-->

শিয়ালকে পোষ মানিয়েছেন কৃষক শাহাদত আলী

যশোর প্রতিনিধি
শিয়ালকে পোষ মানিয়েছেন কৃষক শাহাদত আলী
শিয়ালের সঙ্গে শাহাদত আলী সরদার

যশোর প্রতিনিধিঃঅনেকে ভালোবেসে বিভিন্ন প্রাণী পোষেণ। এর মধ্যে বাসাবাড়িতে বেশি দেখা যায় কুকুর বা বিড়াল। তবে এবার কুকুরের ‘শত্রু’ শিয়ালকে পোষ মানিয়ে আলোচনায় এসেছেন এক কৃষক। অসুস্থ শিয়ালকে সুস্থ করতে গিয়েই পোষ মানিয়ে নেন তিনি। এমন ঘটনা ঘটেছে যশোরের ঝিকরগাছায়। উপজেলার বারবাকপুর গ্রামের কৃষক শাহাদত আলী সরদার। ১০ মাস ধরে শিয়ালটিকে পুষছেন তিনি। এখন শিয়ালকে নিয়ে ঘুরে বেড়ান গ্রামের সর্বত্র।

 

শাহাদত আলী সরদারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় গাছে বাধা আছে শিয়াল। তার পাশেই বসে আছেন শাহাদত আলী। তিনি শোনালেন শিয়াল পোষার গল্প। গত বছর মার্চ মাসে ইরি ধান কাটার মৌসুম। তার ছোট ভাই শফিয়ার সরদারের ধানক্ষেতের আইলের ওপর ৩/৪ দিনের অসুস্থ শিয়ালের বাচ্চা দেখে বাড়িতে নিয়ে আসেন। এরপর থেকে তিনি শুরু করেন শিয়ালটির সেবা। দেড় মাস ধরে বাচ্চাটিকে গরুর দুধ খাওয়ানো হয়। সুস্থ করে তোলেন শিয়ালটিকে। পরে ছোট মাছ, মুরগির বর্জ্য খাওয়াতেন।

 

সেই সঙ্গে খাওয়ানো শুরু করেন বাজার থেকে কিনে আনা গরুর মাংসের ছাঁট। এভাবেই শাহাদতের ভালোবাসায় খেকশিয়ালটি চার মাস বয়সে পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে। সুস্থ শিয়ালটিকে পাশের বাগানে ছেড়ে দেন তিনি। কিন্তু শাহাদতের ভালোবাসায় খেকশিয়ালটি বাগান ছেড়ে আবারো বাড়ি চলে আসে। বাড়িতে আসার পর কুকুর দলের হামলায় পা ভেঙে যায় শিয়ালের। আবারো সেবা দিয়ে সুস্থ করেন শাহাদত। সেই থেকে খেকশিয়ালটি তার কাছে রয়েছে। বিকেলে বা সন্ধ্যায় শাহাদত পোষা খেকশিয়ালকে পাশের বাগানে ছেড়ে দিলে বনে চলে যায়। এরপর আবারো বাড়ি চলে আসে।

 

প্রতি রাতেই বন্য শিয়ালগুলো পোষা খেকশিয়ালের ডাকে তার বাড়ির আশপাশে ঘুরে চলে যায়। শুধু খেকশিয়াল না, ১০-১২ বছর আগে ৪টা গোখরা সাপের বাচ্চা পুষেছিলেন বলে দাবি করেন কৃষক শাহাদত। পরে তার মা সেগুলোকে মুক্ত করে দেন। অসুস্থ একটি বেজিও পুষেছিলেন তিনি। এখনো তার কাছে একটি অসুস্থ বিড়াল আছে। বিড়ালটি দেখিয়ে শাহাদত বলেন, ‘এখন এই বিড়ালটিকে সুস্থ করে তোলাই আমার কাজ। চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

 

শাহাদতের ছেলে আলমগীর বলেন, ‘ছোট বয়স থেকেই বন্যপশু পুষতে দেখে আসছি। আব্বার পশুপ্রীতি দেখতে ভালোই লাগে।’ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. জিএম আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি কেউ শিয়াল পোষে তাহলে পোষ্য শিয়ালটিকে অবশ্যই তাকে জলাতঙ্কের টিকা দিতে হবে। না হলে রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে।’ জেলা বন কর্মকর্তা জহির উদ্দিন আকন বলেন, ‘একজন মানুষ অসুস্থ শিয়ালটিকে সেবা করছে। তাই তিনি বন্যপ্রাণী অপরাধ করেননি। তবে খেকশিয়ালটিকে বনে ফেরত পাঠানোর পরিবেশ তৈরি করতে হবে। আমরা তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করব।’

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version