-->
এলেঙ্গা-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক

মাটি ভরাটে মসজিদ-মন্দিরের বালু ব্যবহারের অভিযোগ

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
মাটি ভরাটে মসজিদ-মন্দিরের বালু ব্যবহারের অভিযোগ
ক্যাপশন : এভাবে ভেকু বসিয়ে পাউবোর পুনরুদ্ধারকৃত ভ‚মির মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে

টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে ১৩.৬ কিলোমিটার এলাকা চার লেনে উন্নীতকরণের কাজে স্থানীয় মসজিদ-মন্দিরের উত্তোলিত বালু ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। মহাসড়ক উন্নয়নের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোনেম লিমিটেডের নিযুক্ত সাব-ঠিকাদাররা ওই বালু সরবরাহ করছেন বলে জানা গেছে। ধলেশ^রী নদীতীরের নিজস্ব ভ‚মি থেকে উত্তোলিত বালু নিলামে বিক্রি করতে দরপত্র আহŸান করা হলে পৌলী এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে। স্থানীয় বালু ব্যবসায়ীরা ওই বালু দরপত্রের মাধ্যমে কিনে মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের ঠিকাদারের কাছে বিক্রি করছে।

 

অভিযোগে প্রকাশ কালিহাতী উপজেলা ড্রেজিং ও ড্রেজড ম্যাটারিয়াল ব্যবস্থাপনা কমিটি নিউ ধলেশ^রী নদীর ডান ও বাম তীরে বেনুকুশা, গোহালিয়াবাড়ী, বেরীপটল, দুর্গাপুর, জোকারচর, কামাক্ষা, সল্লা, এলেঙ্গা পৌরসভা, পুংলী, ফটিকজানী, হিন্নাইপাড়া, মহেলা, ভুক্তা, সহদেবপুর, বড়রিয়া, ঘারিন্দা, খলদবাড়ী ও গালা এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদী খননের মাধ্যমে উত্তোলন করা স্ত‚পকৃত বালু (ড্রেজড ম্যাটারিয়াল) বিক্রির জন্য গত ২ নভেম্বর দরপত্র (স্মারক নং-০৫. ৩০. ৯৩৪৭. ০০০. ২০. ০৮২. ২০২২-৯৮৪) আহŸান করে।

 

দরপত্রে ১৭টি লটে ৩ কোটি ৮৭ হাজার ৯৯৮.৬২০ ঘণফুট বালু বিক্রির কথা বলা হয়। কিন্তু ৯ নম্বর ক্রমিকের ১১ নম্বর লটের ১১ লাখ ২৮ হাজার ৯৬০ ঘনফুট বালু স্থানীয় কালিমন্দির, নাট মন্দির ও মসজিদের উন্নয়নের জন্য নিজ নিজ নিজ ভ‚মি (নিউ ধলেশ^রীর তীর) থেকে উত্তোলন করে স্ত‚প করে রাখা হয়। অভিযোগে বলা হয়, স্থানীয় প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ীরা মন্দির ও মসজিদ কমিটির অগোচরে পরিমাপকারী দলের সদস্যদের প্রভাবিত করে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। ড্রেজড ম্যাটারিয়াল নিলামের খবর পেয়ে মসজিদ ও মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে বিষয়টির সুরাহা করার জন্য কালিহাতী উপজেলা ড্রেজিং ও ড্রেজড ম্যাটারিয়াল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে গত ২০ অক্টোবর আবেদন করা হয়।

 

আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ২৩ অক্টোবরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য উপজেলা ভ‚মি অফিসের সার্ভেয়ারকে নির্দেশ দেন।কালিহাতী উপজেলা ভ‚মি অফিসের সার্ভেয়ার মো. মজিবর রহমান সরেজমিন তদন্ত করে গত ৩১ অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে ধলেশ্বরী নদীর বাম তীরে এলেঙ্গা পৌর ভ‚মি অফিসের আওতাধীন ঘোষপাড়া এলাকার মসজিদ ও মন্দির কর্তৃক উত্তোলিত বালু স্ত‚প করে রাখা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়, যা মসজিদ ও মন্দিরের উন্নয়নে ব্যবহার করা হবে বলে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও স্থানীয় কাউন্সিলর এ

 

বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতার অনুরোধ করেন। কিন্তু কালিহাতী উপজেলা ড্রেজিং ও ড্রেজড ম্যাটারিয়াল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার সার্ভেয়ারের প্রতিবেদনকে পাশ কাটিয়ে উন্মুক্ত দরপত্র বিজ্ঞপ্তি আহŸান করেন।

 

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোনেম লিমিটেডের নিযুক্ত সাব ঠিকাদার স্থানীয় বেল্লা মোল্লা, মেসার্স অন্তু এন্টারপ্রাইজ ও মো. খালেদ হোসেন খোকনসহ কয়েক ব্যক্তি রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় প্রতি ঘনফুট ৪.০৩ টাকা দরে ওই কিনতে ওই দরপত্রে অংশ নিয়েছেন। এলেঙ্গা পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও মন্দির কমিটির সভাপতি সুকুমার ঘোষ জানান, বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার (নিউ ধলেশ্বরী-পুংলী-বংশাই-তুরাগ-বুড়িগঙ্গা রিভার সিস্টেম) প্রকল্পের নদী খননের অজুহাতে কয়েক বছর ধরে স্থানীয় বালুখেকোরা অবৈধভাবে নিউ ধলেশ^রী নদীর ঘোষপাড়া অংশ থেকে বাংলা ড্রেজার ও ভেকু দিয়ে বালু উত্তোলন করছে।

 

বালু ব্যবসায়ীদের পরিবহনের গাড়ির ধাক্কায় ঘোষপাড়া সর্বজনীন কালীমন্দিরের কিছু অংশ ভেঙে যাওয়ায় তাদের সঙ্গে মন্দির কমিটির লোকদের বিরোধ সৃষ্টি হয়। তিনি আরো জানান, বিরোধের কারণে বালু ব্যবসায়ীরা মসজিদ ও মন্দিরের উন্নয়নে নিজস্ব ভ‚মি থেকে উত্তোলন করা বালু সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে আতাত করে নিলামের আওতায় ফেলেছে। তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান।

 

স্থানীয় মসজিদ কমিটির সদস্য লাবলু মÐল বাবলু জানান, মসজিদ ও মন্দিরের জায়গা পাশাপাশি হওয়ায় তারা সম্মিলিতভাবে কমিটির অর্থায়নে নিজেদের ভ‚মি থেকে বালু উত্তোলন করেন। তারা মসজিদ ও মন্দিরের অংশে কিছু মাটি ভরাটের কাজ করেছেন। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে কাজ সাময়িক বন্ধ রাখা হয়। এর মধ্যে কতিপয় ব্যক্তিরা স্বার্থ হাসিল করতে উত্তোলনকৃত ওই বালু সরকারি নিলামে তালিকাভুক্ত করেছে। কালিহাতী উপজেলা ড্রেজিং ও ড্রেজড ম্যাটারিয়াল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজমুল হুসেইন এ বিষয়ে মন্তব্য না করে জানান, এখন বালু নিলাম হয়ে গেছে।

 

এ বিষয়ে নিলাম হওয়ার আগে যোগাযোগ করলে হয়তো কিছু করা সম্ভব হতো। টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন জানান, তিনি কিছুদিন আগে এখানে যোগদান করেছেন, তাই এ বিষয়ে কিছু জানেন না। কয়েক বছর আগে বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার (নিউ ধলেশ্বরী-পুংলী-বংশাই-তুরাগ-বুড়িগঙ্গা রিভার সিস্টেম) প্রকল্পের আওতায় নিউ ধলেশ্বরী নদী খনন করা হয়েছে। খননকৃত বালু নদীর দুই তীরে স্ত‚প করে রাখা ছিল। পরে তা পরিমাপ করে জেলা ড্রেজিং ও ড্রেজড ম্যাটারিয়াল ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

 

টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আমিনুল ইসলাম জানান, অনিয়মের বিষয়ে কাউকে ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। অনিয়মের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিষয়ে জেলা প্রশাসন সবসময় কঠোর অবস্থানে রয়েছে। ওই এলাকাটা যেহেতু কালিহাতী উপজেলার অংশ তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version