-->

প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ
প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: একাত্তরের মার্চে অগ্নিঝরা দিনগুলো যতই এগোচ্ছিল, বাঙালির অসহযোগ আন্দোলন তীব্রতর হচ্ছিল। ১২ মার্চও ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালি তখন মুক্তির চেতনায় উজ্জীবিত। নির্বাচনে জয়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবির সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিকরাও তখন কণ্ঠ মেলাতে শুরু করেছেন।

 

প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের জন্য খাদ্যবোঝাই মার্কিন জাহাজের গতি বদলে করাচি পাঠানোয় উৎকণ্ঠা ও নিন্দা জানান।

 

এদিন জাতীয় পরিষদ সদস্য মোহাম্মদ জহিরউদ্দিন পাকিস্তান সরকারের দেয়া খেতাব বর্জন করেন। পূর্ব বাংলার চলচ্চিত্র প্রদর্শকরা বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে ঢাকাসহ সারা দেশে অনির্দিষ্টকাল প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন। তারা আওয়ামী লীগের সাহায্য তহবিলে ১৩ হাজার ২৫০ টাকা অনুদান দেন।

 

অন্যদিকে রাওয়ালপিন্ডিতে এক সরকারি ঘোষণায় ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসের নির্ধারিত সশস্ত্র বাহিনীর কুচকাওয়াজ, খেতাব বিতরণ ও অন্যান্য অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়। বগুড়া জেলখানা ভেঙে এদিন ২৭ জন কয়েদি পালিয়ে যান। কারারক্ষীদের গুলিতে ১ কয়েদি নিহত ও ১৫ জন আহত হন।

 

অব্যাহত আন্দোলনে সরকারি-আধাসরকারি অফিসের কর্মচারীরা কর্মস্থল বর্জন করেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালা, সরকারি ও বেসরকারি ভবন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসগৃহ ও যানবাহনে কালো পতাকা উড়তে থাকে।

 

এদিকে দৈনিক পাকিস্তান এদিন এক খবরে জানায়, বাঙালি সিএসপি কর্মকর্তারা চলমান আন্দোলনের সমর্থনে মিছিল করেছেন। আওয়ামী লীগের তহবিলে এক দিনের বেতন অনুদান দিয়েছেন তারা। এদিন লাহোরে এক সংবাদ সম্মেলনে গণঐক্য আন্দোলনের প্রধান এয়ার মার্শাল (অব.) আসগর খান বলেন, পূর্বাঞ্চলের জনসাধারণ সমান অধিকার নিয়ে থাকতে চায়, পশ্চিমাঞ্চলের দাস হিসেবে নয়।

 

পাকিস্তানকে রক্ষা করার একটি মাত্র পথ খোলা। আর তা হচ্ছে শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর।

 

অন্যদিকে ময়মনসিংহে এক জনসভায় আবদুল হামিদ খান ভাসানী বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতি তার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমি জানি শেখ মুজিবুর রহমান কখনোই বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারেন না। আপনারা শেখ মুজিবের ওপর সম্পূর্ণ ভরসা রাখুন।’

 

সরকারের আদেশ অমান্য করে আন্দোলনের নির্দেশনা অনুুসরণ করে চলেছেন পূর্ব পাকিস্তানের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। প্রতিষ্ঠানগুলোতে উড়ছে বাংলার মানচিত্রখচিত লাল-হলুদ-সবুজ পতাকা। সঙ্গে উড়ছে প্রতিবাদের কালো পতাকাও। শুধু পূর্ব পাকিস্তান নয়, বহির্বিশ্বেও অসহযোগ আন্দোলন ব্যাপক প্রচার পায়।

 

সেদিনের একটি চিত্র পাওয়া যায় কবি সুফিয়া কামালের দিনলিপি থেকে। ‘একাত্তরের ডায়েরী’তে তিনি লিখেছেন, ‘ঢাকার অবস্থা স্বাভাবিক। মিছিল চলছে সারা দিন-রাত। কিন্তু এই স্বাভাবিকতাই এখন অস্বাভাবিক লাগছে। ঝড়ের আগের স্তব্ধতা নয়তো। টিক্কা খান এত অবহেলা-লাঞ্ছনা-অপমান নির্বিকারে সহ্য করে যাচ্ছে, আশ্চর্যত!’

 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে স্বাধীনতা আন্দোলনের লক্ষ্যে সংগ্রাম পরিষদ গঠনের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশনার কথা স্মরণ করে প্রদেশের প্রতিটি ইউনিয়নে সংগ্রাম কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয় আওয়ামী লীগ। সুফিয়া কামালের সভাপতিত্বে মহিলা পরিষদের এক সভায়ও পাড়ায় পাড়ায় মহিলা সংগ্রাম পরিষদ গঠনের আহব্বান জানানো হয়।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version