-->

বেসামাল পাকিস্তানের সামরিক প্রশাসন

নিজস্ব প্রতিবেদক
বেসামাল পাকিস্তানের সামরিক প্রশাসন

অন্যান্য দিনের মতো ১৯৭১ সালের ১৩ মার্চ দিনটি ছিল ঘটনাবহুল এবং গুরুত্বপূর্ণ। লাগাতার আন্দোলনে বেসামাল পাকিস্তানের সামরিক প্রশাসন। এক সামরিক আদেশ জারির মাধ্যমে অসহযোগ আন্দোলনে সমর্থন জানানো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কঠোর হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।

 

১১৫ নম্বর সামরিক বিধি জারি করে প্রতিরক্ষা বিভাগের বেতনভুক্ত সব কর্মচারীকে অবিলম্বে কাজে যোগদানের নির্দেশ দেয়া হয়।

 

নির্দেশে বলা হয়, ১৫ মার্চ সকাল ১০টার মধ্যে কাজে যোগদানে ব্যর্থ হলে চাকরিচ্যুত ও পলাতক ঘোষণা করে সামরিক আদালতে বিচার করা হবে। নির্দেশ অমান্যকারীদের সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদন্ড দেয়া হবে। সামরিক প্রশাসনের এ নির্দেশ জারির পরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিবৃতি দিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

 

বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘যখন আমরা সামরিক শাসন প্রত্যাহারের জন্য বাংলার জনগণের প্রচুর দাবির কথা ঘোষণা করেছি, ঠিক তখন নতুন করে এ ধরনের সামরিক নির্দেশ জারি পক্ষান্তরে জনসাধারণকে উসকানি দেওয়ার শামিল। যারা এ ধরনের সামরিক আদেশ জারি করেছেন, তাদের এ বাস্তব সত্যটি উপলব্ধি করা উচিত যে এ ধরনের ভীতি প্রদর্শনের কাছে নতি স্বীকার না করার দৃঢ়সংকল্পে জনতা আজ ঐক্যবদ্ধ।

 

যেকোনো ভীতি প্রদর্শন সত্তে¡ও জনতার সংগ্রাম চলবেই। কারণ জনতা জানে যে ঐক্যবদ্ধ মানুষের সামনে কোনো শক্তিই টিকতে পারে না।’ ন্যাপ প্রধান মওলানা ভাসানীও সোচ্চার স্বাধীনতার প্রশ্নে। ভৈরবে অনুষ্ঠিত জনসভায় ভাসানী বলেন, ‘ভুট্টোর উচিত পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করা। আমরা আমাদের শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করব। বাঙালিরা আর শাসিত হবে না। ’

 

পাকিস্তান ন্যাপের সভাপতি খান আবদুল ওয়ালী খান ও ন্যাপ নেতা গাউস বক্স বেজেঞ্জো সকালে করাচি থেকে বিমানে ঢাকায় আসেন। ঢাকা বিমানবন্দরে ন্যাপপ্রধান বলেন, ‘বর্তমান সংকট উত্তরণের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আলোচনার জন্য আমি খোলা মনে ঢাকায় এসেছি।

 

সামরিক শাসন প্রত্যাহার ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রশ্নে আমি শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে একমত।’ প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদিন ও সাবেক জাতীয় পরিষদ সদস্য আবদুল হাকিম এদিন পাকিস্তান সরকার প্রদত্ত খেতাব ও পদক বর্জন করেন।

 

চট্টগ্রামে বেগম উমরতুল ফজলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক নারী সমাবেশে বাংলাদেশের জনগণের পরিপূর্ণ মুক্তি অর্জন না হওয়া পর্যন্ত বিলাসদ্রব্য বর্জন ও কালোব্যাজ ধারণের জন্য সবার প্রতি আহব্বান জানানো হয়। বিদেশি নাগরিকদের ঢাকা ত্যাগ অব্যাহত থাকে।

 

ঢাকায় জাতিসংঘ এবং পশ্চিম জার্মানি দূতাবাসের কর্মচারী ও তাদের পরিবারবর্গসহ ইতালি, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডার ২৬৫ জন নাগরিক বিশেষ বিমানে পূর্ব পাকিস্তান ত্যাগ করেন।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version