-->

ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় চেকপোস্ট বসানো হয়

নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় চেকপোস্ট বসানো হয়

বাংলার স্বাধীনতাপ্রিয় মানুষগুলোর জন্য ১৯৭১ সালের প্রতিটি দিন আলাদা আলাদা গুরুত্ব বহন করে। প্রতিদিনই ঘটছিল নতুন নতুন ঘটনা। ১৪ মার্চ ছিল তেমন একটি দিন।

 

এদিন দেশ থেকে সম্পদ পাচার প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় চেকপোস্ট বসানো হয়। স্বাধীনতার প্রশ্নে শিল্পী-সাহিত্যিক-সাংবাদিকদের সোচ্চার ভ‚মিকা আরো জোরদার হয়।

 

ঢাকার দৈনিক সংবাদপত্রগুলোতে ‘আর সময় নাই’ শিরোনামে অভিন্ন সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়। এতে আবেদন জানানো হয়, ‘আমরা ঢাকার সংবাদপত্রসমূহ এক বাক্যে বলতে চাই, জাতি আজ চরমতর সংকটে নিপতিত।

 

জনগণই দেশের সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। কী ধরনের সরকার কায়েম হবে তা নির্ধারণের ক্ষমতার অধিকারী জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই।’

 

এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে শুরু হওয়া অসহযোগ আন্দোলনে জনতার ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভ নানা হুমকির মুখেও অব্যাহত থাকে। সারা দেশ তো বটে, ঢাকা শহরের প্রতিটি মুহূর্ত ছিল মিছিল-মিটিংয়ে উত্তাল।

 

১১৫ নম্বর সামরিক বিধি জারির প্রতিবাদে দেশ রক্ষা বিভাগের বেসামরিক বাঙালি কর্মচারীরা ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।

 

বঙ্গবন্ধু ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়ের কর্মসূচির শেষ দিন ছিল ১৪ মার্চ। এই দিনে বঙ্গবন্ধু এক বিবৃতির মাধ্যমে অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহত রাখার জন্য ৩৫টি নির্দেশনা জারি করেন। এই নির্দেশনার মাধ্যমে মূলত পূর্ব পাকিস্তানের শাসনভার তিনি গ্রহণ করলেন।

 

বিবৃতিতে তিনি বলেন, আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধররা যাতে স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে স্বাধীন হয়ে ও মর্যাদার সঙ্গে বাস করতে পারে, তার নিরাপত্তা বিধান করার জন্য আমরা প্রত্যেকে প্রয়োজন হলে মরতেও কৃতসংকল্প।

 

যেকোনো ত্যাগের জন্য তৈরি থাকতে হবে এবং আমাদের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ করা হলে সম্ভাব্য সর্বোপায়ে তা প্রতিহত করার জন্য জনসাধারণের প্রস্তুত থাকতে হবে।

 

পাকিস্তানের ন্যাপপ্রধান খান ওয়ালী খান বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার বাসভবনে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে বঙ্গবন্ধু সাংবাদিকদের বলেন, যত দিন জনগণের অধিকার আদায় না হবে, তত দিন আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।’

 

সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তরে ন্যাপ নেতা ওয়ালী খান বলেন, ‘জাতীয় পরিষদই হচ্ছে শাসনতান্ত্রিক সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা ও তার সমাধানের উপযুক্ত স্থান।

 

আগে থেকেই শিল্পী-সাহিত্যিকরা স্বাধীনতার প্রশ্নে সোচ্চার ছিলেন। নেমেও এসেছেন রাজপথে। স্বাধীনতা আন্দোলনের লক্ষ্যে এবার লেখক-শিল্পীরা ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম গঠন করলেন। আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে কবি-সাহিত্যিকরা গঠন করলেন ‘লেখক সংগ্রাম শিবির’।

 

বাংলা একাডেমিতে অধ্যাপক আহমদ শরীফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জরুরি সভায় একটি কমিটি গঠন করা হয়। কবি হাসান হাফিজুর রহমানকে আহব্বায়ক করে গঠিত কমিটির সদস্যরা হলেন সিকান্দার আবু জাফর, আহমদ শরীফ, শওকত ওসমান, শামসুর রাহমান, বদরুদ্দীন উমর, রণেশ দাশগুপ্ত, সাইয়িদ আতীকুল্লাহ, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, রোকনুজ্জামান খান, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, সুফিয়া কামাল, জহির রায়হান প্রমুখ।

 

এদিন বাংলা জাতীয় লীগ নেতা আতাউর রহমান খান বঙ্গবন্ধুর প্রতি অস্থায়ী সরকার গঠন করার দাবি জানান।

 

পাকিস্তানের কারাচির নিশতার পার্কে আয়োজিত জনসভায় বক্তৃতাকালে পিপিপি নেতা জুলফিকার আলি ভুট্টো বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের দাবি মোতাবেক পার্লামেন্টের বাইরে সংবিধানসংক্রান্ত সমঝোতা ছাড়া ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হলে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে পৃথকভাবে দুটি সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হোক।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version