-->
সম্পাদকীয়

ভূমিকম্প নিয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও আমাদের প্রস্তুতি

ভূমিকম্প নিয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও আমাদের প্রস্তুতি

বাংলাদেশে বড় মাত্রার ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। সাম্প্রতিক কালে বড় মাত্রার ভূমিকম্প না হলেও ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। গত শনিবার সকালে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল।

 

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের তথ্য অনুসারে, ভূমিকম্পের উৎপত্তি লক্ষীপুরের রামগঞ্জ উপজেলা থেকে ৮ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব-উত্তরে। আর এর গভীরতা ছিল ১০ কিলোমিটার। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৬।

 

রাজধানীর বাইরে রায়পুরা, ভোলা, খুলনা, কোটালীপাড়া, চট্টগ্রাম, দেবীদ্বার, ঝালকাঠি, বরগুনা, রাজশাহী, সিলেট, রংপুর, চুয়াডাঙ্গা, নোয়াখালী, কুষ্টিয়ায় তীব্র ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। তবে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তবে এই ভূমিকম্প আমাদের জন্য অশনিসংকেত।

 

এর আগে ২০২১ থেকে চলতি বছরের ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে অনুভূত হওয়া ভূমিকম্পগুলোর মধ্যে ১৭টি ভূমিকম্পের উৎপত্তি বাংলাদেশে। এর মধ্যে আটটি ভূমিকম্পেরই উৎপত্তি দেশের অভ্যন্তরে হয়েছে। ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের ভূমিকম্প হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে ৩ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। ৫ মে ঢাকা থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে দোহারে উৎপত্তি হওয়া ৪ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্পটি বেশ আতঙ্ক তৈরি করে মানুষের মধ্যে।

 

একই মাসের ১৭ তারিখে ৩ দশমিক ৩ মাত্রার আরেকটি ভূকম্পন অনুভূত হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ১২৫ কিলোমিটার দূরে নেত্রকোনায়। বাংলাদেশের দুদিকের ভূগঠনে শক্তিশালী ভূমিকম্পের শক্তি জমা হয়েছে। এর একটা হচ্ছে উত্তর-পূর্ব কোণে সিলেট অঞ্চলে ডাউকি ফল্টে, আরেকটা হচ্ছে পূর্বে চিটাগং ত্রিপুরা বেল্টে পাহাড়ি অঞ্চলে।

 

এখানে দুটি বড় ধরনের ভূমিকম্প বাংলাদেশের দ্বারপ্রান্তে অবস্থান করছে। উত্তর প্রান্তে যেটা ডাউকি ফল্ট, এখানে সংকোচনের হার হচ্ছে প্রতি ১০০ বছরে এক মিটার। গত ৫০০-৬০০ বছরে বড় ধরনের ভূমিকম্পের কোনো রেকর্ড নেই। তার মানে পাঁচ-ছয় মিটার চ্যুতি ঘটানোর মতো শক্তি অর্জন করেছে। যদি রিখটার স্কেলে প্রকাশ করা হয় তাহলে এটা ৭ দশমিক ৫ থেকে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প সৃষ্টি করতে পারে।

 

আর এখান থেকে ঢাকা শহর হচ্ছে ১৫০ কিলোমিটার। যে কোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানবে। রাজধানী ঢাকার আশপাশে বড় মাত্রার ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে ঢাকা মহানগরীর। ঢাকার মধ্যে বড় ভূমিকম্প সৃষ্টির মতো ভূতাত্ত্বিক অবস্থা না থাকলেও সিলেট ও চট্টগ্রামে শক্তিশালী ভূমিকম্প হলে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে রাজধানী ঢাকাও।

 

এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় কতটা প্রস্তুত বাংলাদেশ- প্রশ্ন সামনে আসছে। ভূমিকম্প এমন এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যাকে প্রতিরোধ করার কোনো উপায় মানুষের আয়ত্তে নেই। এমনকি এর পূর্বাভাস দেয়াও সম্ভব হয় না। তাই ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে রাখার পূর্বপ্রস্তুতিই আসল। কাজেই এ ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের সরকার বা জনগণ কতটা প্রস্তুত, সেটা বিবেচনায় আনা খুবই জরুরি।

 

উদ্বেগের কথা হলো, এ ব্যাপারে সরকারের তরফে তেমন কোনো প্রস্তুতি বা সাধারণের মধ্যেও খুব একটা সচেতনতা দেখা যাচ্ছে না। বুঝতে হবে, অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মতো ভূমিকম্পের কোনো আগাম পূর্বাভাস পাওয়া যায় না। তাই জনগণকে সম্পৃক্ত করে জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সীমিত সম্পদ ও ক্ষমতার আওতার মধ্যেই এ দুর্যোগ মোকাবিলার ত্বরিত প্রস্তুতি নেয়া ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version