-->

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিচার বিভাগের কর্মচারীদের কর্মবিরতি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিচার বিভাগের কর্মচারীদের কর্মবিরতি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিচার বিভাগের কর্মচারীরা গতকাল বুধবার মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এবার কর্মবিরতিতে গেলেন আদালতের কর্মচারিরা। বিচারকের সঙ্গে আইনজীবীদের অসৌজন্যমূলক আচরণ, বিচারিক কাজে হস্তক্ষেপ, কর্মচারিদের মারধর, মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ এনে বিচার বিভাগীয় কর্মচারি অ্যাসোসিয়েশন বুধবার থেকে কর্মবিরতি পালন শুরু করেন। একই সঙ্গে তারা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।

 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে আদালতের কর্মচারিরা নিজ নিজ কক্ষে না গিয়ে বাইরে অবস্থান করেন। আদালতের বিভিন্ন কক্ষে তালা ঝুলিয়ে রাখতে দেখা যায়। যে কারণে আদালতে কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। সেবাগ্রহীতারা এসে ফিরে যাচ্ছেন। আদালত চত্বরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। তবে কোনো ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক (জেলা জজ) মোহাম্মদ ফারুক এর আদালতে গত রবিবার থেকে যাচ্ছেন না আইনজীবিরা। আইনজীবি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া বার অ্যাসোসিয়েশন নিয়ে আপত্তিজনক মন্তব্যের অভিযোগ আনা হয় ওই বিচারকের বিরুদ্ধে পাশাপাশি ওই বিচারকের প্রত্যাহারও দাবি করা হয়।

 

আইনজীবি সূত্রে জানা গেছে, ১ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জজ আদালতের শেষ কার্যদিবস ছিল। ওই দিন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের আদালতে একজন আইনজীবী বিলম্বে একটি মামলা দাখিল করেন। কিন্তু বিলম্ব হওয়ার কারণে ওই আদালতের বিচারক মামলাটি গ্রহণ করেননি। তখন উপস্থিত আইনজীবীরা বিচারককে বলেন, মামলার বাদী আইনজীবীদের মতো আইন জানেন না।

 

তাই দেরিতে আদালতে এসেছেন। এখন (১ ডিসেম্বর) মামলাটি না নিলে এক মাস পর মামলার আবেদন করতে হবে। এতে বাদীপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মামলাটি নেওয়ার অনুরোধ করলেও বিচারক শোনেননি। পরে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সশরীর ওই বিচারকের এজলাসে গিয়ে মামলাটি নেওয়ার অনুরোধ করেন। তখন বিচারক তাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন বলে অভিযোগ করেন।

 

অন্যদিকে কর্মচারীরা অভিযোগ করছেন, মামলা দায়েরকে কেন্দ্র করে আইনজীবী সমিতির নেতাসহ একাধিক আইনজীবীর সঙ্গে বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের বিতন্ডা হয়। সময় পার হয়ে যাওয়ায় নিয়ম অনুসারে মামলাটি নিতে অপারগতা প্রকাশ করায় ক্ষিপ্ত হন আইনজীবীরা। এ ঘটনায় ২৬ ডিসেম্বর সভা করে ১ জানুয়ারি থেকে সংশি¬ষ্ট আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয় জেলা আইনজীবী সমিতি। আদালতে কর্মরত কর্মচারিদের মধ্যেও বিরূপ প্রভাব দেখা দেয়। মঙ্গলবার বিচার বিভাগীয় কর্মচারি অ্যাসোসিয়েশন সভা করেই বুধবার থেকে কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

 

কর্মবিরতিতে বিচার বিভাবের কর্মচারী এসোসিয়েশনের সহ সাধারণ সম্পাদক কাজী উজ্জল ইসলাম বলেন, জেলা দায়রা জজ আদালতে কিছু অসাধু আইনজীবি নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনালের বিচারকের সাথে খারাপ ব্যাবহার করেছে। পাশাপাশি আদালতের কর্মরত কর্মচারীদের তারা মারধর করেছে। নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা চারশত কর্মচারী একযোগে কর্মবিরতি ও মানববন্ধন করেছি। যতদিন আমাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করতে পারে ততদিন আমরা কর্মসূচী চালিয়ে যাব।

 

অসদাচরণের ভুক্তভোগী নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনাল-১ এর আপিল সহকারী মেহেদি হাসান জানান, নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনাল-১ আদালতের বিচারকে সাথে আইনজীবিরা হট্টগোল করছিলো। তখন ভিডিও করার জন্য আমি মোবাইল বের করলে আমাকে কিছু আইনজীবি কাপড়ে ধরে টানা হেচড়া করে ও মারধর করে। আমি যে কক্ষে কাজ করি সেই কক্ষে তারা এসে হট্টগোল করলে আমরা যদি ভিডিও করব এটাই স্বাভাবিক।

 

অভিযোগের বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তানভীর ইসলাম ভূইয়া বলেন, আমাদের সকল আইনজীবিরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আদালতে কোনো ধরণে ঝগড়া বিবাদ করব না, আমরা তাদের প্রতিপক্ষও না। ওদের কর্মসূচীর মাধ্যমে যদি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চায় তখন আত্ম রক্ষার জন্য যা ব্যবস্থা নিতে হবে তা আমরা নিব।

 

আমরা বেআইনি একটা কাজও করি নাই, তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করি নাই। বুধবার বেলা ২টার পর থেকে তারা কর্মবিরতিতে যাব। একজন নাজিরকে রক্ষায় কর্মচারিদের কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে তিনি মন্তব্য করেন।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version