-->

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খুনের ঘটনায় ৭৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খুনের ঘটনায় ৭৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৫ দিনে দুই রোহিঙ্গা খুন হয়েছেন। এ ঘটনায় উখিয়া ও টেকনাফ থানায় পৃথক দুই মামলায় ৭৫ জনকে আসামী করা হয়েছে। সর্বশেষ ৩১ ডিসেম্বর টেকনাফ লেদা ক্যাম্পের হাকিম আলীর ছেলে জোবাইর (২৩) ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় এজাহার নামীয় ৮ ও অজ্ঞাত ৪/৫ জনকে আসামী করা হয়েছে।

 

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই মনির আহমদ জানান, ঘটনার পর দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

 

উখিয়া বালুখালী আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-৮ পশ্চিম) রোহিঙ্গা মাঝি মোহাম্মদ হোসেন ওরফে শফিককে (৩০) গত ২৬ ডিসেম্বর হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় উখিয়া থানায় মামলা হয়েছে। শুক্রবার রাতে নিহতের ছোট ভাই নুর হাশিম বাদী হয়ে উখিয়া থানায় মামলাটি করেন।

 

মামলায় মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) প্রধান কমান্ডার আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনিসহ ৪৩ জনের নাম উল্লেখ সহ ১৫ থেকে ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। এজাহারে আরসাপ্রধান আতাউল্লাহকে ২ নম্বর আসামি করা হয়েছে। ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায়। ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে আরসার ক্যাম্প কমান্ডার ও বালুখালী ক্যাম্প-৮-এর বি-২৩ ব্লকের বাসিন্দা জোবায়ের আহমদকে। এ ঘটনায় পুলিশ এজাহারনামীয় পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করে।

 

পুলিশ জানায়, গত সোমবার সকালে আশ্রয়শিবিরের বি-১৬ ব¬কের সামনে মোহাম্মদকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি আশ্রয়শিবিরের বি-৩২ ব¬কের বাসিন্দা ও ক্যাম্প-৮ পশ্চিম অংশের বি ব¬কের প্রধান মাঝি (নেতা) ছিলেন।

 

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, হত্যাকান্ডের সরাসরি জড়িত ও মামলার এজাহারনামীয় পাঁচজন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে আশ্রয়শিবির ও আশপাশের পাহাড়ি জঙ্গলে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

 

গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন-মোহাম্মদ জুবায়ের প্রকাশ বল¬া, জুবায়ের আহমদ প্রকাশ কালা পুতু, মো. জুবায়ের প্রকাশ রুবেল , মোহাম্মদ সালাম ও মোহাম্মদ আলী প্রকাশ কালা পোয়া। সবাই উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরের বাসিন্দা।

 

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২৬ ডিসেম্বর সকাল সোয়া ১০টার দিকে নিহত রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ বালুখালী আশ্রয়শিবিরের বি-১৬ ব্লকের মাহমুদ উল¬াহর দোকানের সামনে অবস্থান করছিলেন। এ সময় ৫০-৬০ জনের একদল রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী তার ওপর হামলা করে। একপর্যায়ে মোহাম্মদকে তুলে নিয়ে পাশের ডিআরসি পুষ্টি কার্যালয়ের ভেতরে নিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। তার গলা, বুক, পিঠ ও কোমরে চারটি গুলি লাগে। কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে ২৭ ডিসেম্বর রাতে আশ্রয়শিবিরে তাকে দাফন করা হয়।

 

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও উখিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) অলিউর রহমান বলেন, গ্রেপ্তার পাঁচ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শনিবার কক্সবাজার জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করবে পুলিশ।

 

রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, গত কয়েক দিনে আরসা সন্ত্রাসীরা আশ্রয়শিবিরে কয়েকজন মাঝিকে বসতঘর থেকে তুলে নিয়ে গুলি করে কিংবা কুপিয়ে হত্যা করে। হত্যাকান্ডের ঘটনায় আরসাপ্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনিসহ অনেকের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হলেও তাদের কেউ গ্রেপ্তার হননি। আশ্রয়শিবিরের অন্তত ৭০০ জন মাঝি আরসার আতঙ্কে ভুগছেন। প্রাণনাশের হুমকিতে বেশ কয়েকজন মাঝি ইতিমধ্যে আশ্রয়শিবির ছেড়ে অন্যত্র আত্মগোপন করেছেন। উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে মাঝি আছেন প্রায় আড়াই হাজার। আশ্রয়শিবিরগুলোতে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version