-->
নতুন রূপে যান্ত্রিক ঢেঁকি

ঢেঁকিতে আধুনিকতার ছোঁয়া

রংপুর প্রতিনিধি
ঢেঁকিতে আধুনিকতার ছোঁয়া
রংপুরের পীরগাছা উপজেলার কান্দিনারচরে ঢেঁকিকাঁড়া চাল ঝাড়ছেন এক গৃহিণী

এক সময় গ্রামের ঘরে ঘরে ছিল ঢেঁকির ব্যবহার। সারা বছর শোনা যেত নারীদের ধান ভাঙানোর ধুপধাপ শব্দ আর গান।

‘ও ধান ভানে রে ঢেঁকিতে পার দিয়া, ঢেঁকি নাচে আমি নাচি হেলিয়া দুলিয়া....’, এই গানের মতোই গ্রামের চিরাচরিত ঢেঁকিতে দলবেঁধে মহিলাদের পাড় দেওয়ার এমন দৃশ্য এখন আর চোখে পড়ে না। প্রযুক্তিগত উন্নয়নের এই যুগে মেশিনের দাপটে বিলুপ্ত হয়ে গেছে ঢেঁকি।

তবে ঢেঁকির ঐতিহ্য ফিরে এসেছে নতুন রূপে। দেশে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিক বৈদ্যুতিক মোটরচালিত ঢেঁকির দেখা মিলেছে রংপুরের পীরগাছা উপজেলার কান্দিনার চরে। প্রযুক্তি ও আধুনিকতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিলুপ্ত প্রায় প্রাচীন ঐতিহ্য ঢেঁকির চল ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, গ্রামের চিরাচরিত ঢেঁকির মতোই মোটরাইজড এই ঢেঁকির মাধ্যমে ধান ভাঙানো হচ্ছে। মোটরচালিত এই ঢেঁকিতে লাগছে না হাতের ছোঁয়া। শুধুমাত্র গর্ত থেকে চাল তুলে ঝেড়ে মোড়কজাত করতে হচ্ছে। সামাজিক সংগঠন ‘স্বপ্ন ছুঁই ইয়ুথ ফাউন্ডেশন’ এর কর্মীরা এই যন্ত্রটি বসিয়েছেন।

কান্দিনার চরের আব্দুল করিম মিয়া বলেন, ‘এক সময় আমাদের বাড়িতে ঢেঁকি ঢুক ঢাক শব্দে মা- বোনরা ঢেঁকিতে ধান ভাঙতো, সেই ঐতিহ্য যেন আবার ফিরে এসেছে।’

তরুণ উদোক্তা মেহেদী হাসান রাব্বি বলেন, ‘দেশে ঢেঁকি ছাঁটা চালের আগ্রহ দিনকে দিন বাড়ছে। আমরা এই ঢেঁকির সাহায্যে বিনা-২০ ও ব্রি-৮৪ এর মতো উচ্চ জিংক সমৃদ্ধ লাল ঢেঁকি ছাঁটা চাল উৎপাদন করবো। দেশের প্রথম বারের মতো এই বাণিজ্যিক ঢেঁকি উদ্ভাবন করেছে ‘ক্যাডসন ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপ।’

মোটরচালিত ঢেঁকিটি উদ্ভাবন করেছে গাজীপুরের ‘ক্যাডসন ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ’। এর মালিক জেমস মার্টিন অধিকারী মুঠোফোনে বলেন, ‘সনাতন ঐতিহ্যকে ধরে রাখার পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আমরা এই ঢেঁকি উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছি। এই ঢেঁকির সাহায্য ১৫ মিনিটে ১০ কেজি এবং ঘণ্টায় এক মন ধান ভাঙানো সম্ভব।’

‘স্বপ্ন ছুঁই ইয়ুথ ফাউন্ডেশন’ এর কোষাধ্যক্ষ মাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘পীরগাছা উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সার্বিক সহযোগিতায় এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।’

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল আলম বলেন, ‘আগে বাংলার ঘরে ঘরে ঢেঁকি ছিল। এখন নেই। আমরা চাই, আগের মতো মানুষ ঢেঁকি ছাঁটা চালের স্বাদ পাক।’

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবার রহমান বলেন, ‘আগেকার ঢেঁকি ছাঁটা চালের স্বাদ-গন্ধ ছিল অতুলনীয়। পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই চালের ভাত হতো বেশ সুস্বাদু। পীরগাছায় এ ধরনের আধুনিক ঢেঁকি আরো স্থাপন করা দরকার।’

মন্তব্য

Beta version