-->

বরগুনা জেলা প্রশাসনের ইলিশ উৎসব, নেই ইলিশ

বরগুনা প্রতিনিধি
বরগুনা জেলা প্রশাসনের ইলিশ উৎসব, নেই ইলিশ

এক মাস আগেই ইলিশের আষাঢ় মৌসুম শেষ হয়েছে। বঙ্গোপসাগর ও নদ-নদীতে শীত মৌসুমে সাধারণত ইলিশের দেখা মেলে না। মৌসুম শেষ হওয়ার পর নদী-সাগরে যখন ইলিশ সংকট তখন বরগুনা জেলা প্রশাসন উপক‚লীয় এ জেলায় ইলিশ উৎসবের আয়োজন করেছে।

 

ফলে এই উৎসবে যেমন ক্রেতাদের সাড়া মিলছে না তেমনি কোনো সার্থকতা নেই বলে মনে করছেন মৎস্য-সংশ্লিষ্টরা। মৎস্যজীবীরা মনে করছেন, ভরা মৌসুমে এ উৎসবের আয়োজন করলে যথার্থ সার্থক হতো।

 

গতকাল মঙ্গলবার সকালে বরগুনা জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বরগুনা সার্কিট হাউস মাঠে দুই দিনব্যাপী ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা ও ইলিশ উৎসবের উদ্বোধন করেন বরগুনার জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান।

 

জানা যায়, মেলায় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের স্টল স্থাপনের পাশাপাশি ইলিশ উৎসবেরও আয়োজন করা হয়েছে। দুপুরে মেলা মাঠের ইলিশ উৎসবে গিয়ে দেখা যায়, ৪/৫ জন পাইকার সামান্য কিছু ইলিশের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন। কয়েকজন ক্রেতার দরদাম করে ইলিশ না কিনেই ফিরে যাচ্ছেন।

 

উৎসবে ইলিশ নিয়ে এসেছেন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বিএফডিসি পাথরঘাটার আড়তদার সমিতির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর জোমাদ্দার। তিনি ভোরের আকাশকে বলেন, তিন দিন আগে জেলা প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগ থেকে তাদের ইলিশ উৎসবের কথা জানানো হয়।

 

তড়িঘড়ি করে বিএফডিসি থেকে দুই মণ ইলিশ জোগাড় করে আজ মেলায় এসেছি। আমাদের নদ-নদীতে এখন ইলিশের দেখা মিলছে না। যে কারণে দাম অনেক বেশি। এ অবস্থায় ইলিশ উৎসবে ইলিশের কোনো ক্রেতা নেই। এই মেলা যদি ভরা মৌসুমে আয়োজন করা হতো তবে সার্থক হতো। আমরাও ইলিশ বিক্রি করে লাভবান হতে পারতাম আর ক্রেতারাও কম দামে ইলিশ কিনে নিয়ে যেতে পারত।

 

বরগুনা মৎস্য সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির ভোরের আকাশকে বলেন, এখন তো শীতের মৌসুম, তাই ইলিশ নেই বললেই চলে। আমরা মাছ বাজারের সম্পূর্ণ ইলিশ মাছ নিয়ে এসেছি। চারশ কেজির মতো ইলিশ এখানে আমরা নিয়ে এসেছি। এখন ১৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি, ক্রেতারা দেখেই ফিরে যাচ্ছেন।

 

বরগুনা মৎস্য সমবায় সমিতির সভাপতি মো. রফিক সওদাগর ভোরের আকাশকে বলেন, প্রশাসন হয়তো বুঝতে পারেনি এখন ইলিশ নেই। তারা হঠাৎ করে ইলিশ উৎসবের আয়োজন করেছে আর আমরা তড়িঘড়ি করে কিছু মাছ নিয়ে আসছি। এই উৎসব যদি অবরোধের ১৫ দিন আগে করা হতো তবে সার্থক হতো।

 

জেলা টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি আবু জাফর সালেহ ভোরের আকাশকে বলেন, বরগুনার ইলিশ ব্র্যান্ডিয়ের জন্য আমরা ২০১৯ সালে জেলা টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরাম ইলিশ উৎসবের আয়োজন করেছিল।

 

পরে জেলা প্রশাসনও ইলিশ উৎসবের সঙ্গে যুক্ত হয়। আমরা সে সময় এখানেই কোটি টাকার বেশি ইলিশ বিক্রি করেছিলাম। এখন শীতের মৌসুমে ইলিশ উৎসব আয়োজন করা হয়েছে। এখন শীতে যেমন ইলিশ নেই, তেমনি স্বাদও কম, আবার দামও বেশি। ক্রেতা না পেয়ে বিক্রেতা হতাশ আর দাম বেশি বলে ক্রেতারাও ফিরে যাচ্ছে।

 

এটা যদি ইলিশ মৌসুমে না করা হয়, তবে মানুষের সাড়া মিলবে না। ভরা মৌসুমে করা হলে সার্থক হতো বলে আমি মনে করি।

 

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব ভোরের আকাশকে বলেন, যেহেতু গত ২ বছর হয়নি, এ কারণে এবার শেষ সময়ে হলেও আমরা উৎসবের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে স্বল্প পরিসরে এ আয়োজন করেছি। আমরা আগামীতে আরো বড় পরিসরে উৎসবের আয়োজন করব।

 

বরগুনার জেলা প্রসাশক মো. হাবিবুর রহমান ভোরের আকাশকে বলেন, ইলিশের ব্র্যান্ডিং করার জন্য এই মেলার উদ্দেশ্য। আসলে এখন শীতের মৌসুম এটা আমরাও জানি। কিন্তু নানা সীমাবদ্ধতার কারণে আমরা মেলার আয়োজন মৌসুমের যথাসময়ে করতে পারিনি। ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে আমরা মোটামুটি আয়োজন করেছি। আগামীতে ভরা মৌসুমে আমরা বড় পরিসরে এ মেলার আয়োজন করব।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version