-->
সম্পাদকীয়

ডলার সংকট মোকাবিলায় সমাধান দরকার

ডলার সংকট মোকাবিলায় সমাধান দরকার

দেড় বছর ধরে চলা ডলার সংকট এখনো কাটেনি। দাম বাড়লেও চাহিদামতো ডলার পাওয়া যাচ্ছে না ব্যাংকে। গত বৃহস্পতিবার ২১টি ব্যাংক ডলার সংকটে ভুগছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, ৩৯টি ব্যাংকের কাছে পর্যাপ্ত ডলার মজুত রয়েছে।

 

এ সব বিবেচনায় নিয়ে ডলারের দাম ব্যাংকগুলো কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। চরম অস্থিরতার মধ্য দিয়ে ডলারের দাম কমানো নিয়ে প্রশ্ন উঠবে স্বাভাবিক। চলমান ডলার সংকট কবে কাটবে, কেউই তা বলতে পারছে না।

 

ব্যাংকগুলোর হাতে থাকা ডলারের মজুতও কমে আসছে। ডলারের সংকট রয়েছে খোলা বাজারেও, সেখানে দাম উঠেছে ১১৭ টাকা। এটি যে অর্থনীতির জন্য মোটেও ইতিবাচক বার্তা বহন করে না, তা উপলব্ধি করতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু এর যেন কোনো সমাধান মিলছে না। উল্টো রিজার্ভ ক্রমশ কমায় ডলার সংকট আরও তীব্র হচ্ছে।

 

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, বাফেদা রপ্তানি-রেমিট্যান্স ও আমদানি সব ক্ষেত্রেই ডলারের দাম ৫০ পয়সা কমিয়েছে। এতে করে ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশের টাকার মান বাড়বে। যেটা এত দিন ছিল উল্টোমুখী। আমদানি কমে যাওয়ার কারণে ডলার চাহিদা কমে এসেছে এবং আগামী বছরের সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে বিল পরিশোধের চাপ অতিনগণ্যতে নেমে আসবে। বেশিরভাগ ব্যাংকের কাছেই প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ডলার আছে। পক্ষান্তরে সংকটেও রয়েছে কিছু ব্যাংক।

 

এ সব ব্যাংকের গ্রাহক চাইলেও চাহিদা অনুযায়ী ঋণপত্র খুলতে পারছেন না। তাই তারা বাধ্য হয়ে অন্য ব্যাংকের শরণাপন্ন হচ্ছেন। এ কারণেই কখনো কখনো অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে ডলারের বাজারে। বাস্তবতা হচ্ছে, বাজারে ডলারের সংকট প্রকট। বৈদেশিক দায় নিয়মিত শোধ করা যাচ্ছে না। বেশি দাম দিয়েও ডলার মিলছে না। দায় শোধ করতে না পারায় বাড়তি সুদসহ দন্ড সুদ দিতে হচ্ছে। আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী ডলারের দামে একক দর এখন কার্যকর হচ্ছে না। বাফেদা ও এবিবির বেঁধে দেয়া দরে ডলার বেচাকেনা হচ্ছে না। বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রণয়ন করা নীতি কাজ করছে না।

 

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ডলারের দাম কমানো হলেও বাজারে তা কার্যকর হবে কতটুকু, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ বর্তমানে ডলারের যে দাম চালু রয়েছে, সেগুলোই কার্যকর হচ্ছে না। ব্যাংকাররা নানা ফাঁকফোকর দিয়ে ডলারের দাম বেশি রাখছেন। নানা সংকটের কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ক্রমশ কমছে। এর ফলে সৃষ্ট সংকটে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে আমদানিকারকদের। ব্যবসায়ীরা সময়মতো ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারছেন না।

 

যে কারণে ব্যাংকের কাছে ব্যবসায়িক গোষ্ঠীগুলোর ধরনা দিতে হচ্ছে। কিন্তু তাতেও সমাধান হচ্ছে না। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আগে আমাদের দেশে খরচের তুলনায় ডলারের জোগান সন্তোষজনক ছিল, এমনকি বলা চলে জোগান বেশিই ছিল। কিন্তু যুদ্ধ শুরুর পর আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য ও পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ার ফলে ডলারের মজুতে টান পড়ে, শুরু হয় ডলার সংকট। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কীভাবে ডলারের প্রবাহ বাড়ানো যায়? সেই সঙ্গে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে।

 

এ সংকটের সময় শক্ত হাতে হাল ধরতে হবে। এ সময়ে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার বিকল্প নেই। পাশাপাশি অর্থসংক্রান্ত অপরাধের ক্ষেত্রে কঠোর হতে হবে। হুন্ডির দৌরাত্ম্য থামাতে ও খেলাপি ঋণের লাগাম টেনে ধরা জরুরি।

 

ভোরের আকাশ/নি

মন্তব্য

Beta version