে। অনেকের গাছ ও মাটি ধসে গেছে।

 

এই বাঁধ সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ কাজের কোনো তথ্য তাদের জানানো হয়নি এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর।

 

চরগ্রাম গ্রামের শাহজাহান শেখ বলেন, বাঁধের গোড়া থেকে মাটি কেটেছে। এই বাঁধ টিকবে কী করে? নদীর পাড়, চর কেটে নিয়েছে। সেই মাটি-বালি দিয়ে বাঁধ করলে কোনো দিন থাকবে না। কয়েক জায়গায় পুরো বালি, কাদা মাটি দিয়ে বাঁধ দিয়েছে ।

 

স্থানীয় ফাতেমা জান্নাত বলেন, নিষেধ করা সত্তে¡ও বাড়ির সামনে থেকে জোরপূর্বক মাটি কেটে নিয়েছে। অতিরিক্ত গভীর করায় মাটি ধসে একটি নারকেল গাছসহ কয়েকটি গাছ পড়ে গেছে। আমার ভবনের সামনের উঠানেও ফাটল ধরেছে। ফাটল ধরা জায়গা থেকে মাটি ধসে গেলে আমার ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

 

নজরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি বলেন, সরকারি কজের ক্ষেত্রে নিয়ম হচ্ছে সাইনবোর্ড থাকবে, কাজের সব তথ্য এলাকাবাসীকে জানানো হবে। কিন্তু এই বাঁধ নির্মাণকাজের কোনো তথ্য আমাদের জানানো হয়নি। এমনকি শিডিউল সম্পর্কে এলাকার মানুষকে জানানো হয়নি। এলাকার অনেকেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিসে গেছে, কাউকে শিডিউল দেখানো হয়নি।

 

স্থানীয় ইউপি সদস্যের পক্ষ থেকে দায়িত্ব পাওয়া মো. মারুফ হোসেন ফকির বলেন, এ রাস্তাটা আমাদের খুব দরকার ছিল। স্থানীয় মোহন মেম্বর বলায় আমি মাটি কাটার সময় সঙ্গে ছিলাম। সবাই স্বেচ্ছায় এ কাজের জন্য মাটি দিচ্ছে। কাউকে চাপ দেয়া হয়নি। মেম্বর বলেছে চার ফুট উঁচু রাস্তা হবে।

 

বাঁধ নির্মাণের ঠিকাদার শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, ২২ বছর পর এই বাঁধের সংস্কার হচ্ছে। এটা ইমারজেন্সি কাজ। এখানে মাটি কিনে নেয়ার কোনো বরাদ্দ শিডিউলে নেই। গ্রামবাসীর সহযোগিতায় আমরা কাজটা করছি।

 

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, দরপত্র অনুযায়ী এই বাঁধ ৩ দশমিক ৫ লেভেলে হবে, যাতে কোথাও দুই ফুট, কোথাও চার ফুট উঁচু হবে। জরুরি ফান্ড থেকে এ কাজটি করা হচ্ছে। দরপত্রে বলা আছে, মাটি ও লোকাল ম্যাটেরিয়াল দিয়ে কাজটি করতে হবে। এর জন্য জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণের কোনো ব্যবস্থা আমাদের নেই।

 

তিনি আরো বলেন, বাঁধে বালুর ব্যবহার করা যাবে। তবে মাটির পরিমাণই বেশি থাকবে। বালুটা আমরা মাঝেই দিই। তবে চেষ্টা করি যত কম দেয়া যায়।

 

ভোরের আকাশ/নি 

 

মন্তব্য

Beta version