-->
বর্ষবরণ

মেট্রোরেল চলাচলে বিঘ্ন বৈদ্যুতিক তারে ফানুস

শহিদুল ইসলাম সাহেদ
মেট্রোরেল চলাচলে বিঘ্ন বৈদ্যুতিক তারে ফানুস

শহিদুল ইসলাম সাহেদ: ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ফানুস ওড়ানোয় স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা থাকলেও রাজধানী জুড়ে আতশবাজি দেখেছে নগরবাসি। এদিকে রাজধানীর খুচরা পাইকারি মার্কেট থেকে শুরু করে ফুটপাত অলিগলিতে প্রকাশ্যে বিক্রি হয়েছে ফানুসসহ আতশবাজি। রাজধানীর আকাশে ফানুসের সংখা বেশি ছিল। সঙ্গে আতশবাজির পরিমাণের কমতি ছিল না। এমনকি মিরপুর এলাকায় একাধিক জায়গায় মেট্রোরেলের বৈদ্যুতিক তারে ফানুস আটকে থাকতে দেখা যায়। এ কারণে রোববার সকাল ৮টা থেকে ১০টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত বন্ধ ছিল মেট্রোরেলের চলাচল।

 

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) সহকারী জনসংযোগ কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম ভুইয়া জানিয়েছেন, বৈদ্যুতিক তারে ফানুস পড়ে থাকায় সকালে বৈদ্যুতিক মেরামতের জন্য মেট্রোরেলের চলাচল বন্ধ ছিল। সকাল ১০টা থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হয়। এর ১০-১৫ মিনিট পরে মেট্রোরেল চলাচল শুরু করে।

 

ফলে প্রশ্ন উঠেছে, থার্টিফার্স্ট নাইটকে কেন্দ্র করে আতশবাজি ও ফানুস বিক্রি বন্ধে ডিএমপির নির্দেশে কতটুকু কার্যকর হয়েছে? রাজধানীতে যেভাবে আতশবাজি হয়েছে, ফানুস ওড়ানো হয়েছে তাতে পুলিশের দেয়া নিষেধাজ্ঞা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। নাকি শুধুই ঘোষণার নজরদারি রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী? যে হারে ফানুস বিক্রি হয়েছে তাতে নিষেধাজ্ঞা সত্তে¡ও রাতে ঢাকার আকাশে বিপুল পরিমাণ ফানুস উড়তে দেখা গেছে।

 

রাজধানীর মিরপুর, কল্যাণপুর, ধানমন্ডি, নিউমার্কেট ও ফার্মগেট এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারি খুচরা দোকান থেকে শুরু করে অলিগলি ফুটপাতে বিক্রি হচ্ছে ফানুস। দরদাম করে টাকা পয়সায় মিলমিশ হলে ফানুস কিনে বাড়ি ফিরছেন শিশুকিশোর, তরুণ-তরুণী এমনকি বয়স্করাও। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বিপুল পরিমাণ ফানুস বিক্রি হয়েছে। বিক্রি হয়েছে আতশবাজিও।

 

এদিকে ফানুস ওড়ানোর ঘটনায় রাজধানীর তুরাগসহ একাধিক থানায় মামলা করেছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। ডিএমপির তুরাগ থানায় মামলা দায়েরের তথ্য নিশ্চিত করেছেন ওসি মওদুদ হাওলাদার। তিনি বলেন, ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের হয়ে নিরাপত্তা কর্মকর্তা মেজর (অব.) কবির তুরাগ থানাসহ বিভিন্ন থানায় জিডি করেছেন। কর্তৃপক্ষ চাইলে পুলিশ এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে।

 

ফায়ার সাভিসের ডিউটি অফিসার রাশিদ বিন খালিদ বলেন, সন্ধ্যার পর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানথেকে একাদিক কল আসে। যে কোন দুর্ঘটনার জন্য আমাদের প্রস্তুতি ছিল। রাজধানীর আলাউদ্দিন রোড, সুত্রাপুর, মিরপুরসহ কুর্মিটোলায় ফানুষ ওড়ানোকে কেন্দ্র করে এই সকল স্থানে আগুন লাগে। চারটি স্থানে আমাদের গারিসহ যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হই।

 

থার্টিফার্স্ট নাইটের আগের রাতে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের পক্ষথেকে ইংরেজি নতুন বছর বরণ করতে থার্টিফার্স্ট নাইটে উন্মুক্ত স্থানে কোনো অনুষ্ঠান না করার পাশাপাশি নগরবাসীকে আতশবাজি,পটকা কিংবা ফানুস ওড়ানো থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ জানানো হলেও বাস্তবে রাজধানী বাসিকে ফানুস ওড়ানো ও আতশবাজি ফুটানো থেকে বিরত থাকতে দেখা যায়নি।

 

চকবাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একেকজন ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ফানুস বিক্রি করেছেন। ফানুস ওড়ানো বৈধ না অবৈধ পুলিশ থেকে কোনো নিষেধাজ্ঞা আছে কিনা, এমন প্রশ্নে তারা বলছেন সরকার কি ব্যবস্থা নিয়েছে জানি না, পুলিশ বলেছে নিষিদ্ধ। কিন্তু যারা আমাদের কাছে সাপ্লাই দেয় যারা বিক্রি করে তাদের কেন ধরা হচ্ছে না। ওখান থেকে বন্ধ হলে তো আমরাও বিক্রি করতে পারবো না।

 

পুলিশ বলছে, ফানুস বিক্রির বিষয়টি তাদের নজরদারিতে ছিল। যারা করছে তারা পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে করছে। রাজধানীর নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী মিজান জানান, আমার কাছে থাকা সব ফানুসের স্টক শেষ। রাজধানীর মিরপুর এক নম্বরের খেলনার দোকানের ব্যবসায়ী বলেন, দেখতেই তো পাচ্ছেন ফানুস বিক্রি করা হচ্ছে। আপনার সামনেই তো অনেকগুলো বিক্রি করলাম লোকজন নিচ্ছে।

 

তবে এ বিষয়ে মিরপুর বিভাগের শাহ আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ফানুস বিক্রির বিষয়টি আমাদের সকল ফোর্সকে নজরদারি বাড়ানোর জন্য বলা হয়েছে। কেউ যেন ফানুস বিক্রি করতে না পারে সে ব্যাপারে আমাদের খোঁজ খবর নেয়া হয়েছে। অভিযান পরিচালনার সময় যেখানে বিক্রির তথ্য পেয়েছি সেখানে অভিযান পরিচালনা করে জব্দ করা হয়। এই নজরদারি চলমান রয়েছে। ফানুসের পাশাপাশি কেউ যেন আতশবাজিও বিক্রি করতে না পারে সে ব্যাপারেও অভিযান ছিল।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version