-->

সংস্কৃতির ঐতিহ্য ও সাম্যের প্রতীক জামাই মেলা

সংস্কৃতির ঐতিহ্য ও সাম্যের প্রতীক জামাই মেলা

বাঙালির সব উৎসবের মধ্যে একটা সার্বজনীন রূপ আছে। এতে ধর্ম, সম্প্রদায়, জাত-পাত বা ধনী-গরিবের সামাজিক বিভক্তি বাধা হয়ে দাঁড়ায় না বরং সব শ্রেণির মধ্যে সেতুবন্ধন রচিত হয়। আর এ কারণেই কালের বিবর্তনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকতার ধরন পাল্টালেও আবহমান বাংলার সামাজিক উৎসব, গণমানুষের মেলবন্ধনের ঐতিহ্য-কৃষ্টিগুলো আজও হারিয়ে যায়নি। মেলা মানেই মহামিলন।

 

তেমনি শনিবার দিনভর জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার আয়মাপুর গ্রামে প্রায় পাঁচশ বছরের ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ জামাই মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দিনটির জন্য সারাটি বছর অপেক্ষায় থাকেন এই গ্রামের লোকজনসহ আশপাশের গ্রামের মানুষেরা। এই মেলায় আছে একের ভেতর দুই-এক কথায় রথ দেখা আর কলা বেচা।

 

প্রতি বছর অগ্রহায়ণ মাসে আমান ধান কাটা-মাড়াই শেষে ফসল ঘরে তোলার আনন্দে শুধু মেয়ে ও জামাইদের উদ্দেশ্যে এ মেলার আয়োজন করা হয়। তবে এখন আর শুধু মেয়ে-জামাইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই এটি পরিণত হয়েছে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মিলন মেলায়।

 

মেলায় দর্শকদের তাৎক্ষণিক মনোরঞ্জনের জন্য থাকে নানা আয়োজন। নাগরদোলা, লাঠিখেলা, পুতুল নাচ, বাউল গান, ঘেটু গান, জারি গান, গাজীর গান, পীর-ফকিরদের গান, বায়োস্কোপ, সার্কাস, লটারি, কীর্ত্তন প্রভৃতি আয়োজন দর্শকদের বাড়তি আনন্দের খোরাক জোগায়। সাথে থাকে পিঠাপুলিসহ লোকজ খাবারের বিশাল সমাহার।

 

বিশেষ করে জিলাপি, গজা, রসগোল্লা, কদমা, বাতাসা, বিন্নি ধানের খৈ ও দই-চিড়ার স্বাদই যেন আলাদা। এ ছাড়াও কাপড়, মনোহারি, প্লাস্টিক পণ্য, বাঁশ-বেতের সামগ্রী, তামা-কাঁসা-পিতলের বাসনপত্র প্রভৃতির দোকানও বসেছে মেলায়। ফলে এটি যেন বাঙালির সংস্কৃতির সাম্যের প্রতীক। সাধারণত কয়েকটি গ্রামের মিলিত এলাকায় মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। মেলাকে ঘিরে গ্রামীণ জীবনে আসে এক অদ্ভুত প্রাণচাঞ্চল্য।

 

জুয়েল নামে এক ব্যক্তি বলেন, আমি এ মেলার পাশের গ্রামে বিয়ে করেছি। কয়েক দিন আগে আমার শ্বশুর গিয়ে মেলা উপলক্ষে বাড়ির সবাইকে দাওয়াত করে এসেছেন।

 

ফয়সাল মাহমুদ তালুকদার বলেন, বাংলা কার্তিক মাসের শেষ শনিবার এই জামাই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এখানে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ জমায়েত হয়ে মেলায় উৎসব করেন। এ মেলার মধ্য দিয়ে সব ধর্মাবলম্বী মানুষের সম্প্রীতির বন্ধন তৈরি হয়।

 

মেলার আয়োজক মো. মোফাজ্জল হোসেন তালুকদার বলেন, যুগ যুগ ধরে আয়মাপুর গ্রামে জামাই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। আমার দাদারা এ মেলার আয়োজন করছিলেন, এখন আমরা করছি। এ মেলা ৫০০ বছরের ঐতিহ্য। এ ছাড়াও তিনি বলেন, মানুষের উচ্ছাস-উল্লাসের বহিঃপ্রকাশ ঘটে এ মেলার মাধ্যমে। ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায়ের ঊর্ধ্বে ওঠে মেলা মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন গড়ে ওঠে তাই গ্রাম-বাংলার এ মেলা শত শত ঐতিহ্যের এক মহা সম্মিলন।

 

ভোরের আকাশ/নি

মন্তব্য

Beta version