-->

যানজট: মিলছে না মুক্তি

শাহীন রহমান
যানজট: মিলছে না মুক্তি
ফাইল ফটো

ঢাকা: বর্ষা বিদায়ের শেষ সময়ে ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী। সেই সঙ্গে বিদ্যুতের আসা-যাওয়া গরমের ভয়াবহতা যেন আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে যখন নাকাল রাজধানীবাসী, ঠিক সেই সময়ে রাস্তায় বের হয়েই পড়তে হচ্ছে আরও এক ভোগান্তিতে। যার নাম ভয়াবহ যানজট। অবশ্য যান্ত্রিক এই নগরীতে যানজট চিরচেনা হলেও কখনো কখনো তা ধৈর্যসীমার বাইরে চলে যাচ্ছে। সম্প্রতি যানজট এতই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, ১ ঘণ্টার পথ অতিক্রম করতে সময় লাগছে ৪ ঘণ্টারও বেশি। গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

 

গতকাল মঙ্গলবারের শুরু ছিল অন্য দিনের মতোই। কিন্তু বেলা গড়াতেই তা ভিন্ন রূপ ধারণ করে। বেসরকারি চাকরিজীবী সাইফুল্লাহ মাহমুদ বেলা ১১টার কিছু পরে রাজধানীর মিরপুর থেকে বাসে ওঠেন। গন্তব্য তার গুলিস্তান। কিন্তু কল্যাণপুর পৌঁছার পর গাড়ি যেন আর চলে না। তিনি জানান, এমনিতেই ভ্যাপসা গরমে টেকা মুশকিল। তার ওপর এই যানজটের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাসের ভেতরে বসে কাটাতে হচ্ছে। এতে সময় ও কর্মঘণ্টা দুটোই নষ্ট হচ্ছে।

 

শুধু সাইফুল্লা মাহমুদের নয়, মঙ্গলবার বের হওয়া অধিকাংশ মানুষের অভিজ্ঞতা একই। পুরো রাজধানী যেন থমকে ছিল যানজটের কারণে। অনেকে বাধ্য হয়ে হেঁটেই গন্তব্যে রওনা দেন। এতে ভোগান্তি কম পোহাতে হয়নি। প্রচণ্ড গরমে হেঁটে চলাও ছিল সহ্যসীমার বাইরে। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ব্যাপক যানজট লেগেছিল সকাল থেকেই।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যানজট রোধে সরকারিভাবেও তেমন কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে না। সব মিলিয়ে যানজটের কারণে প্রতিদিন জনগণের দুর্ভোগ বাড়ছে। অনেকেই জানান, দিন যত যাচ্ছে, রাজধানীতে যানজটের পরিমাণ ততই বাড়ছে। একদিকে গরম, অন্যদিকে রাস্তায় বের হলে শব্দদূষণ আর যানজটের শিকার হতে হচ্ছে। সরেজমিন দেখা যায়, মিরপুর, কল্যাণপুর, শ্যামলী, ধানমন্ডি, শাহবাগ, পুরান ঢাকা, গুলিস্তান, নিউমার্কেট, আজিমপুর, মৎস্য ভবন মোড়, হাইকোর্টের মোড়, মালিবাগ, শান্তিনগর, রামপুরা, মেরুল বাড্ডা, উত্তর বাড্ডা, মহাখালী, সাতরাস্তা, মিরপুর, তেজগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকায় যানজটে থমকে ছিল গাড়ি। যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ কাজ করলেও কোনোভাবে যানজট কমছে না।

 

দেখা গেছে, মেগা প্রকল্প ছাড়াও রাজধানীর অধিকাংশ রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ি ও মেরামতের কাজ চলছে। এ ছাড়া গর্ত খুঁড়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাইপ বসানোর কাজও চলছে। এ কারণে যানজট বাড়ছে বলে জানিয়েছেন পরিবহন নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক পুলিশ। তারা বলছেন, যানজট নিরসনে আমরা কাজ করছি কিন্তু রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও মেট্রোরেলের কাজ চলমান থাকার কারণে অতিরিক্ত যানজট তৈরি হচ্ছে। এখন মানুষ কেনাকাটার জন্য রাস্তায় বের হচ্ছে, যার জন্য যানজট আরো বেশি হচ্ছে।

 

মিরপুরের যাত্রী মামুন শেখ বলেন, অসহনীয় যানজট রাস্তায়, যানবাহন থেকে হাঁটার গতি বেশি। তাই হেঁটেই নিজ গন্তব্যে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। তিনি বলেন, ঢাকায় যানজট কমার কোনো লক্ষণ নেই। সঠিক পরিকল্পনা না নিলে এ শহর যানজটে পরিণত হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যানজট কমানোর পদক্ষেপ নিতে হবে, অন্যথায় স্থবির হয়ে যাবে ঢাকা।

 

যানজট নিয়ে সম্প্রতি বিশ্ব ব্যাংকের রিপোর্ট বলছে, ইতোমধ্যে যানজটের কারণে রাজধানীর গাড়ির গতি ঘণ্টায় ৭ কিলোমিটারে নেমেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই এই গতি ৪ কিলোমিটারে নেমে আসবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্যামে যেসব রাস্তায় আটকে থাকতে হয়, হেঁটে গেলে তার আগেই গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব। অথচ দুর্বিষহ এই যানজটের হাত থেকে রেহাই পেতে রাজধানীতে বড় বড় প্রকল্প নেয়া হয়েছে। মেট্রোরেল ছাড়া অনেক প্রকল্পই বাস্তবায়িত হয়েছে। কিন্তু যানজট থেকে মুক্তি অধরাই রয়ে গেছে।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version