-->

স্বাদ নেই চিনিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক
স্বাদ নেই চিনিতে

নিত্যপণ্যের মধ্যে চিনি একটি অপরিহার্য পণ্য। চিনি ছাড়া যেন চলেই না। অথচ সেই পণ্যটিও এখন সাধারণের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। দেশে চিনির দাম তেতো হয়ে উঠছে ক্রমশ। প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে ঘর-সংসার, হোটেল-রেস্তোরাঁয় ব্যবহার্য এই নিত্যপণ্যটির দাম। খোলা বাজারে অনেক সময় চিনি না পাওয়ার অভিযোগও উঠেছে।

 

প্রথমদিকে কোভিড-১৯ অতিমারি এবং বর্তমানে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ডামাডোলে ডলারের দাম বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে দফায় দফায় বাড়ানো হয়েছে চিনির দাম। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চিনির দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বারবার মিল মালিক ও আমদানিকারকদের সঙ্গে বৈঠক করে দাম বেঁধে দিলেও তা কার্যকর হয়নি, হতে পারেনি।

 

কাল থেকে চিনির নতুন দাম প্রতি কেজি ১০৭ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনি ১১২ টাকায় বিক্রির কথা বলা হলেও সেটি কার্যকরের আগেই চিনির দাম বেড়েছে বাজারে। বর্তমানে প্রতি কেজি খোলা চিনি ১১৫-১২০ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনি প্রতি কেজি ১২০-১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 

আসন্ন রমজানে তা আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন ভোক্তাসাধারণ। চিনি আমদানিকারক ও মিল মালিকদের কাছে বাণিজ্যমন্ত্রীও যেন অসহায়। তিনি নিজেই বলেছেন, ব্যবসায়ীদের দাবি মেনে দাম বাড়ানো না হলে চিনিশূন্য হয়ে পড়বে বাজার। মোটকথা, পাঁচ-সাতজন আমদানিকারক ও মিল মালিকের কাছে সরকার ও ভোক্তারা যেন জিম্মি হয়ে পড়েছে। রোজার আগে চিনির দাম বৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরতে না পারলে সামনে আরো বড় বিপদের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না।

 

অথচ সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত ২২টি পাটকল বন্ধ ঘোষণাসহ গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের পর ১৫টি চিনিকলও বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অব্যাহত লোকসানের অজুহাতে এই বন্ধের ঘোষণা হয়েছে আত্মঘাতী। ফলে, একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তারের অবাধ সুযোগ পেয়েছে ব্যবসায়ীরা। এর পাশাপাশি বিপুল উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে প্রায় এক কোটি আখচাষিসহ সংশ্লিষ্ট মহলে। দেশে চিনির সংকটের বিষয়টি সুবিদিত।

 

সময়ে সময়ে বিশেষ করে রমজানের আগে পরে, ঈদ ও পূজাপার্বণ উপলক্ষে এর দাম প্রায়ই চলে যায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সরকারকে তখন বাধ্য হয়ে চিনির আমদানি শুল্ক কমাতে হয়। রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলের মজুত ভর্তুকি মূল্যে বাজারে ছেড়ে দিয়ে সামাল দিতে হয় পরিস্থিতি। টিসিবির মাধ্যমে ট্রাকসেলে বিক্রি করতে হয় চিনি। অনেকটা চাল-ডাল-ভোজ্যতেল-আলু-পেঁয়াজের মতো অবস্থা আর কি!

 

ফলে, এসব পণ্যের আমদানিকারক, পরিশোধক ও পরিবেশকরা প্রতি বছর অবাধ প্রতিযোগিতার সুযোগ নিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসা করে লুটে নিচ্ছে বিপুল মুনাফা। আর রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর মতো একে একে বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে চিনিকলগুলো। আখচাষিদের অভিযোগ, দেশে চিনির উৎপাদন খরচ ৭০-৮০ টাকা হলেও মিল কর্তৃপক্ষ তা দেখিয়ে থাকে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।

 

আখ ও চিনি কেনাবেচায় এ রকম অনিয়ম-দুর্নীতি, মাথাভারি প্রশাসন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে চিনিকলগুলো ক্রমাগত বছরের পর বছর লোকসান দিয়েছে বলে অভিযোগ হয়েছে। এক্ষেত্রে বেসরকারি চিনি আমদানিকারক, পরিশোধক ও বাজারজাতকারীদের সঙ্গে সরকারের ওপর মহলে যোগসাজশের অভিযোগও আছে। সরকারের ভ্রান্তনীতিও চিনিকলের লোকসানের জন্য দায়ী অনেকাংশে।

 

চিনিকলের উপজাত চিটাগুড় ও ঝোলাগুড় থেকে বিপুল পরিমাণে মিথাইল ও ইথাইল অ্যালকোহল আহরণ সম্ভব। প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কায় এসব পণ্য রপ্তানির সম্ভাবনাও উজ্জ্বল। ওষুধ শিল্পেও এর বিপুল ব্যবহার রয়েছে। সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলো আধুনিকায়ন, পুনরায় চালুসহ আখের চাষ বাড়ানো অত্যাবশ্যক।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version