-->

নওগাঁয় বোরো ধানের বীজতলা নিয়ে শঙ্কায় কৃষক

নওগাঁ প্রতিনিধি
নওগাঁয় বোরো ধানের বীজতলা নিয়ে শঙ্কায় কৃষক
নওগাঁয় ঠান্ডা ও কুয়াশায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে রক্ষা পেতে পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে দিচ্ছেন কৃষক।

তীব্র শীত ও কুয়াশায় জবুথবু নওগাঁ। এই শীতের তীব্রতা-কুয়াশার কারণে বোরো ধানের বীজতলা নষ্ট হওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন নওগাঁর কৃষক। বীজতলা নষ্ট হলে বোরো আবাদের সময় ধানের চারার সংকট দেখা দিতে পারে মনে করছেন তারা।

 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, এবছর জেলায় ১০ হাজার ৮শ হেক্টর জমিতে বোরোর বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৯ হাজার ৩শ হেক্টর। বোরো আবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৮৭ হাজার হেক্টর জমিতে। ইতোমধ্যে কিছু কিছু এলাকায় বোরো ধান রোপণ শুরু হয়েছে। তবে বীজতলা বেশি পরিমাণে থাকায় বোরো আবাদে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন কৃষি বিভাগ।

 

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে তীব্র ঠান্ডা ও কুয়াশার কারণে নষ্ট ও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বীজতলা দেখা গেছে। বোরো ধানের বীজতলা হলুদ বর্ণ হয়ে মরে যাচ্ছে। আবার অনেক বীজতলার গাছ গজাচ্ছে না, বীজতলাতেই অঙ্কুর মরে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও সাদাটে হয়ে গেছে চারা গাছ। কেউ কেউ পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে দিচ্ছেন বীজতলা একটু রক্ষার জন্য।

 

কৃষকরা বলছেন, এমনিতেই বীজ, সার ও জ্বালানির দাম বেশি হওয়ায় অনেক হিসেব নিকেশ করে চলতে হচ্ছে তাদের। তাই ভাল ফসল পেতে ভালো বীজ বা ভালোমানের বোরো বীজতলার প্রয়োজন। তাই বোরো চাষের জন্য বীজতলা তৈরি করে পরিচর্যা শুরু করেন। চারা গাছ একটু বড় হতে না হতেই গত কয়েক দিনের ঘনকুয়াশা ও তীব্র শীতে বোরো বীজতলার গাছগুলো ফ্যাকাসে রঙ ধারণ করেছে। শীতের তীব্রতায় বীজতলার অনেক চারাগাছ মরে যেতে শুরু করেছে। এতে করে বোরো আবাদের সময় ধানের চারার সংকট দেখা দিলে বাড়তি খরচ দিয়ে ধান রোপণ করতে হবে।

 

সদর উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের কৃষক রিপন মিয়া বলেন, বোরো ধানের বীজতলার অর্ধেকই শীত ও কুয়াশায় বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে নতুন করে আবার বীজতলা তৈরি করতে হবে। যারা পৌষের শুরুর দিকে বীজতলায় বীজ ফেলেছে, তারা বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রেখে শীত ও কুয়াশা থেকে রক্ষার চেষ্টা করছে। কুয়াশা কমছে না, তাই দুশ্চিন্তায় আছি।

 

একই এলাকার কৃষক আব্দুল জলিল বলেন, তীব্র শীতে বীজতলার চারা মরে যাচ্ছে। এ ছাড়া চারা লালচে রঙের হয়ে গেছে। বড়ও হচ্ছে না। এমন আবহাওয়া যদি আরও কয়েক দিন থাকে, তাহলে আবারও বীজতলা তৈরি করতে হবে। এতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। চাষের মৌসুমে চারা না-ও পাওয়া যেতে পারে।

 

বদলগাছী উপজেলার বালুভরা ইউনিয়নের কৃষক আলমগীর হোসেন বলেন, কুয়াশার কারণে বীজতলায় চারা বাড়ছে কম। ঘন কুয়াশায় জমির বেশিরভাগ বীজতলার গাছ লালচে হয়ে গেছে। পাশাপাশি পোকার আক্রমণ রয়েছে। আরও কয়েক দিন কুশায়া থাকলে বীজতলা পুরোটাই নষ্ট হয়ে যাবে।

 

একই এলাকার কৃষক আরব আলী বলেন, শীত ও কুয়াশায় ধানের বীজতলা পচে যাচ্ছে। বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এবার বীজ কিনে ধান রোপণ করতে হবে। এতে তাদের খরচের পরিমাণ বাড়বে বলে জানান তিনি।

 

আত্রাই উপজেলার ভেনলা গ্রামের কৃষক নিখিল চন্দ্র বলেন, বীজতলার চারাগুলো হলুদ হয়ে গেছে। যদি এমন শীত আরও ৮-১০ দিন থাকে তবে চারা শুকিয়ে যাবে। এতে করে অনেক ক্ষতি হবে আমাদের। তেল, সার, বীজ সবকিছুরই দাম বেড়েছে। যদি বীজতলা নষ্ট হয় তবে পুণরায় বীজতলা প্রস্তুত করতে হবে। না হলে কিনে জমিতে রোপণ করতে হবে। এতে খরচও বেড়ে যাবে।

 

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবু হোসেন বলেন, কৃষি বিভাগের পরামর্শে পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখাসহ বিভিন্ন পরিচর্যার পদ্ধতি অনুসরণ করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যেহেতু শীত আর কুয়াশায় বীজতলার কিছুটা সমস্যা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সব-ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

 

আশা করছি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি চারা রোপণ হওযায় বোরো আবাদে তেমন কোনো সদস্যা হবে না।

 

ভোরের আকাশ/নি

মন্তব্য

Beta version