-->
কবিগুরুর ১৬১তম জন্মদিন আজ

‘নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে...’

রাজন ভট্টাচার্য
‘নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে...’
আজ পঁচিশে বৈশাখ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্মবার্ষিকী।

‘নয়ন তোমারে পায় না দেখিতেরয়েছ নয়নে নয়নে,হৃদয় তোমারে পায় না জানিতেহৃদয়ে রয়েছ গোপনে।বাসনা বসে মন অবিরত,ধায় দশ দিশে পাগলের মতো।স্থির আঁখি তুমি ক্ষরণে শততজাগিছ শয়নে স্বপনে...।’

স্রষ্টাকে উদ্দেশ্য করেই ‘নয়নে তোমারে পায় না দেখিতে’ এই কবিতাটি লিখেছিলেন বিশ্বকবি বরীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তার লেখা জনপ্রিয় বা পাঠক নন্দিত কবিতাগুলোর এটি একটি। তার প্রকাশিত মৌলিক কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ৫২টি। লিখেছেন প্রায় দুই হাজার গান। কবিতা ও গান ছাড়াও তিনি ১৩টি উপন্যাস, ৯৫টি ছোটগল্প, ৩৬টি প্রবন্ধ ও গদ্যগ্রন্থ এবং ৩৮টি নাটক রচনা করেছিলেন।

আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় তার ‘অভিলাষ’ কবিতাটি প্রকাশিত হয়।

আজ পঁচিশে বৈশাখ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্মবার্ষিকী। ১২৬৮ বঙ্গাব্দের এ দিনে কলকাতায় জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন পাঁচ সন্তানের এই জনক।যদিও জন্মদিনের আড়ম্বর নিয়ে কবি নিজেই ১৩৪৩ সালে প্রবাসী পত্রিকায় লিখেছিলেন, ‘খ্যাতির কলবরমুখর প্রাঙ্গণে আমার জন্মদিনের যে আসন পাতা রয়েছে, সেখানে স্থান নিতে আমার মন যায় না। আজ আমার প্রয়োজন স্তব্ধতায় শান্তিতে।’ জন্মদিনেই কবি মৃত্যুচিন্তাকেই প্রাধান্য দিয়েছিলেন।

গত দুই বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে কবির জন্মদিন উপলক্ষে তেমন কোনো আয়োজন হয়নি। এবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় সাড়ম্বরে কবিগুরুর জন্মদিন পালনের আয়োজন করা হয়েছে। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

কুষ্টিয়ার শিলাইদহে আজ রোববার তৃতীয় বারের মতো বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্মবার্ষিকী জাতীয় পর্যায়ে উদযাপন হতে যাচ্ছে। করোনা সংকটের কারণে গত দুই বছর উদযাপন করা হয়নি রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকী। উৎসব সফল করতে কুঠিবাড়ী ও তার আঙিনাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে।

প্রত্মতত্ব অধিদপ্তর, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের আয়োজনে রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা, সংগীতানুষ্ঠান, কবিতা আবৃত্তিসহ তিন দিনব্যাপী উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। আজ দুপুর আড়াইটায় প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

রবীন্দ্রনাথের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় কেটেছে শিলাইদহে তাই এখানকার গুরুত্ব অনেক। নতুন রং, বাড়ির আঙিনায় বাগানকে আগাছা কেটে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। ভেতরের আসবাবপত্রে লাগানো হয়েছে নতুন রঙের আঁচড়।

সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ হোসেন এমপির সভাপতিত্বে কুষ্টিয়ার শিলাইদহ কুঠিবাড়ীর রবীন্দ্র মঞ্চে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর, স্মারক বক্তব্য রাখবেন প্রফেসর সনৎ কুমার সাহা।

প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমি রবীন্দ্র সংসদসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের রবীন্দ্রনাথের লেখা গান, কবিতা ও নাটক নিয়ে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। কুঠিবাড়ীর বাইরে বসেছে বিশাল জায়গা জুড়ে গ্রামীণ মেলা। মেলায় নাগরদোলা, চরকি, গরম জিলাপি, রবীন্দ্রনাথের ছবি সংবলিত ক্যাপ, টি-শার্টসহ হরেক রকমের পসরা নিয়ে বসেছেন দোকানিরা।

‘যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে, এ বিখ্যাত সংগীতসহ ২ হাজার ২৩২টি গানের অধিকাংশই কুষ্টিয়ার এ শিলাইদহে বসে লিখেছেন কবি গুরু। এখান থেকেই গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য ১৯১৩ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম বাঙালি হিসেবে সাহিত্যে অর্জন করেছেন নোবেল পুরস্কার।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বসাহিত্যের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ প্রতিভাদের একজন। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশে যার অবদান অসামান্য। বাল্যকালে প্রথাগত বিদ্যালয়-শিক্ষা তিনি গ্রহণ করেননি; গৃহশিক্ষক রেখে বাড়িতেই তার শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

১৮৭৮ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ প্রথমবার ইংল্যান্ডে যান। প্রায় দেড় বছর কাটিয়ে ১৮৮০ সালে কোনো ডিগ্রি না নিয়ে দেশে ফিরে আসেন। ১৮৮৩ সালের ভবতারিণীর সঙ্গে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিবাহিত জীবনে ভবতারিণীর নামকরণ হয়েছিল মৃণালিনী দেবী। জীবনের পাশাপাশি চলতে থাকে তার সাহিত্যচর্চা। ১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে নদিয়া, পাবনা, রাজশাহী ও উড়িষ্যার জমিদারি তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ। কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে তিনি দীর্ঘসময় পার করেন।

১৯০১ সালে রবীন্দ্রনাথ সপরিবারে শিলাইদহ ছেড়ে চলে আসেন বীরভূম জেলার বোলপুর শহরের উপকণ্ঠে শান্তিনিকেতনে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পৌঁছে দিয়েছেন বিকাশের চূড়ান্ত সোপানে। বাংলা ভাষার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথকে গুরুদেব, কবিগুরু ও বিশ্বকবি উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মৃত্যু নিয়ে এক জায়গায় লিখেছেন, ‘মৃত্যু দিয়ে যে প্রাণের মূল্য দিতে হয়/ সে প্রাণ অমৃতলোকে/মৃত্যুকে করে জয়।’ অনবদ্য সৃষ্টির মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালির মণিকোঠায় ঠাঁই নিয়েছেন। কিন্তু মানব জীবনপথের যে পরিসমাপ্তি মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সেটাকে বরণ করেছেন কবি।

১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে বাংলা সাহিত্য ও কাব্যগীতির শ্রেষ্ঠ রূপকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ৮০ বছর বয়সে পরলোকগমন করেন।

মন্তব্য

Beta version