-->
প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান ভুক্তভোগীরা

উচ্ছেদ আতঙ্কে কামরাঙ্গীরচরের কয়েকশ পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক
উচ্ছেদ আতঙ্কে কামরাঙ্গীরচরের কয়েকশ পরিবার

বুড়িগঙ্গা আদি চ্যানেল উদ্ধারে কাজ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। সরকারি খাল উদ্ধারে নামে সংস্থাটি ব্যক্তিমালিকানাধীন রেকর্ডভুক্ত সম্পত্তি বাড়িরঘর, কারখানা উচ্ছেদ করছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন চরকামরাঙ্গী মৌজার জনগণ।

 

শনিবার জাতীয় প্রসক্লাবে সামনে এক মানববন্ধনে ভুক্তভোগীরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ দাবি জানান।

 

মানববন্ধনে ভুক্তভোগীরা বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা হিসেবে দেশের উন্নয়নে অতন্দ্র প্রহরীর ন্যায় আপনি অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। প্রতিদানে হ্যাট্রিক বিজয় অর্জন করে টানা তৃতীয় মেয়াদে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। আপনার বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণেই বাংলাদেশ এখন বহির্বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি। একের পর এক মেগা প্রকল্প সম্পন্ন করে দেশের অর্থনীতির গতিকে চলমান রাখতে সক্ষম হয়েছেন। এমনকি বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ এবং সাম্প্রতিক রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বজুড়ে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও অসীম সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করে চলেছেন। আপনি কেবল একজন দক্ষ শাসক ও নেতা নন, মমতাময়ী মা। 

 

তারা আরও বলেন, নিজ দেশের নানা সংকট সত্ত্বেও মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে 'মাদার অব হিউম্যানিটি' উপাধি লাভ করেছেন। আজ আমরা সহায় সম্পত্তিসহ সর্বস্ব হারাবার হুমকির মুখে। তাই আপনার শরণাপন্ন হয়েছি। মহাবিপদ থেকে রক্ষায় আপনার সানুগ্রহ হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

 

ভুক্তভোগীরা বলেন, আমরা কামরাঙ্গীরচরের পূর্ব ও পশ্চিম রসুলপুর এলাকার ভুক্তভোগীগণ। নিজস্ব সম্পত্তিতে বংশ পরম্পরায় বসবাস করে আসছি। এসব সম্পত্তি ধারাবাহিকভাবে সিএস, পেটি, এসএ, আরএস এবং মহানগর জরিপে রেকর্ডভুক্ত। এক সময় বর্ষাকালে এসব এলাকা পানিতে নিমজ্জিত থাকত। তবে ঢাকা নগর রক্ষা বাঁধ তৈরির কারণে সে অবস্থা আর নেই। বরং উন্নয়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখানেও ঘনবসতি গড়ে উঠেছে। জমির মালিকদের অনেকেই রাজউক থেকে নকশা অনুমোদন নিয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ কিংবা ধার-দেনা করে বহুতল ভবন নির্মাণ করে বসবাস করে আসছেন। কিন্তু ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)-এর স্বেচ্ছাচারী ও জবরদস্তি মনোভাবের কারণে অনেকেরই আজ পথে বসার উপক্রম হয়েছে।

 

আদি বুড়িগঙ্গা খালে এক সময় স্বাভাবিক পানি প্রবাহ ছিল। বছরের সিংহভাগ সময়ে এ খালে নৌযান চলাচল করেছে। ১৯৮৮ সালে ভয়াবহ বন্যার পর নগর রক্ষা বাঁধ তৈরির পরই সে অবস্থা পাল্টে যায়। মূলতঃ বাঁধ বাণে সম্পৃক্ত তদানীন্তন কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও অর্থলিপ্সার কারণে খালের কিয়দংশ ভরাট করেই বাঁধ নির্মাণ হয়েছিল। তাছাড়া অবৈধ দখলদাররা খাল বন্ধ করে ইচ্ছেমাফিক দখল করে নেয়। এমনকি সরকারি প্রতিষ্ঠানও দখলদারের তালিকায় রয়েছে। অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করে খালে পানি প্রবাহের স্বাভাবিক পথ বয়ে আনতে সরকার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। অথচ একটি কুচক্রী মহল ব্যক্তিমালিকানাধীন বংশ পরম্পরায় ভোগদখলীয় সম্পত্তি জবরদখলের মাধ্যমে সরকারের সেই প্রশংসনীয় উদ্যোগকে কালিমালিপ্ত করতে চাইছে। খাল সংস্কারের নামে গত বছর ক্ষতিপূরণ ছাড়াই রেকর্ডীয় সম্পত্তি থেকে অনেককে উচ্ছেদ করা হয়েছিল। তখন বলা হয়, পরবর্তীতে যদি সিএসভুক্ত জমি সরকারের কাজে লাগে তাহলে তিনগুণ পূরণ দিয়ে তা অধিগ্রহণ করা হবে। অথচ সেটি উপেক্ষা করেই ফের উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে।

 

জমির মালিকরা বলেন, আপনার মহানুভবতার কারণে সারা দেশে গৃহহীনদের আবাসনের ব্যবস্থা হচ্ছে। অথচ আমরা ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ আতংকে দিনাতিপাত করছি। আমরা নিয়মিত জমির খাজনা পরিশোধ করেছি। এমনকি নাগরিক সুবিধা না পেয়েও ২০১২ সাল থেকে সিটি কর্পোরেশনের ধার্যকৃত হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করছি। আমরা উন্নয়নের বিরোধী নই। উন্নয়নের জন্য জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হলে ক্ষতিগ্রস্তদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যাপারে আপনার সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের দুষ্টচক্র আদি বুড়িগঙ্গা খাল উদ্ধারের নামে কোন ক্ষতিপূরণ ছাড়াই রেকর্ডভুক্ত জমি থেকে আমাদের উচ্ছেদের পাঁয়তারা করছে। এরই মধ্যে টার্গেটকৃত জমিতে লাল চিহ্ন দিয়ে যাওয়ায় আতংক বেড়ে গেছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণে আপনার সহায়তা একান্তভাবে কাম্য। উচ্ছেদের প্রয়োজন হলে ক্ষতিগ্রস্তদের নিয়ম অনুযায়ী বাজারদরের তিনগুণ ক্ষতিপূরণ প্রদানের নির্দেশ প্রদানের জন্য আকুল আবেদন জানাচ্ছি।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version