পুলিশের টহল হোক বাস্তবে

নিজস্ব প্রতিবেদক
পুলিশের টহল হোক বাস্তবে

গণঅভ্যুত্থানের কয়েকদিন আগে থেকেই আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে। আক্রান্ত হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। প্রবল গণআন্দোলনে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর দেশের সিংহভাগ থানা আক্রমণ করা হয়। পুলিশের ৪৪ সদস্যও খুন হয়। এরপর থেকে এক ধরনের ট্রমার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। গত ৫ মাসে খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি বেড়েছে। দাগি অপরাধী হিসেবে যারা চিহ্নিত, তারা কেবল প্রকাশ্যে ঘুরছে না, তারা খুনাখুনিতেও জড়াচ্ছে। তাদের নামে অসংখ্য মামলা থাকা সত্ত্বেও পুলিশ তাদের কিছু বলছে না এবং অনেক আসামি জেলখানা থেকে ছাড়া পেয়ে নতুন নতুন অপরাধে জড়াচ্ছে। এরই মধ্যে জানা গেল, পুলিশের তল্লাশি, টহল কাগজপত্রেই; বাস্তবে নেই তার যথাযথ প্রয়োগ। গত রোববার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, রাতে ঢাকার রাস্তায় পুলিশ যেন অমাবস্যার চাঁদ। তাদের তল্লাশিচৌকি ও টহল দল কাগজ-কলমে রয়েছে। সড়কে তাদের দেখা মেলে খুবই কম। ওদিকে ছিনতাইয়ের আতঙ্কে বাস করছেন নগরবাসী। এমন খবর দেশবাসীর জন্য উদ্বেগজনক। জনগণ তাহলে কার ওপর ভরসা করবে? ছিনতাই-আতঙ্কে অনেকে এখন সন্ধ্যার রাস্তায় বেরোতে ভয় পান। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) আটটি বিভাগ থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো তথ্য বলছে, রাজধানীতে দিন ও রাত মিলিয়ে এক দিনে পুলিশের অন্তত ৫০০ থেকে ৫১০টি টহল দল কাজ করে। এর মধ্যে রাতে টহল দল থাকে অন্তত ২৫০টি। টহল দলগুলো এক দিনে ১২০টির (দিন ও রাত) মতো তল্লাশিচৌকি (চেকপোস্ট) পরিচালনা করে। বেশি পরিচালনা করা হয় রাতে। কিন্তু ঢাকা শহরে রাত ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত অন্তত ৭০ কিলোমিটার ঘুরে সাংবাদিকরা দেখেছেন সেই সময়ে শুধু একটি জায়গায় (বাসাবো) টহল পুলিশ দেখা গেছে। শুধু গুলশানে প্রবেশের ক্ষেত্রে দুটি তল্লাশিচৌকি বা চেকপোস্টের পার্র্শ্ববর্তী পুলিশ বক্সে পুলিশ সদস্যের অবস্থান করতে দেখা গেছে। অথচ তাদের সড়কে অবস্থান নিয়ে তল্লাশিচৌকি পরিচালনা করার কথা। দুই জায়গায় (গুলশান ও মোহাম্মদপুর) পুলিশের দুটি টহল গাড়ি থামানো অবস্থায় দেখা গেছে; কিন্তু সেই গাড়িতে বা আশপাশে পুলিশ সদস্যদের দেখা যায়নি। বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারাও বলেছেন, রাতে ঢাকার সড়কে পুলিশের উপস্থিতি অনেক কম দেখা যায়। এমন পরিস্থিতিতে ২১ জানুয়ারি রাতে ঢাকায় কুপিয়ে জখম করে দুটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এদিন রাত পৌনে ১২টায় বাড্ডায় দুজনকে কুপিয়ে টাকা ও মোবাইলফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এর আগে রাত পৌনে ৯টায় গুলশানে মানি এক্সচেঞ্জ (বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়) ব্যবসায়ীসহ দুজনকে কুপিয়ে টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর হাজারীবাগে স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে গুলি করে ৭০ ভরি স্বর্ণ ও ৪ লাখ টাকা লুট করার ঘটনা ঘটে। তিন ঘটনাতেই অপরাধীরা নিরাপদে পালিয়ে যায়। এসব অপরাধের দায়ভার কার? পুলিশ কোনোভাবেই এই গাফিলতির দায়ভার এড়িয়ে যেতে পারে না এবং এর জন্য অবশ্যই পুলিশকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারকেও এ জন্য জনগণের সম্মুখে জবাবদিহি দিতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেখা যাচ্ছে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক। সমাজে নানা ধরনের অপরাধ বেড়েই চলেছে। এখন খোলাখুলিই জানা গেল আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশের গাফিলতি আছে। সম্প্রতি পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার বাহিনীর পোশাকের রং পরিবর্তন করে নতুন পোশাকের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে অন্তর্বর্তী সরকার; কিন্তু পোশাক পরিবর্তন হলেই যে তাদের দায়িত্ববোধ বাড়বেÑ এমন কোনো নজির দেখা যায়নি। রাতে রাজধানী শহরের টহল, তল্লাশি ফাঁকি দেওয়া অত্যন্ত মারাত্মক একটি অপরাধ। আমরা চাই পুলিশ তাদের টহল, তল্লাশির কাজে আরও দায়িত্ববোধের পরিচয় দিক। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীল কাজে যারা অবহেলা প্রদর্শন করেছেন, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা হোক।

মন্তব্য