-->
সম্পাদকীয়

কৃষি মার্কেটে আগুন আর কত স্বপ্ন ছাই হবে?

কৃষি মার্কেটে আগুন আর কত স্বপ্ন ছাই হবে?

বারবার কেন টার্গেট হচ্ছে সরকারি মালিকানার বাণিজ্যিক মার্কেটগুলো? সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন মার্কেটগুলোতে একের পর এক অগ্নিকান্ডে নানা প্রশ্ন সামনে আসছে। অতি সম্প্রতি বঙ্গবাজার, নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিকান্ডের পর গত বৃহস্পতিবার মোহাম্মদপুরে কৃষি মার্কেটে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটল। ব্যবসায়ীরা এমন ঘটনাকে ‘রহস্যের আগুন’ বলছেন। উঠেছে পরিকল্পিত আগুনের অভিযোগ।

 

আগুনে মার্কেটের থাকা অন্তত ১৮টি জুয়েলারির দোকান পুড়ে গেছে। স্বর্ণের দোকান ছাড়াও মার্কেটটিতে কাপড়, প্লাস্টিকের মালামাল, ক্রোকারিজ ও ব্যাগের দোকান ছিল। আগুনে এসব দোকানও পুড়ে গেছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২০০-২৫০ কোটি টাকা বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

 

ক্ষতিগ্রস্তরা বলছেন, সিটি করপোরেশনের যে মার্কেটগুলো ভেঙে পাকা বহুতল ভবন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সেই মার্কেটগুলোতেই আগুন ধরছে। এমনকি আগুনের সূত্রপাতও হচ্ছে শেষ রাতের দিকে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বেশকিছু কাঁচা মার্কেট ভেঙে বহুতল পাকা মার্কেট তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এসব মার্কেটের ব্যবসায়ীকে একাধিকবার উচ্ছেদের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে তারা। মার্কেট ছেড়ে দিতে ব্যবসায়ীদের নোটিশ করা হলেই তারা উচ্চ আদালতে গিয়ে আটকে দেন। ফলে সিদ্ধান্ত হওয়ার পরও নতুন মার্কেট ভবন নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

 

আর এমন আইনি জটিলতায় থাকা মার্কেটগুলোই একের পর এক আগুনে পুড়ছে। রাজধানীতে অগ্নিকান্ডের ঘটনা নতুন কিছু নয়। একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। কোটি কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে। প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। ফায়ার সার্ভিস বলছে, কৃষি মার্কেটে কোনো ফায়ার সেফটি ছিল না। প্রাথমিক ফায়ার ফাইটিংয়ের কোনো ব্যবস্থাই ছিল না। পানিরও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না।

 

মার্কেটটিকে বারবার নোটিশ দেয়া হয়েছে এবং বিভিন্নভাবে গণসংযোগ করা হয়েছে। বলা যায়, মার্কেটটি কিছুটা বঙ্গবাজার টাইপের। অগ্নিকান্ডের পর আবারো দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। বিভিন্ন সময় অগ্নিকান্ডের ঘটনা রোধে কমিটি দেয় নানা সুপারিশ। এ সময় তাদের বিভিন্ন রকম পরামর্শ দেয়া হয়। কিন্তু এসব পরামর্শ বাস্তবায়ন হয়নি। বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টরা কঠোর হওয়া দরকার ছিল।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলোর জবাবদিহিতার অভাবেই তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন হয় না। তাদের মতে, সিটি করপোরেশন এবং ফায়ার সার্ভিসসহ জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে বড় বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। বিশ্বের অগ্নিদুর্ঘটনাগুলোতে নজর দিলে দেখা যায়, নিজস্ব অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা যেখানে ভালো সেখানে ক্ষতির পরিমাণ কম। আমাদের দেশে অগ্নিকান্ড ঘটলে তুলনামূলক ক্ষতি বেশি হয়। মানুষের জীবনও যায় বেশি। অগ্নিকান্ড প্রতিরোধে নাগরিকেরও ভূমিকা রয়েছে। কেবল সচেতন হলেই অনেক অগ্নিকাÐ প্রতিরোধ করা সম্ভব।

 

অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও অব্যবস্থাপনায় রাজধানীতে প্রতিদিন ঝুঁকি বাড়লেও সেভাবে উন্নয়ন ও বিকাশ হচ্ছে না অগ্নিনির্বাপক কর্তৃপক্ষের কর্ম ও ক্ষমতার পরিধির। এ কারণে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ছে প্রায় সবখানেই। কৃষি মার্কেটের অগ্নিকান্ডের কারণ অনুসন্ধান জরুরি। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version