-->

কনকনে শীতে বিপর্যস্ত সাভারের জনজীবন

কামরুল হাসান রুবেল, সাভার
কনকনে শীতে বিপর্যস্ত সাভারের জনজীবন
শীতের তীব্রতায় কাঠ দিয়ে আগুন জালিয়ে সাময়িক প্রশান্তি নিচ্ছেন নিম্নবিত্তরা ছবিটি সাভারের শিমুলতলা থেকে তোলা

কামরুল হাসান রুবেল, সাভার: শীতের তীব্রতায় দেশের সাধারণ মানুষের জীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়ায় বেড়েছে শীতের এই তীব্রতা। একই সঙ্গে বইছে হিমেল হাওয়া, সঙ্গে কুয়াশার দাপট। এই শীতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে বৃদ্ধ ও শিশুরা। শীতের কারণে হাসপাতালগুলোতে বেড়ে গেছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা।

 

এদিকে ফুটপাত ও বস্তিতে বসবাসকারী নিম্নবিত্তদের অবস্থাও করুণ হয়ে পড়েছে। কমতে শুরু করেছে তাদের আয়। অন্যদিকে বেড়ে গেছে শীতের কাপড় কেনার পরিমাণ।

 

নিম্নবিত্তদের কষ্ট

সাভারে শীতের তীব্রতা বাড়ায় ফুটপাতে, বস্তিতে নিদারুণ কষ্টে দিন কাটছে নিম্নবিত্তদের। বাসাবাড়িতে কাজ করা রেখা জানান, রাতে পলিথিনের ঘর, টিনের ফুটো দিয়ে হিমেল বাতাস ঢুকে যায়। ঘর হয়ে থাকে বরফের মতো ঠান্ডা। এ অবসস্থায় সকালে ওঠে কাজে আসতেও কষ্ট হয়। এদিকে কাজে এসেই প্রায় সারা দিনই ঠান্ডা পানিতেই কাজ করতে হচ্ছে।

 

শীতের একই ধরনের কষ্টের কথা বলেন রিকশাচালক শহিদুল। তিনি বলেন, হাত-পা জমে যাচ্ছে। বেশিক্ষণ রিকশা চালাতে পারছি না। যত কষ্টই হোক প্রতিদিনই রিকশা নিয়ে বের হতে হয়। নাহলে পরিবারের লোকজনকে না খেয়ে বসে থাকতে হবে। তার ওপর আছে কিস্তির প্রেশার। সন্ধ্যার দিকে পাতা, কাগজ কুড়িয়ে আগুন জ্বালিয়ে শীত কাটানোর চেষ্টা করছি। সাভার বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে চোখে পরে ফজর আলী নামে সত্তরঊর্ধ্ব এক বৃদ্ধ গায়ে গামছা পেঁচিয়ে শীতে কাঁপছে। তার কাছে গিয়ে কথা বলতেই তিনি বলে উঠেন ‘বাবা এত ঠান্ডা আর সইয্য হয় না। এই শীতে মইরা গেলে আমারে একটা কম্বল পেঁচায়া দাফন কইরো।’

 

কেন চাচা কি হইছে! জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাগো গেরামের বাড়ি পদ্মার পাড়ে, সর্বনাশা নদী ঘরবাড়ি, জমি জিরাত বেবাক কিছু ভাইঙ্গা নিছে। বউ মরছে আইজ তিন বছর। দুই পোলা বিয়া কইরা শশুড় বাইত্তে থাকে। তাই আমি একলা ঘুরতে ঘুরতে এহানে আইসা পরছি ভিক্ষা কইরা খাই। আমার হাঁপানি রোগ আছে নিঃশ^াস টানতে কষ্ট হয়। শীত আইলে গ্যাস লওয়া লাগে। এই একলা জীবন আর সইয্য হয় না। এখন মরতে পারলেই বাইচ্যা যাই।’

 

রেডিও কলোনি বাসস্ট্যান্ডের ওভার ব্রিজের নিচে চা বিক্রেতা সোহান বলেন, ‘শীতকালে চায়ের দোকানে মানুষের ভিড় লাইজ্ঞা যায় কিন্তু গত দুই তিন দিনের শীতের তীব্রতায় মানুষ ঘর থেকে বের হইতে চাইতাছে না। এতে কইরা আমার বেচাকেনা খুবই কইমা গেছে। আমি খুব চিন্তায় পইরা গেছি। আগে প্রতিদিন দোকানে দুই থেকে তিন হাজার টাকার বেচাকেনা হইত এখন তাও বিক্রি হয় না।’

 

সাভারের দরজি ব্যবসায়ী রুবেল বলেন, ‘কুয়াশা আর শীতের কারণে সকালে কেউই কাজে আসতে চাচ্ছে না। দোকানেও আর হিটার বসানো যাচ্ছে না। কর্মচারীদের ঠান্ডায় হাত-পা জমে যাচ্ছে। ঘন ঘন চা খেয়ে শীত নিবারণ করার চেষ্টা করছি।

 

হকারদের রমরমা ব্যবসা

সাভারের নতুন-পুরোনো বাসস্ট্যান্ড, বাইপাইল বাসস্ট্যান্ড এলাকা ঘুরে দেখা যায় অন্য এক চিত্র। শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় গরম কাপড় কেনার হিড়িক পড়ে গেছে। একই সঙ্গে সুযোগ বুঝে দামও বাড়িয়ে দিয়েছে হকাররা। অভিযোগ করছেন অনেক ক্রেতাই।

 

কাপড় কিনতে আসা সালমা বলেন, হুট করেই এবার শীতটা বেড়ে গেছে। আগের মতো আর অবস্থা নেই। গরম কাপড় কম ছিল, তাই নতুন কিছু কাপড় কিনতে হচ্ছে। এদিকে কাপড় কিনতে এসে দেখি আগের চেয়ে দাম অনেক বেশি চাইছে। একই অভিযোগ করেন আলম। তিনি আরো বলেন, সংসার বড়। অল্পেই চালাই। অন্য খরচ বেড়েছে। তাই এবার গরম কাপড় তেমন একটা কিনিনি। এখন শীত বাড়ায় বাধ্য হয়েই কাপড় কিনতে হচ্ছে।

 

হাসপাতালের অবস্থা

সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বেশ কয়েকটি হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালগুলোতে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। বিশেষ করে শীতের ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

 

শীতজনিত কারণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দ্বিগুণ রোগী ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু রোগী বেশি। সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়েমুল হুদা বলেন, শীতের কারণে নিউমোনিয়া, সর্দি-কাশি, ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেছে। পাশাপাশি যাদের হাঁপানি বা অ্যাজমা আছে তাদের শ্বাস কষ্ট হচ্ছে। এর মধ্যে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু ও বৃদ্ধরা। শীতের তীব্রতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা।

 

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান (এমপি) জানান, ইতিমধ্যে সারা দেশে ২৬ লাখ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। নতুন করে শীতার্তদের জন্য আরো ৩২ কোটি টাকার কম্বল কেনা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহ থেকে দেশের শীতপ্রবণ এলাকায় এসব কম্বল বিতরণ করা হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version