-->

বাউফলের মৃৎপণ্য দেশের গন্ডি পেরিয়ে এখন বিদেশের বাজারে

মো. ফিরোজ,বাউফল
বাউফলের মৃৎপণ্য দেশের গন্ডি পেরিয়ে এখন বিদেশের বাজারে

মো. ফিরোজ,বাউফল: বাউফলের ঐতিহ্যবাহী মাটির তৈরি পণ্যসামগ্রী এখন দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশের বাজার দখল করেছে। বিগত কয়েক বছর ধরে ইউরোপ, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার বেশ কয়েকটি বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে মাটির তৈরি বিভিন্ন পণ্য।

 

বাউফল উপজেলার মদনপুরা ও কনকদিয়া ইউনিয়নের পালপাড়া পরিদর্শনকালে জানা যায়, করোনা মহামারির ধাক্কা সামলে বর্তমানে মহাব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকরা। মৃৎপল্লি ঘুরে চোখে পড়েছে মাটির তৈরি বাহারি সব তৈজসপত্র এবং শোনা যাচ্ছে নানা রং-বেরংয়ের খেলনার টুং-টাং শব্দ।

 

প্রতিযোগিতা চলছে দ্রুত সরবরাহের। বাহারি ডিজাইনের পণ্যের ফিনিশিং শেষে চলছে প্যাকেজিং। কাগুজিরপুল ব্রিজের ঢালে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িতে লোড করা হচ্ছে মাটির তৈরি পণ্যভর্তি ঝুড়ি। বাজার ধরতে গাড়িগুলো যাবে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়।

 

বাউফলে আধুনিক মাটির পণ্য তৈরির দিকপাল, একাধিক পুরস্কারপ্রাপ্ত বিশ্বেশ্বর পাল জানান, এখানকার মাটির পণ্য দেশ এবং বিদেশে নন্দিত। এসব পণ্য বিদেশে রপ্তানির জন্য আড়ং, কোর দি জুট ওয়ার্কস, ঢাকা হ্যান্ডিক্রাফটসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে।

 

তিনি বলেন, প্লাষ্টিক পণ্যের প্রভাবে বংশানুক্রমিকভাবে চলে আসা এই পেশা যখন বিলুপ্ত হওয়ার পথে, তখন আমরা আধুনিক ডিজাইনের পণ্য তৈরির জন্য কৌশল অবলম্বন করি। আশির দশকে ঢাকায় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে বাউফলের মাটির পণ্যের মান দেখানো হয়।

 

ওই সময় আড়ং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়। তারা বাউফলে তৈরি মাটির পণ্য দেখে মুগ্ধ হন। সেই থেকেই তাদের সহযোগিতায় এ শিল্পে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগতে শুরু করে। এরপর ঢাকা হ্যান্ডিক্রাফট নামক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলে এরপর থেকেই ঢাকায় বাউফলে তৈরি নানা ধরনের মাটির পণ্য সরবরাহ শুরু হয়।

 

বিশ্বেশ্বর পাল বলেন, আমরা কঠোর পরিশ্রম ও মননশীলতা দিয়ে বাউফলের মাটির পণ্যকে বিশ্ব মানের আধুনিক পণ্যে রূপ দিতে সক্ষম হয়েছি এবং এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা গর্বের অংশীদার হয়েছেন। বর্তমানে বাউফলের মাটির তৈরি নানা পণ্য এশিয়া মহাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে ইউরোপ, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে।

 

বাউফল পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও বাউফলের একটি মৃৎশিল্প কারখানার মালিক শংকর পাল জানান, প্রতিবছরই পণ্যের ডিজাইনে পরির্বতন আসে। ঢাকার বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান নতুন ডিজাইন করে তাদের চাহিদাপত্র দেয়। সে অনুযায়ী নতুন নতুন ডিজাইনের পণ্য তৈরি হয়। বিগত বছরের তুলনায় এ বছর সবগুলো মাটির পণ্যেই নতুনত্ব এসেছে।

 

অপর মৃৎশিল্পী শ্যামল পাল জানান, এ বছর ডিনার সেটে থাকছে প্লেট, গ্লাস, মগ, কারিবল, জগ, লবণদানি, সানকি (বাসন), কাপ-পিরিচ ও তরকারির বাটি। এ ছাড়াও নতুন ডিজাইনে তৈরি করা হয়েছে স্যুপসেট। অন্য পণ্যের মধ্যে নতুন ডিজাইনের কয়েলদানি, মোমদানি, ঘটি, ফুলদানি ও নানা ধরনের খেলনা ক্রেতাদের আলাদাভাবে আকৃষ্ট করবে।

 

ডিনার সেট ছাড়াও আলাদা বিক্রির জন্য তৈরি করা হয়েছে মাটির প্লেট, গøাস, জগ, মগ, ইত্যাদি। রাসায়নিক কোনো পদার্থের ছোঁয়া ছাড়াই তৈরি করা হয়েছে মাটির ওইসব পণ্য। পণ্যের গায়ে রং করা হয় পাহাড়ি গাছের রস দিয়ে।

 

মৃৎশিল্প কারখানার মালিক শিল্পী বরুণ পাল বলেন, একসময় বাউফলের পালপাড়ায় জালের কাঠি, পুতুল, কলস, বাচ্চাদের খেলনা, রসের হাঁড়িসহ গ্রামবাংলার ঘরে ব্যবহার্য নানা ধরনের মাটির সামগ্রী তৈরি হতো। ক্রমান্বয়ে প্লাষ্টিক সামগ্রীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে একই কাঁচামালে তৈরি হতে থাকে মোমদানি, অ্যাস্ট্রে, ফুলদানি এবং পায়ের গোড়ালি ঘসোনি (ঝামা), ডিনারসেট, কয়েলদানি, টি সেট, হুক্কা, ভর্তার বাটি, ল্যাম্পসেট, মাটির মালা, ব্রেসলেট ও কানের দুলসহ আর্কষণীয় মাটির শোপিচ।

 

তিনি জানান, আধুনিক ডিজাইনের এসব মাটির পণ্য তৈরি করে অনেক পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতা এসেছে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version