-->
উত্তাল মার্চ

আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহব্বান বঙ্গবন্ধুর

নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহব্বান বঙ্গবন্ধুর

আজ ২০ মার্চ। ১৯৭১ সালের মার্চ মাস বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। যতদিন বাংলা ও বাঙালির অস্তিত্ব থাকবে, শ্রদ্ধার সঙ্গে এই ইতিহাস উচ্চারিত হবে। স্বাধীনতার ইতিহাসে ১৯৭১ সালের মার্চ মাস ছিল উত্তাল ঘটনাবহুল মাস।

 

১ মার্চ হঠাৎ এক হটকারী সিদ্ধান্তে পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক স্বৈরশাসক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করলে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে বাংলার আপামর জনতা। অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এরপর ২৫ মার্চ পর্যন্ত নানান ঘটনার মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে বাংলার স্বাধিকার আন্দোলন রূপ নেয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে।

 

প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ১৫ মার্চ ঢাকায় উড়ে এলেন। ১৬ মার্চ মুজিব-ইয়াহিয়া একান্ত বৈঠক হলো এক ঘণ্টা। ১৭, ১৯ ও ২০ মার্চও দুজনের মধ্যে কথা হয়। তাদের দুজনের সঙ্গেই ছিল নিজ নিজ পরামর্শক টিম। তারা জানাল, কয়েকটি বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, যার ভিত্তিতে প্রেসিডেন্ট একটা ফরমান জারি করবেন।

 

একাত্তরের ২০শে মার্চ ঢাকায় ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট হাউসে বঙ্গবন্ধুর সোয়া দুই ঘণ্টার বৈঠক হয়। আলোচনা শেষে বঙ্গবন্ধু বলেন, কাল আবার বৈঠক হবে। বৈঠক শেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, স্বাধীন দেশের মুক্ত নাগরিক হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য জনগণ যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতেই প্রস্তুত রয়েছে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যেতে সবার প্রতি আহব্বান জানান তিনি।

 

২১ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ২৩ মার্চ প্রতিরোধ দিবসের কর্মসূচি প্রদান ও ২২ মার্চ পত্রিকায় পরিকল্পিত বাংলাদেশের পতাকার মাপ ও বিবরণ প্রকাশ করে। ২৩ মার্চ দেশব্যাপী প্রতিরোধ দিবস পালিত হয়।

 

রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি ভবনসমূহে, বাড়িতে, গাড়িতে কালো পতাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে থাকা বিমানবন্দর ভবন, প্রেসিডেন্ট ভবন ও লাটভবন ছাড়া অন্য কোথাও পাকিস্তানের পতাকা নজরে আসেনি। ওই দিন বঙ্গবন্ধু ‘জয় বাংলা’ বাহিনীর অভিবাদন গ্রহণ করেন। ২৪ মার্চে অনুষ্ঠিত পশ্চিম পাকিস্তানের নেতৃবৃন্দের বৈঠকেও বঙ্গবন্ধু কোনো প্রকার নতি স্বীকার না করার সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করেন।

 

সামরিক জান্তা ইয়াহিয়া বিভিন্ন আলোচনার নামে সময় ক্ষেপণের মাধ্যমে ভুট্টোর সঙ্গে ষড়যন্ত্রে আবদ্ধ হয়ে ২৫ মার্চ কালরাতে ইপিআর, পুলিশসহ সর্বস্তরের নিরস্ত্র জনগণের ওপর ইতিহাসের নির্মম গণহত্যা পরিচালনা করে। মধ্যরাতে তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার করার আগেই বঙ্গবন্ধু ওয়্যারলেস যোগে চট্টগ্রামের শীর্ষ আওয়ামী লীগ নেতা জহুর আহমদ চৌধুরীর কাছে ঘোষিত স্বাধীনতার ঘোষণা প্রেরণ করেন।

 

মরহুম জহুর আহমদ চৌধুরী স্বাধীনতা ঘোষণার একটি কপি এম এ হান্নানকে দেন, যিনি বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাটি বঙ্গানুবাদ করে ২৬ মার্চ দুপুরের পর সর্বপ্রথম চট্টগ্রামের বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র থেকে পাঠ করেন।

 

এরপর স্বাধীনতার ঘোষণাটি সংবাদ আকারে পাঠ করেন বিপ্লবী বেতার কর্মী আবুল কাশেম স্বন্দ্বীপ। পরবর্তী রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদদের আত্মবিসর্জন, দুই লাখ জননী-জায়া-কন্যার সর্বোচ্চ ত্যাগের পটভূমিতে অর্জিত স্বাধীন মাতৃভূমি, যা ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি মুক্তির মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে অর্থবহ পরিপূর্ণতার রূপ পরিগ্রহ করে।

 

বর্তমানে আমাদের মাঝে বঙ্গবন্ধুর কিংবদন্তি মানস দৃশ্যমান না হলেও চিরঞ্জীব-চিরস্মরণীয় বঙ্গবন্ধুর অস্তিত্ব-নির্দেশনায় বাংলাদেশ সব ক্ষেত্রে বিশ্বপরিমন্ডলে অপরাজিত থাকবেই এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করা মোটেও অত্যুক্তি নয়।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version