-->
ফিরে দেখা-২০২২

দেশজুড়ে আলোচনায় ছিল খুলনার মরিয়ম মান্নান

মো. জামাল হোসেন, খুলনা
দেশজুড়ে আলোচনায় ছিল খুলনার মরিয়ম মান্নান
ক্যাপশন: মরিয়ম মান্নান (ডানে) ও তার মা রহিমা বেগম

মো. জামাল হোসেন, খুলনা:  গত বছর দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল একটি অপহরণ ও লাশ উদ্ধারের ঘটনা। মাকে ফিরে পেতে মেয়ে মরিয়ম মান্নানের কান্না অশ্রু সিক্ত করেছিল সব শ্রেণির মানুষকে। পরে জানা গেল প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গিয়ে এটি ছিল পারিবারিক নাটক। পুলিশ ও পিবিআইয়ের তদন্তে উঠে আসে আসল ঘটনা। সমালোচনার ঝড় ওঠে দেশজুড়ে। তবে রহিমা বেগমের অপহরণের বিষয়টি দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম নিলে পুলিশ নড়েচড়ে বসে।

 

সূত্রমতে, বিদায়ী বছরের ২৭ আগস্ট রাত ১০টায় নগরীর দৌলতপুর মহেশ^রপাশা উত্তর বণিকপাড়ার বাসার উঠানের নলক‚প থেকে পানি আনতে গিয়ে নিখোঁজ হন মরিয়ম মান্নানের মা রহিমা বেগম। এ ঘটনায় রহিমা বেগমের ছেলে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।

 

পরবর্তীতে তারা মায়ের সন্ধান চেয়ে সংবাদ সম্মেলন, পোস্টারিং, লিফলেট, মাইকিং ও মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন। মায়ের সন্ধান দাবিতে এক কর্মসূচিতে মরিয়ম মান্নানের কান্নার ছবি ভাইরালও হয়।

 

অপহরণের দু’দিন পর কয়েকজন আসামির নাম উল্লেখ করে দৌলতপুর থানায় রহিমা খাতুনের ছোট মেয়ে আদুরী বেগম মামলা করেন। সেই মামলায় গ্রেপ্তার হন রহিমা বেগমের বর্তমান স্বামী বেলাল ঘটক, প্রতিবেশী রফিকুল ইসলাম পলাশ, মো. মহিউদ্দিন, গোলাম কিবরিয়া, জুয়েলসহ আরো কয়েকজন।

 

এরপর ২৩ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার বাওলা ইউনিয়নের বাওলা পূর্বপাড়ার একটি কবরস্থানে বস্তাবন্দি লাশের সন্ধান মেলে। লাশের খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান মরিয়ম মান্নান। উদ্ধার হওয়া ওই লাশ তার মায়ের বলে দাবি করেন। সেখানেও আলোচনার জন্ম দেন মরিয়ম মান্নান। তার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ আদালতে ডিএনএ টেস্টের জন্য আবেদন করে থানা পুলিশ। কিন্তু ওইদিন শুক্রবার থাকায় তা সম্ভব হয়নি।

 

এর আগে কথিত অপহরণ মামলাটি দৌলতপুর থানা থেকে তদন্তের জন্য পিবিআইতে হস্তান্তর করা হয় আদালতের মাধ্যমে। অবশেষে ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে রহিমা বেগমকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করতে সক্ষম হয় দৌলতপুর থানা পুলিশ। পুলিশ রহিমা বেগমকে ওইদিন রাতে ফরিদপুর জেলার সৈয়দপুর গ্রামের কুদ্দুস মোল্লার বাড়ি থেকে উদ্ধার করে। উদ্ধার হওয়ার পর দৌলতপুর থানা পুলিশ তাকে জিম্মায় নেয়। রাতে উপস্থিত সাংবাদিকদের থানার ওসি বলেন, রহিমা বেগম স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে ছিলেন।

 

উদ্ধার হওয়ার পরদিন দৌলতপুর থানা তাকে খুলনা পিবিআইতে হস্তান্তর করে। ওইদিন সংবাদ সম্মেলনের পর আদালতে প্রেরণ করা হয়। আদালতে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। পরে তাকে ছোট মেয়ে আদুরীর জিম্মায় দেন আদালত।

 

মরিয়ম মান্নানের অপহরণের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আসামি মহিউদ্দিন বলেন, জমির সীমানা নিয়ে এলাকার পলাশ, জুয়েল ও হেলাল শরীফের সঙ্গে রহিমা বেগমদের বিরোধ ছিল। এ ছাড়া আমার ছোট ভাই কিবরিয়ার জমি তাদের সীমানা লাগোয়া। তাই আমাদের এ মামলায় ফাঁসিয়েছে তারা। তা ছাড়া তিনি এলাকার বহু মানুষকে এর আগে এমনভাবে ফাঁসিয়েছেন। সম্মানের দিকে তাকিয়ে সবাই তাদের সঙ্গে আপস করে নেয়। এর আগেও আমাদের নামে দ্রতবিচার আইনে মিথ্যা মামলা করেছিল তারা। কিন্তু পিবিআইয়ের সঠিক তদন্তে সে যাত্রায় আমরা রক্ষা পেয়েছিলাম। এবারো পিবিআই তদন্ত করে সঠিক রিপোর্ট দিবে।

 

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মিথ্যা মামলা মাথায় নিয়ে এক মাস এক দিন জেল খেটেছি। আমার সন্তানেরা রাস্তায় বের হতে পারেনি। মরিয়ম মান্নান ও তার পরিবার দেশের মানুষের আবেগ নিয়ে খেলা করেছে। পিবিআই ফাইনাল রিপোর্ট দিলে তারা আদালতে মানহানি মামলা করবেন বলেও উল্লেখ করেন।

 

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক পিবিআই মো. আ. মান্নান বলেন, মামলায় বর্ণনায় তারা যা লিখেছিলেন সেটি সত্য নয়। অপহরণের বিষয়ে রহিমা বেগম তাদের জানিয়েছেন, সংসার, ছেলেমেয়ে ও জমিজমা তার ভালো লাগত না। তাই তিনি আত্মগোপনে গিয়েছিলেন। খুব শিগগিরই এ মামলার ফাইনাল রিপোর্ট আদালতে দাখিল করা হবে।

 

তিনি আরো বলেন, রহিমা খাতুন এর আগে একাধিকবার বাড়ি থেকে বের হয়ে আত্মগোপনে গেছেন। প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর জন্য এটি ছিল তাদের সাজানো নাটক বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version