-->

শীতকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত প্রকৃতি

মাসউদ রানা, দিনাজপুর
শীতকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত প্রকৃতি
ফাইল ফটো

মাসউদ রানা, দিনাজপুর: নীল আকাশে ভেসে বেড়ানো মেঘের ভেলায় চড়ে বিদায় নিয়েছে শরৎ ঋতু। এসেছে হেমন্ত। আমনের সোনালি ক্ষেতে ভোরের আকাশের পড়ন্ত কুয়াশায় উদীয়মান সূর্যের আলোতে ঝিলমিল করছে সোনালি ধানের শীষ। বাতাস কিছুটা শুষ্ক হলেও তাতে ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা ভাব। শীতকে স্বাগত জানাতে ধীরে ধীরে প্রস্তুত হচ্ছে প্রকৃতি। তবে এখন শীত ভাবটা কেবল রাতেই অনুভুত হচ্ছে।

 

ষড়ঋতুর বাংলাদেশে পৌষ-মাঘ শীতকাল হলেও সাধারণত হেমন্তকে ধরা হয় শীতের পূর্বাভাস বা বার্তাবাহক হিসেবে। কার্তিক ও অগ্রহায়ণ এ দুই মাস নিয়ে হেমন্তকাল। হেমন্ত মানেই শিশিরস্নাত প্রহর, কুয়াশায় ঢাকা সকাল। শরতে কাশফুল মাটিতে নুইয়ে পড়ার পরপরই হেমন্তের আগমন ঘটে। এরপর আসে শীত। হেমন্তের সকাল বেলা আবছা কুয়াশায় ঢাকা থাকে চারদিকের মাঠঘাট। সকালে ফুলের পাঁপড়ীতে, ধানে গাছের ডগায় যে শিশির বিন্দু জমে থাকে তা হেমন্তের জানান দেয়। গাছের নরম ও কচি পাতাগুলোর ফাঁকে ফাঁকে মিষ্টি রোদ আর সুনীল আকাশ যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে। হেমন্তের রাতে মেঘমুক্ত আকাশে জোৎস্নার আলো যেন অন্য সময়ের চেয়ে একটু বেশি পড়ে। এ সময়ে হালকা শীত অনুভূত হয়। প্রতিদিনই রাতে তাপমাত্রা একটু একটু করে কমছে, দিনের ভাগে বেশ গরম অনুভূত হয়।

 

এখন বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় গ্রামাঞ্চলের সন্ধ্যার দিকে তা বাষ্পাকারে দেখা যায়। সেটিই কুয়াশা। এ সময় বাতাসের দিকও পরিবর্তন হয়। দক্ষিণ-পশ্চিমের পরিবর্তে বাতাস উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে বইতে শুরু করছে। এজন্য সাধারণভাবে শীতের আবহ তৈরি হচ্ছে বলে মনে হয়। তবে সার্বিকভাবে শীত আসবে আরো কিছু দিন পর। এখন হেমন্তকাল বলেই ভোরে সূর্য ওঠার আগে ঘরে গরম, বাইরে ঠাণ্ডা অনুভূত হয়।

 

হিমালয় পর্বতঘেষা বৃহত্তর দিনাজপুরে তুলনামূলক শীতের তীব্রতা অনেক বেশি। হেমন্ত মানেই এখন খেজুরের রস সংগ্রহে আর গুড়-পাটালি বানাতে ব্যস্ত সময় পার করছে গাছিরা। শহরের মোড়ে মোড়ে শীতের পিঠা বিক্রি শুরু হয়েছে। ব্যবসায়ীরা দোকানে তুলতে শুরু করেছেন শীতের কাপড়সহ লেপ-তোষক ও কম্বল। আর কোন কোন গাছের পাতায় লাগতে শুরু করেছে হলুদের ছোঁয়া।

 

হাটবাজার গুলোতে উঠতে শুরু করেছে কুয়াশা ভেজা শীতের তাজা সবজি ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, শালগম, ওলকপি, গাজর, টমেটো, পেঁয়াজপাতাসহ নানা ধরনের শাক-সবজি।

 

যদিও শহরের যান্ত্রিকতার করালগ্রাসে হারিয়ে যাচ্ছে সেই সকালের খেঁজুরের রস আর পিঠাপুলির উৎসব, তবু প্রকৃতির আবর্তে এক নতুন সুরব্যঞ্জনা নিয়ে আবারো আসছে শীত। শীতের আগমনী সঙ্কেতে দিনাজপুরের বিভিন্ন হাটবাজারে লেপ-তোষকের দোকানদার এবং কারিগররা খুশি। ইতোমধ্যে শীত মোকাবিলায় আগাম লেপ-তোষক বানিয়ে মজুত করে রাখতে শুরু করেছেন দোকানদাররা। কারিগররা এখন ব্যস্ত সময় পার করছে। সকলে সুঁই-সুতো আর তুলাধুনা নিয়ে বেশ ব্যস্ত। তারা অনেক দিন কর্মহীন থাকলেও এখন তাদের মুখে হাঁসি ফুটেছে।

 

দীর্ঘ রাতের কুয়াশার আবরণ আর সকালের শিশির বিন্দুতে দোল খাচ্ছে আমন ধানের ডগা ও শীষ। পাকাধানের সোনালি শীষে ভোরের আকাশে উদীয়মান সূর্যের আলোর ঝলকানিতে মনে হয় যেন কাঁচা সোনা ঝিলমিল করছে। তা দেখে কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক দেখা যায়। কার্তিক শেষে অগ্রহায়ণ যেন দঃখ শেষে সুখের পালা। দিনাজপুর সদরের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রাক্তন পরিচালক ডা. মুহা. শহিদুল্লাহ বলেন, শীতের মৌসুমে চাষকৃত তাজা শাক-সবজি, খেজুরের রস খেতে সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। তবে শীতজনিত রোগ থেকে সাবধান থাকতে হবে। বিশেষ করে বৃদ্ধ এবং শিশুদের।

 

শীত মৌসুমের পরিবেশটাই আলাদা আনন্দের। বিরামপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্র সাকিব আল মাহামুদ, ফুলবাড়ী উপজেলার সুজাপুর মডেল সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্র অলিন্দ, খোলাহাটি ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী রাফিয়া তামমীমসহ একাধিক শিক্ষার্থী বলে, শীতের মৌসুম এলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা সফরে যাওয়া যায়, পরিবারসহ নানা-মামার বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া, শীতের সকালে মিষ্টি রোদ, খেজুরের রস, খেজুর গুড়ের স্বাদ আর নতুন ধানের হরেক রকম পিঠা ও পায়েশ সে এক অন্য রকম অনুভূতি। তাই শীতকালটা এক অনন্য অনুভূতি ও আনন্দের।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version