-->

পানছড়িতে বাঙালি গুচ্ছগ্রামে পঁচা গম বিতরণ

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি
পানছড়িতে বাঙালি গুচ্ছগ্রামে পঁচা গম বিতরণ

খাগড়াছড়ি : জেলার পানছড়ি উপজেলার বাঙালি গুচ্ছগ্রামের রেশন কার্ড হোল্ডারদের মাঝে ২১ টন পচা গম বিতরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

 

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পানছড়ি উপজেলার গুচ্ছগ্রামগুলোতে সরেজমিনে গেলে বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। বাজার মনিটরিং করতে গিয়ে দেখা যায়, গুচ্ছগ্রামের এক রেশন হোল্ডার গম বিক্রি করার জন্য বাজারে এসেছেন। গমগুলো থেকে পোকা বের হচ্ছে এবং তা পোকা খাওয়া।

 

তিনি জানান, তার গুচ্ছগ্রামের রেশনকার্ড রয়েছে। বুধবার তিনি গমগুলো উত্তোলন করেছেন। গমগুলো পচা, খাওয়া যাবে না, তাই তিনি তা বিক্রি করতে চান।

 

পাইলট ফার্ম কেন্দ্রের মো. মারফত বলেন, ‘আমার মায়ের নামে গুচ্ছগ্রামের রেশনকার্ড রয়েছে। আমি রেশন আনতে গিয়ে দেখি, সেখানে চাল আর গমের পরিবর্তে টাকা দিচ্ছে। তখন আমি গুদামে ঢুকে দেখি গমগুলো পচা। তারা আমাকে চাল আর টাকা দিতে চাইলে আমি বলি আমি টাকা নেব না। আমাকে ভালো গম দেন। তারা বলে যে, ভালো গম দেয়া যাবে না। তখন আমি ফোনে বিষয়টি নিয়ে ইউএনও ম্যাডামকে অভিযোগ জানালে খোরশেদ মেম্বারসহ অন্যান্যরা আমাকে খারাপ ভাষায় গালাগাল করেন।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পানছড়ি খাদ্যগুদামের সহকারী উপ-খাদ্য পরিদর্শক মো. ইসমাইল বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেশন বিতরণের আদেশ জারি করেছেন, সে আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ডিও হয়েছে। সে ডিও-র অনুকূলে আমরা ২১ টন গম বিতরণ করেছি। গমগুলো গত ডিসেম্বর মাসে গুদামে আসে করোনা পরিস্থিতির কারণে। ওই গম গত দুই ডিও-তে দেয়া হয়নি যা গুদামে মজুদ ছিল। মাঝে গম বিতরণ বন্ধ ছিল তাই আমরা এই গমগুলো খামাল দিয়ে রেখেছিলাম। টেকনিক্যাল ও কারিগরি খাদ্য কর্মকর্তারা গমগুলো যাচাই-বাছাই করার পরে আমরা গম বিতরণ শুরু করেছি। এখন চট্টগ্রাম থেকে ভালো গম আসছে। তাই সামনে ভালো গম দেয়া হবে। তবে তার যাচাই-বাছাইয়ের এ দাবি অস্বীকার করেছেন খাগড়াছড়ি খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের জেলা কারিগরি খাদ্য পরিদর্শক হিরানন্দ চাকমা।

 

তিনি বলেন, ‘আমি আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে পানছড়ি খাদ্য গুদামে একবার গিয়েছিলাম। এরপর আর যাওয়া হয়নি। আমার কাজ হচ্ছে খাদ্যশস্যের গুণগত মান যাচাই করা। কিন্তু তারা কীভাবে পুরোনো গমগুলো গুচ্ছগ্রামে বিতরণ শুরু করল সেটা আমি জানি না। এই মাসে আমি পানছড়ি যাইনি। তাদেরকে আমি গম বিলি করার জন্য চিঠি দিইনি। গম বিতরণের বিষয়ে আমাকে কিছুই জানানো হয়নি।’

 

তিনি আরও বলেন, গুদামে গমগুলো আলাদা আলাদা খামাল দেয়া থাকে। বিজিবি-আনসারের জন্য আলাদা খামি এবং গুচ্ছগ্রামের জন্য আলাদা খামি। বিজিবি-আনসারের গম হলো স্পেশাল। তারা প্রতি মাসে গম উত্তোলন করে থাকে আর গুচ্ছগ্রামের গম বিতরণ করা হয় তিন মাস পরপর।

 

এ বিষয়ে জানতে পানছড়ি উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কফিল উদ্দিনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। পানছড়ি খাদ্য গুদামের ওসিএলএসডি মনি শংকর চাকমার মোবাইল নাম্বারে কল দিয়েও তা বন্ধ পাওয়া গেছে।

গুচ্ছগ্রামের রেশন বিতরণে পাইলট ফার্ম কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত তদারকি কর্মকর্তা ও সহকারী উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা উদয়ন চাকমা বলেন, আমাদের এ কেন্দ্রে গমের সংকট ছিল। এখানে পুরোনো গম বিতরণ করা হয়েছে। একজন রেশনকার্ড হোল্ডার পচা গম পেয়েছেন বলে আমার কাছে অভিযোগ দিয়েছিলেন।

 

পানছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবাইয়া আফরোজ বলেন, একজন ব্যক্তি এ বিষয়ে আমাকে একবার কল দিয়েছিলেন। আমি শুনেছি তিনি নাকি লিখিত অভিযোগ নিয়ে আমার কাছে এসেছিলেন। সেদিন আমি জেলায় মিটিংয়ে ছিলাম। তিনি অভিযোগ নিয়ে চলে গেছেন আর আসেননি। আপনি গমসহ অভিযোগকারীকে নিয়ে আসেন। কেউ অভিযোগ দিলে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব।

 

অভিযোগ রয়েছে, এসব পচা গম নিয়ে বছরের পর বছর ব্যবসা করে আসছে একটি সিন্ডিকেট। মূলত রেশন বিতরণের শুরুতে এসব পচা গম বিতরণ শুরু করা হয়। পচা গম বিতরণের খবরটি কার্ড হোল্ডারদের কাছে পৌঁছালে তাদের পচা গম নেয়ার প্রতি অনীহা সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে সে গমগুলো তারা সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কাছে কম মূল্যে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন। পানছড়ির খোলা বাজারে এক কেজি গম বিক্রি হয় ৪৬-৪৮ টাকা দরে। বর্তমানে রেশন দেয়ায় এর দাম কমে হয়েছে ৩৮-৪০ টাকা। রেশন বিতরণ শেষ হলে আবারো দাম বেড়ে যাবে বলে জানিয়েছেন খুচরা ব্যাবসায়ীরা। কিন্তু রেশন উত্তোলনকারীদের সে গম বিক্রি করতে হয় ১৫-২৫ টাকায়।

 

ভোরের আকাশ/জেএস/

মন্তব্য

Beta version