-->

কাউনিয়ায় ৫১ বছর ধরেই ভরসা বাঁশের সাঁকো

বাবলু রহমান বারী, রংপুর
কাউনিয়ায় ৫১ বছর ধরেই ভরসা বাঁশের সাঁকো

বাবলু রহমান বারী, রংপুর: রংপুর কাউনিয়ায় ৫১ বছর ধরে খলিলের ঘাটে হাজার হাজার মানুষের একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকো। দীর্ঘদিনেও নির্মাণ হয়নি পাকা সেতু। হতাশায় পড়েছে জনসাধারণ।

 

কাউনিয়া উপজেলার প্রাণনাথ চর গ্রামে খলিলের ঘাট এলাকায় মরা তিস্তা নদীর ওপর স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্কুল, কলেজ, মাদরাসার শিক্ষার্থীসহ ৯ গ্রামের মানুষ যাতায়াত করছে। বাঁশের সাঁকোই তাদের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা। ভোটের আগে চেয়ারম্যান, এমপি পাকা সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিলেও আজও নির্মাণ হয়নি সেতু। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভাঙা বাঁশের সাঁকোর ওপর দিয়ে চলছে যাতায়াত। বাণিজ্যমন্ত্রীর এলাকা খলিলের ঘাটে স্বাধীনতার ৫১ বছর পরেও পাকা সেতু নির্মাণ হয়নি।

 

শস্যভাণ্ডার নামে খ্যাত এলাকাটির কৃষিপণ্য পরিবহনে কৃষকদের পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ। পাকা সেতু না থাকায় ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা। চীনের দুঃখ হোয়াং হো আর এ চরাঞ্চলের ৮ গ্রামের মানুষের দুঃখ হচ্ছে মরা তিস্তার শাখা নদীটির বাঁশের সাঁকো। হারাগাছ ইউনিয়ন ও শহীদবাগ ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে তিস্তা রেল ও সড়ক সেতু পয়েন্টে গিয়ে মিলিত হয়েছে তিস্তা-সতী নদী। বর্ষা মৌসুমে নৌকা আর বাঁশের সাঁকোই এলাকাবাসীর ভরসা। আর শুকনা মৌসুমে নদীর বুক চিরে হেঁটে চলাচল করে এলাকার মানুষ।

 

হারাগাছ ও শহীদবাগ ইউনিয়নের সীমান্তে খলিলের ঘাট নামক স্থানে পাকা ব্রিজ নির্মাণের দীর্ঘদিনের দাবি এলাকাবাসীর। ওই স্থানে ব্রিজ না থাকায় চর নাজিরদহ, খলাইঘাট, ঠিকানার হাট, চাংরা, পাগলার হাট, দয়াল বাজার, বুদ্ধির বাজার, মাস্টার বাজার, প্রাণনাথ চড় ও সাব্দী গ্রামের স্কুল-কলেজ-মাদরাসাগামী শিক্ষার্থীসহ প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন হাটবাজারে যাতায়াত করে। ওই এলাকাগুলো শস্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত। এ গ্রামগুলোতে ব্যাপকহারে আলু, ভুট্টা, ধান, পাট, রসুন, মরিচ, পেঁয়াজ, বাদাম, খিরা, শশাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি উৎপাদন হয়ে থাকে। এসব কৃষিপণ্য হাটবাজারে নিতে হলে প্রায় ১০ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে তকিপল হাট, ৭ কিলোমিটার ঘুরে খানসামা হাট ও ১২ কিলোমিটার ঘুরে মীরবাগ হাটে যেতে হয়।

 

খলিলের ঘাটে পাকা সেতু নির্মাণ হলে অর্ধেক পথ কমে আসবে। সেই সাথে এলাকার কৃষকরা পাবে তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য। ওই এলাকার মানুষ নৌকায় পারাপারে দুর্ভোগ কমাতে গত বছর বর্ষা মৌসুমে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বাঁশ উত্তোলন করে একটি বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে চলাচল শুরু করে। সে সাঁকোটির এখন নড়বড়ে অবস্থা।

 

চাংড়া গ্রামের বাসিন্দা কাওসার আলী, জাহিদ মিয়া, আনোয়ার আলী ও আনছার আলী জানান, এখানে একটি পাকা ব্রিজ নির্মাণ করা হবে- এ কথা বহুদিন ধরে শুনে আসছি, কিন্তু ব্রিজ নির্মাণের কোনো আলামত দৃশ্যমান নয়। এ ছাড়াও হারাগাছ ও শহীদবাগ ইউপির সীমান্তে ব্রিজ নির্মাণের স্থানটি হওয়ায় দুই চেয়ারম্যানের রশি টানাটানিতে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ বারবার ভেস্তে যাচ্ছে। এদিকে সাবেক চেয়ারম্যান রকিবুল হাসান পলাশ বলেন, শহীদবাগ ইউপি চেয়ারম্যান আ. হান্নানের সাথে সমন্বয় করে ব্রিজ নির্মাণের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।

 

এ বিষয়ে কাউনিয়া উপজেলা প্রকৌশলী আসাদুজ্জামন জেমি জানান, খলিলের ঘাটে পাকা সেতু নির্মাণের প্রস্তাবনা বেশ কয়েকবার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যে সয়েল টেস্টও হয়েছে। তারপর পুনরায় বাণিজ্যমন্ত্রী মহোদয়ের সুপারিশ নিয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু করা সম্ভব। এ ছাড়াও কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিনা তারিন জানান, বাণিজ্যমন্ত্রীর সাথে কথা বলা হয়েছে। আশা করছি, এ বছরই খলিলের ঘাটে বাঁশের সাঁকো থেকে পাকা সেতু নির্মাণ করা হবে।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version