-->
সম্পাদকীয়

শুল্ক কমানোয় নিত্যপণ্যের দাম কমবে বলে বিশ্বাস করি

শুল্ক কমানোয় নিত্যপণ্যের দাম কমবে বলে বিশ্বাস করি

বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। শুধু নিত্যপণ্য নয়, বেড়েছে বিদ্যুতের দাম, প্রাকৃতিক গ্যাস ও এলপি গ্যাসের দামও। সরকারের নানা উদ্যোগ যেন কোনো কাজে আসছে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমাতে সরকারি উদ্যোগের প্রভাবসহ চার কারণে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

 

প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি, খাদ্যপণ্য ও সারের মূল্য কমে আসা, দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় এবং খাদ্য সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকারি উদ্যোগের প্রভাবে আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত থাকবে।

 

এ ছাড়া বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের কাছাকাছি দাঁড়াবে। এমন বক্তব্যে আমরা কি আশাবাদী হতে পারি? এর কতটুকু বা কার্যকর করতে পারবে সেটা এখন দেখার বিষয়।

 

উল্লেখ্য, বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সূচককে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে বেঁধে রাখার লক্ষ্য ঘোষণা করেছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। পরে তা সংশোধন করে ৬ শতাংশ করা হয়। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলার সংকট এবং আমদানিকৃত পণ্যের দাম বাড়ার কারণে সেই লক্ষ্যও পূরণ করা যায়নি।

 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে ১০ মাসের গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশে, যা কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। মূল্যস্ফীতি মূলত কোনো পণ্য বা দ্রব্যের দাম বাড়ার গতির হিসাব। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) অর্থবছরকে ভিত্তি বছর ধরে ৪২২টি নিত্যপণ্যের ওপর ভিত্তি করে এই হিসাব করে থাকে।

 

করোনার কশাঘাতে চাকরিহারা, বেকার ও আয় রোজগার কমে যাওয়া জনগোষ্ঠী দৈনন্দিন খরচের টাকা জোগাড় করতে এমনিতে হিমশিম খাচ্ছে, তার ওপর মূল্যস্ফীতির চাপে বড় ধরনের ভোগান্তিতে পড়েছে অনেক পরিবার। এ অবস্থায় যে কোনো উপায়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারলে মুদ্রার বিনিময় হার, আমদানি ও রপ্তানি খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এটা স্বাভাবিক।

 

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে উচ্চপর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠন করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্যমন্ত্রী কমিটির উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের নেতৃত্বে ১৭ সদস্যের এ কমিটি কাজ করছে। এ সবই ইতিবাচক উদ্যোগ।

 

কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো, বাজারে এর প্রভাব খুবই কম দেখা যায়। বাজার নিয়ন্ত্রণে টিসিবির মাধ্যমে খোলাবাজারে পণ্য বিপণন, বাজার মনিটরিং ইত্যাদি যেসব পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে এগুলো যেন যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। পণ্য পরিবহন নির্বিঘ্ন রাখতে বিশেষ করে কৃষিপণ্যের সরবরাহে যাতে কোনো বাধার সৃষ্টি হতে না পারে সেদিকে নজর রাখতে হবে সংশ্লিষ্টদের।

 

এর বাইরে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বাজার পরিস্থিতি তদারকি অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা এও মনে করি, কেন্দ্র থেকে স্থানীয় উৎপাদন ক্ষেত্র পর্যন্ত ব্যবস্থাপনাও নজরদারির আওতায় আনা জরুরি।

 

একই সঙ্গে আমদানিকৃত ও দেশজ উৎপাদিত- এই দুই ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন ও নির্বিঘ্ন রাখার ব্যবস্থাও নিশ্চিত করতে হবে। এসব বিষয় ধরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মনোযোগী হলে বাজারে কিছুটা হলেও প্রভাব পড়বে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version