নওগাঁ: বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে তালগাছ জড়িয়ে আছে ওতপ্রোতভাবে। এক সময় তালপাখার বাতাস না হলে মন জুড়াত না। তালের ডিঙি ছাড়া চলাচল করাই যেত না কোনো কোনো এলাকায়। বর্তমানে এসবের ব্যবহার কমেছে। কিন্তু আজও তালের পিঠা, তালের গুড়ের পায়েস কিংবা তালের রুটি না খেলে বাঙালির মন জুড়ায় না।
এ ছাড়া বজ্রপাতের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে তালগাছের তো বিকল্প নেই। তাই এখনো বিভিন্ন সড়কের পাশে, বাড়ির পাশে লাগানো হচ্ছে তালগাছ। এর ধারাবাহিকতায় সবুজ মাঠের বুক চিরে নওগাঁ নিয়ামতপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে হাজীনগর ইউনিয়নের তালতলী মোড় থেকে ঘুঘুডাঙ্গা মোড় পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার গ্রামীণ পথের দুই পাশে রয়েছে সারি সারি তালগাছ। এ সৌন্দর্য উপভোগে প্রতি বছর আয়োজন করা হয় তাল পিঠার মেলা। এবারো তিন দিনব্যপী আয়োজন করা হয়েছে পিঠা মেলার। এ মেলায় হাজারও মানুষের সমাগম ঘটেছে। আগতরা সড়কটির সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি স্বাদ নিতে পারছেন বাহারি তাল পিঠার।
এ বছর তালের পাটিসাপটা, তালের জিলাপি, তালের বড়া, তালের ঘীর, তালের কফি, তালের আমতা, তালের নাড়ুসহ অন্তত ২০ ধরনের পিঠা মিলছে এ মেলায়। এখানে হরেকরকমের তাল পিঠার পসরা সাজিয়ে বসেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা দোকানিরা।
নওগাঁ সাপাহার উপজেলা থেকে আসা মীনা পিঠা ঘরের মালিক মীনা জানান, প্রতি বছরের মতো এবারো বিভিন্নরকম তালের পিঠা দিয়ে দোকান সাজানো হয়েছে। এবারে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী তালের প্রায় সব ধরনের পিঠাই রাখার চেষ্টা করেছি এই আয়োজনে। প্রতি বছরের তুলনায় এ বছর বেচাকেনা অনেকটাই বেশি হচ্ছে। মেলাকে ঘিরে নওগাঁ ছাড়াও বেশ কয়েকটি জেলা থেকে দোকানিরা এসেছেন। তিন দিনের এ তাল পিঠার মেলায় প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষের সমাগম হয়।
জেলার বাইরে ও বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ আসেন এখানে। মেলায় পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা চাঁপাইনবাবগঞ্জের সবুজ হোসাইন বলেন, ঘুঘুডাঙ্গা তাল সড়কের ছবি ফেসবুকে অনেক দেখেছি। এবার সরাসরি দেখার জন্য পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে চলে এসেছি। তাল গাছের এমন লম্বা সারির মনোরম দৃশ্য সত্যি আমাদের মুগ্ধ করেছে। পাশাপাশি মেলাতে বিভিন্ন প্রজাতির তালের পিঠার সঙ্গে পরিচিত হতে পারলাম। তালের যে এতরকম পিঠা হয় এর আগে জানা ছিল না। এখানে এসে খুব ভালো লাগছে।
১৯৮৬ সালের দিকে এ তালগাছগুলো রোপণ করেছিলেন বর্তমান খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। তখন তিনি ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল বজ্রপাত থেকে রক্ষার পাশাপাশি যোগ হবে বাড়তি সৌন্দর্য। এ পিঠা মেলার আয়োজনও তিনিই করেন।
একটা সময় আমি থাকব না, তবে এমন আয়োজন যুগের পর যুগ থাকবে এমনটাই প্রত্যাশা করে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, প্রতি বছর ভাদ্র-আশ্বিনে বর্ণিল এ আয়োজন বসানো হয়। মেলাকে উপলক্ষ করে বাড়িতে বাড়িতে জামাই-মেয়ে আর স্বজনরা বেড়াতে আসেন। মূলত নতুন প্রজন্মের কাছে বিভিন্ন প্রজাতির গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী তালের পিঠা পরিচিত করে দিতেই এমন আয়োজন।
ভোরের আকাশ/আসা
মন্তব্য