-->

ট্রেনে যাত্রী ভাড়া বাড়ছে ২০ শতাংশ

মো. রেজাউর রহিম
ট্রেনে যাত্রী ভাড়া বাড়ছে  ২০ শতাংশ

মো. রেজাউর রহিম: দেশে ট্রেনে যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভিন্ন রুটে পর্যায়ক্রমে ভাড়া বাড়ানো হবে। এছাড়া ইতোমধ্যে চট্টগ্রামগামী একটি আন্তঃনগর ট্রেনের ভাড়া বাড়ানোর নির্দেশনাও দিয়েছে মন্ত্রণালয়। আর সার্বিকভাবে ট্রেনের যাত্রী ভাড়া ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। রেলওয়ের রাজস্ব আয় বাড়াতে ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

 

তবে সেবার মান না বাড়িয়ে শুধু ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টিকে অযৌক্তিক বলছেন বিশ্লেষকরা। রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম রুটের বিরতিহীন সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনের স্নিগ্ধা (এসি) সিটের ভাড়া ৮০ ও ননএসি টিকিটের ভাড়া ২৫ টাকা বাড়ছে। এ বাড়তি ভাড়া আগামী ২৫ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। শোভন চেয়ার শ্রেণির ৩৮০ টাকার ভাড়া নতুন করে নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০৫ টাকা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) কোচে আসনপ্রতি ভাড়া বেড়েছে ৮০ টাকা। এতে ৬৩০ টাকার ভাড়া হয়েছে ৮০৫ টাকা। এছাড়া ইতোমধ্যে মধ্যে রেলের টিকিট ইস্যুকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সহজ লিমিটেডকে সফটওয়্যারের প্রয়োজনীয় সংশোধনীর জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

 

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ভোরের আকাশকে জানান, মূলত রাজস্ব আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে রেলে যাত্রী ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ঢাকা চট্টগ্রাম রুটের একটি ট্রেনে যাত্রী ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে। তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে দেশের অন্যকিছু রুটেও ভাড়া বাড়ানো হতে পারে। তবে ভাড়া বৃদ্ধি ২০ শতাংশের মধ্যে থাকবে উল্লেখ করেন তিনি।

 

তিনি জানান, যাত্রা পথের দূরত্ব ও সময় একই হলেও চট্টগ্রামগামী দুটি ট্রেনে ভিন্ন ভিন্ন ভাড়ার কারণে যাত্রীদের মধ্যে বিদ্যমান অসন্তোষ দূর করতে এবং রেলওয়ের রাজস্ব আয় বৃদ্ধিকল্পে সুবর্ণ এক্সপ্রেসের ভাড়া সমন্বয় অর্থাৎ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

 

জানা গেছে, ইতোমধ্যে ঢাকা চট্টগ্রাম রুটের সুবর্ণ এক্সপ্রেসের যাত্রী ভাড়া বৃদ্ধির নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গত ৩ জানুয়ারি ভাড়া সমন্বয়ের বিষয়টি অনুমোদন দেয় রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আলমগীর হুছাইন। পরে ১৫ জানুয়ারি রেলওয়ের ট্রাফিক কমার্শিয়াল বিভাগের উপপরিচালক (টিসি) মো. আনসার আলী রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তাকে (সিসিএস) বিরতিহীন সুবর্ণ এক্সপ্রেস ও সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনের ভাড়া সমন্বয়ের জন্য চিঠি দেয়। চিঠিতে আগামী ২৫ জানুয়ারি থেকে সুবর্ণ এক্সপ্রেসের ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি কার্যকর করতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করতে বলা হয়েছে।

 

এদিকে গত বছর আগস্টে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর দেশে বাস ও লঞ্চ ভাড়া বৃদ্ধি পাওয়ার পর রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য ট্রেনের ভাড়াও বাড়ানো হতে পারে বলে বিভিন্ন সময় আভাস দিয়েছেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। রেলমন্ত্রী বলেন, ট্রেন চলে ডিজেল দিয়ে, ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে খরচ বেড়েছে। বাড়তি খরচ সমন্বয় করতে ট্রেনের ভাড়া বাড়তে পারে বলেও আভাস দেন তিনি।

 

বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্র জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চলাচলরত সোনার বাংলা এক্সপ্রেসের ভাড়া এতদিন সুবর্ণ এক্সপ্রেসের চেয়ে বেশি ছিল। দুটি ট্রেনের সুযোগ-সুবিধা এক হলেও ভাড়া ছিল ভিন্ন। এজন্য সোনার বাংলা ট্রেনের এবং সুবর্ণ এক্সপ্রেসের ভাড়া সমান করে নির্ধারণ করা হয়েছে। সোনার বাংলা ট্রেনে চার ধরনের টিকিট বিদ্যমান। এ ট্রেনে বর্তমানে প্রথম শ্রেণির এফ সিটের ভাড়া ৬০৫ টাকা, স্নিগ্ধা সিটের ভাড়া ৭০০ টাকা।

 

এটির সঙ্গে ভ্যাটসহ বর্ধিত ভাড়া দাঁড়িয়েছে ৮০৫ টাকা। এসি চেয়ারের মূল ভাড়া ৭৮৬ টাকা, আর ভ্যাটসহ ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৯০৫ টাকা। তবে শোভন চেয়ার শ্রেণিতে যাত্রীদের ওপর ভ্যাট আরোপ করা হয় না। শোভন চেয়ারে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০৫ টাকা। আর সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনে দুই ধরনের সিট রয়েছে। একটি শোভন চেয়ার, আরেকটি স্নিগ্ধা (এসি) সিট। এ দুটির ভাড়া সোনার বাংলার শোভন চেয়ার ও স্নিগ্ধা সিটের ভাড়ার সমান করা হবে। সেক্ষেত্রে বর্তমানে সুবর্ণ ট্রেনের স্নিগ্ধা সিটের মূল ভাড়া ৬৩০ টাকা। এখন থেকে এ সিটের ভাড়া হবে ভ্যাটসহ ৮০৫ টাকা। অর্থাৎ যাত্রীদের আগামী ২৫ জানুয়ারি থেকে অতিরিক্ত ৮০ টাকা ভাড়া দিতে হবে। শোভন চেয়ারের ভাড়া বর্তমানে ৩৮০ টাকার স্থলে হবে ৪০৫ টাকা।

 

অন্যদিকে বিশ্লেষকদের মতে, যাত্রীসেবার মান না বাড়িয়ে ট্রেনের ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী বলেন, ভাড়া বাড়ানোর আগে জনগণের স্বার্থের দিকে লক্ষ রাখতে হবে। যাত্রীদের ভাড়া না বাড়িয়ে রেল খাতে বিদ্যমান অনিয়ম-দুর্নীত বন্ধ করার পাশাপাশি সেবার মান বাড়াতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। জানা গেছে, ১৯৯৮ সালের ১৪ এপ্রিল দেশে প্রথম বিরতিহীন ট্রেন হিসেবে সুবর্ণ এক্সপ্রেস চালু হয়। রাজধানীর কমলাপুর থেকে রওনা দিয়ে ঢাকা বিমানবন্দর রেলস্টেশনে একটি মাত্র বিরতি দিয়ে ট্রেনটি ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে সরাসরি চলাচল করে।

 

ট্রেনটির বেজ স্টেশন চট্টগ্রাম। পরে ২০১৬ সালের ২৫ জুন ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে দ্বিতীয় বিরতিহীন ট্রেন হিসেবে সোনার বাংলা এক্সপ্রেস চালু হয়। এ রুটের বাইরে এখন পর্যন্ত দেশে আর একটি মাত্র বিরতিহীন ট্রেন চলাচল করে। ২০১৯ সালের ২৫ এপ্রিল ঢাকা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত চালু হয় বনলতা এক্সপ্রেস। উল্লেখ্য, সুবর্ণ এক্সপ্রেস প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করে। আবার ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেয় বিকেল সাড়ে ৪টায়।

 

এ ট্রেনের সাপ্তাহিক বন্ধ সোমবার। সোনার বাংলা এক্সপ্রেস মঙ্গলবার ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৫টায় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছাড়ে এবং ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেয় সকাল ৭টায়। দুটি ট্রেনেরই চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় যাতায়াত করতে সোয়া ৫ ঘণ্টা সময় লাগে। বিরতিহীন হওয়ায় এ দুটি ট্রেনে যাত্রীদের চাপও বেশি থাকে।

 

ভোরের আকাশ/নি  

মন্তব্য

Beta version