-->

কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসের সুফল পাচ্ছে না কুড়িগ্রামবাসী

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসের সুফল পাচ্ছে না কুড়িগ্রামবাসী
রেলস্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেন

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রাম জেলার সঙ্গে ঢাকার সরাসরি যোগাযোগের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার দেয়া কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসের সুফল পাচ্ছে না কুড়িগ্রামবাসী। সীমিতসংখ্যক আসন আর শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছেন এ জেলার মানুষ।

 

সরেজমিনে দেখা যায়, কুড়িগ্রাম রেলস্টেশনে ইঞ্জিন চালুরত অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রেনে হুড়োহুড়ি করে লোকজন উঠছে। ভেতরে জায়গা না থাকায় অনেকেই ঝুঁকি নিয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে। শীতের কনকনে ঠান্ডায় শিশু, লাগেজসহ ট্রেনে উঠতে যেন ঘাম ছুটে যাচ্ছে যাত্রীদের। এটি লালমনিরহাট থেকে আসা একটি শাটল ট্রেন। সকাল ৬টায় কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসের সেখানে পৌঁছানোর কথা থাকলেও কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস আসেনি। ফলে শাটল ট্রেন দিয়ে ঢাকাগামী যাত্রীদের রংপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস এলে সেখান থেকে যাত্রী নিয়ে যাবে ঢাকার উদ্দেশে। এমন দুর্ভোগ কুড়িগ্রামবাসীর জন্য নিত্যদিনের ঘটনা।

 

ঢাকাগামী যাত্রী মোজাম্মেল হক বলেন, ‘সন্তান নিয়ে শাটল ট্রেনে দাঁড়িয়ে থেকে যেতে হচ্ছে। কখন কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস আসবে সেটাও অনিশ্চিত। পরিবার নিয়ে একটু আরামদায়ক যাত্রা করব সেটারও ওপায় নেই। আমাদের দুর্ভোগ তুলে ধরার মতো প্রশাসন বলেন আর দলীয় নেতা বা স্থানীয় এমপি কেউ নেই।’ আমিনুল ইসলাম নামে আরেক যাত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসের সুফল আমরা পাচ্ছি না। শিডিউল বিপর্যয়ের অজুহাতে শাটল ট্রেন দিয়ে আমাদের আনা-নেয়া হচ্ছে। বারবার ট্রেনে ব্যাগ, বস্তাসহ সন্তানদের নিয়ে ওঠানামা করতে হয়। কুলি খরচ বাড়তি দিতে হয়। কুড়িগ্রাম স্টেশনকেন্দ্রিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তেমনি সরকারের বাড়তি জ্বালানি ব্যয় হচ্ছে। এটা রেল কর্তৃপক্ষের সুকৌশলে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস বন্ধ করার একটা ষড়যন্ত্র বলে মনে হয়।’ এ ছাড়া টিকিটের জন্য কুড়িগ্রাম রেলস্টেশনে লম্বা লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। একটু কম খরচে যাতায়াতের সুযোগ মিলবে ভেবে অনেকেই ভোরের আলো ফোটার আগেই লাইনে দাঁড়ান।

 

এমনই একজন গফুর আলী। তিনি জানালেন, এই শীতের মধ্যে তারা চারজন মানুষ ভোর ৪টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। দু-একজন আরো আগে এসেছেন টিকিট সংগ্রহ করতে। অনলাইনে তো টিকিট পাওয়া যায় না। তাই বাধ্য হয়ে ঠান্ডা উপেক্ষা করে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা। এই দুর্ভোগ আদৌ কোনো দিন কমবে কিনা, প্রশ্ন ভুক্তভোগী যাত্রীর।

 

প্রভাষক আব্দুল কাদের বলেন, ‘কুড়িগ্রাম স্টেশনের জন্য এই এক্সপ্রেস ট্রেনে আসনসংখ্যা মাত্র ১২১টি। এর মধ্যে অনলাইনে ৬০টি বিক্রি হয়; শোভন-৫০টি, এসি-৬টি এবং কেবিন-৪টি। অনলাইনে এসব টিকিট অন্য স্টেশনে যাত্রীরা কিনে নেন। বাকি ৬১টি কাউন্টার থেকে বিক্রি করা হয়। অথচ রংপুর স্টেশনের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১৫২টি আসন। শুধু নামেই কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসে পরিণত হয়েছে এই ট্রেন।’

 

সাংস্কৃতিককর্মী মামুন আহমেদ বলেন, কুড়িগ্রাম জেলার জন্য ট্রেন চালু হলেও পর্যাপ্ত টিকিট সুবিধা রাখা হয়নি। কুড়িগ্রাম থেকে সকাল ও রাতে প্রায় দুই শতাধিক কোচ চলাচল করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এসব বাসে গড়ে প্রতিদিন ছয় থেকে সাত হাজার মানুষ চলাচল করে থাকে। ঈদ, পূজা কিংবা সরকারি কোনো বিশেষ ছুটিতে এই সংখ্যা আরো বেড়ে যায়। সেই তুলনায় কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসের আসনসংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য। টিকিট সংকট আর ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে প্রায় প্রতিদিনেই ঢাকা, রংপুর, বগুড়াসহ অন্যান্য জায়গায় যাওয়া যাত্রীদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এতে সময় ও অর্থ দুটোই নষ্ট হচ্ছে।

 

কুড়িগ্রাম রেলস্টেশনের বুকিং সহকারী মনিরুজ্জামান লিটন বলেন, কুড়িগ্রামের জন্য মাত্র ১২১টি আসন নির্ধারিত, যা যাত্রীর তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। টিকিট কেনার জন্য অনেকেই রাত ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন। সকাল ৮টায় টিকিট বিক্রি শুরু করলে সাড়ে ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে শেষ হয়ে যায়। এর পরও অনেকে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও টিকিট না পেয়ে চলে যান। বাংলাদেশ রেলওয়ের রাজশাহী মহাব্যবস্থাপক (পশ্চিম) অসীম কুমার তালুকদারও কুড়িগ্রামবাসীর জন্য কোনো সুখবর দিতে পারলেন না। তিনি জানান, নতুন বগি না আসা পর্যন্ত টিকিটসংকট দূর করা সম্ভব নয়। নতুন বগি আমদানি হলে সংযোজন করে আসন বৃদ্ধি করতে হবে।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version