-->
সম্পাদকীয়

স্বর্ণ উধাও: বাঘের কাছে ছাগল বর্গা

স্বর্ণ উধাও: বাঘের কাছে ছাগল বর্গা

বাঘের কাছে ছাগল বর্গা, এ যেন সেই গল্পের মতো ঘটনা। সম্প্রতি ঢাকা কাস্টম হাউসের গুদাম থেকে ৫৫ কেজি স্বর্ণ উধাও হওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। টার্মিনাল ভবনের ভেতরে সুরক্ষিত স্থান থেকে কীভাবে এমন চুরির ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিমানবন্দর রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা (কেপিআই)। এমন একটি জায়গা থেকে কিছু উধাও হলে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই।

 

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব ইউনিট ও গোয়েন্দারা তদন্তে নেমেছেন। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা ঢাকা শুল্ক বিভাগের নজরে আসে গত শনিবার। তবে বিষয়টি জানাজানি হয় পরদিন রোববার। এ ঘটনায় শুল্ক বিভাগ একজন যুগ্ম কমিশনারের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভেতরে ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ অর্থাৎ হারিয়ে যাওয়া ও খুঁজে পাওয়া পণ্য রাখার স্থানের পাশেই রয়েছে কাস্টমসের গুদাম।

 

জানা গেছে, অবৈধ উপায়ে আনা যাত্রীদের কাছ থেকে জব্দ স্বর্ণের বার, অলংকারসহ গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র কাস্টম হাউসের গুদামে রাখা হয়। উধাও হওয়া স্বর্ণের মূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা। স্বর্ণের মধ্যে অলংকার ও স্বর্ণের বার রয়েছে।

 

ধারণা করা হচ্ছে, কোনো চক্র সুকৌশলে কাস্টম হাউস থেকে জব্দ স্বর্ণ সরিয়ে ফেলেছে। দীর্ঘদিন ধরে অল্প অল্প করে সরানো হয়েছে, নাকি একবারেই গায়েব করা তা নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে। আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।

 

ঢাকা কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা কোনোভাবেই এই চুরির দায় এড়াতে পারেন না। এতে তাদের দায়িত্বে গাফিলতির চিত্র ফুটে উঠেছে। নিয়মানুযায়ী, বিমানবন্দর থেকে চোরাচালানের স্বর্ণ উদ্ধার হলে সেটা জব্দ তালিকা করে যত দ্রুত সম্ভব (সর্বোচ্চ ৪ মাস) বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে পাঠানোর কথা। কিন্তু দুই-তিন বছর আগে জব্দ করা স্বর্ণ কাস্টম হাউসের গুদামে রেখে দেয়ার কী কারণ থাকতে পারে। স্বর্ণ লোপাটের ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে তদন্ত কর্মকর্তারা জানতে পারেন- স্বর্ণের নিরাপত্তায় যেসব নিয়ম রয়েছে তার কোনো তোয়াক্কা করা হয়নি।

 

স্বর্ণ বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে জমা দেয়ার কথা থাকলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দেখিয়ে ২০২০ সাল থেকে জব্দ হওয়া স্বর্ণ কাস্টম হাউসের গুদামে রেখে দেয়া হয়েছে। গুদাম থেকে স্বর্ণ উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনায় শুল্ক বিভাগ একজন যুগ্ম কমিশনারের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্ত শুরু করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। দুদকও ঘটনা পর্যবেক্ষণে আছে বলে জানা গেছে। ঘটনায় তিনজনকে ঘিরে সন্দেহ তদন্তসংশ্লিষ্টদের।

 

তারা হলেন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম শাহেদ, শহিদুল ইসলাম ও সিপাহি নিয়ামত হাওলাদার। গত সোমবার রাতে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা এলোমেলো বক্তব্য দিয়েছেন। তারা চুরির সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করতে চাননি। তদন্তসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, দুঃসাহসিক এ ঘটনার নেপথ্যে থাকা রাঘববোয়ালের নাম বেরিয়ে আসতে পারে।

 

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র বলছে- তাদের ধারণা, একদিনে নয়, বিভিন্ন সময়ে লকার থেকে স্বর্ণ সরানো হয়েছে। এর সঙ্গে ভেতরের লোকজন জড়িত। এর আগে ২০১৯ সালে বেনাপোল কাস্টম হাউস থেকে একই কায়দায় প্রায় ২০ কেজি স্বর্ণ ও স্বর্ণালংকার গায়েব করা হয়। পরে অডিটের আগ মুহূর্তে চুরির নাটক সাজিয়ে তা প্রচার করা হয়।

 

এ ঘটনাও ধামাচাপা দিতে রাঘববোয়ালরা নাটক সাজাতে ব্যস্ত। সংশ্লিষ্টদের নজর রাখতে হবে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। কোনোভাবে যেন ছাড় না পায়।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version