পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনিশ্চয়তা দূর করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক
পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনিশ্চয়তা দূর করুন

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিপুল সংখ্যক মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এসব প্রকল্প হাতে নেওয়ার সময় বলা হয়েছিল - অনেক লাভ হবে; অনেক উপকার হবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে উল্টো চিত্র। মেগা প্রকল্পগুলোর প্রায় সবই এখন গলার কাঁটা হয়ে গেছে। কিছু প্রকল্প চালু হয়ে যাওয়ার পরও আশানুরূপ লাভ পাওয়া যাচ্ছে না। উদাহরণ হিসেবে কর্ণফুলী টানেলের কথাই বলা যাক। এই প্রকল্প থেকে পরিচালন ব্যয়ই উঠছে না। এই প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ করতে হবে সরকারের গাঁট থেকে। এর চাপ পড়বে কিন্তু জনগণের ঘাড়েই। আর অনেক মেগা প্রকল্পের কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে তা সরকার বলতে পারছে না। এর মধ্যে একটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল প্রকল্প রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র।

গত মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, গ্রিড লাইন নির্মাণে কচ্ছপগতি। পিছিয়ে যাচ্ছে উৎপাদনের সময়সীমা। আটকে রয়েছে ঋণ পরিশোধও। আগেই মাত্রাতিরিক্ত খরচ, পরিচালনা, নিয়োগ, পদোন্নতিসহ নানা অনিয়মে প্রশ্নবিদ্ধ পাবনার ঈশ্বরদী ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প’। এখন রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

রাশিয়ার কারিগরি ও আর্থিক সহযোগিতায় এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১১ সালে। চূড়ান্ত হস্তান্তরের সময় ২০২৫ সালের ১৭ অক্টোবর ছিল। কিন্তু এর আগেই গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৭ সাল করা হয়। দুই ইউনিটের প্রকল্প বাস্তবায়নে ১ হাজার ৩২০ কোটি ডলার ব্যয় ধরা হয়। যার ৯০ শতাংশ ঋণ দিচ্ছে রাশিয়া। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কাজে ব্যয় হবে আরও ২০০ কোটি ডলার।

২০১৭ সালের এপ্রিলে প্রকল্পে যুক্ত হয় ভারত। বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের সহযোগিতা চুক্তি হয়। ওই বছরের ৩০ নভেম্বর প্রথম ইউনিটের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্প্রতি এই প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানার বিরুদ্ধে। দুর্নীতি ও সময়ক্ষেপণের কারণে প্রকল্পটির ব্যয় বেড়েছে হিসাবের বাইরে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এশিয়ার সবচেয়ে ব্যয়বহুল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এর মধ্যে প্রকল্পের জন্য ভারতের সঙ্গেও সহযোগিতা চুক্তিও জটিলতায় রূপ নিয়েছে। চুক্তি অনুসারে নির্মাণ শেষে রূপপুর প্রকল্প পরিচালনার দায়িত্ব ভারতীয় বিশেষজ্ঞদের দেয়ার কথা। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের এ চুক্তি নিয়ে আপত্তি রয়েছে খাত-সংশ্লিষ্টদের। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর ভারতের সঙ্গেও বাংলাদেশের সম্পর্ক অবনতি হয়েছে। বর্তমানে প্রকল্প বাবদ বাংলাদেশের কাছে রাশিয়ার পাওনা প্রায় ৮০০ কোটি ডলার। সেই ঋণ পরিশোধ নিয়েও জটিলতা দেখা দিয়েছে। সব মিলিয়ে প্রকল্পটির কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে তা নিয়ে যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে তা সত্যিই জটিল।

কিন্তু আমরা চাই, যে করেই হোক রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ দ্রুত শেষ হোক। আমাদের দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু হওয়া খুব জরুরি। বর্তমানে গ্যাস সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটছে। তার প্রভাব পড়ছে বাসাবাড়িসহ শিল্প-কারখানাগুলোতে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত আমাদের বিদ্যুৎ চাহিদা মিটবে না। হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের এত বড় প্রকল্পটি অনিশ্চয়তার মধ্যে পতিত হলে আমাদের জন্য তা হবে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। তাই বর্তমান সরকার সর্বোচ্চ মনোযোগের সঙ্গে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দিকে দৃষ্টি দিক। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ঘিরে যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে তা শিগগির দূর করুন।

মন্তব্য