-->

এক্সট্রা কারিকুলাম ও একাডেমিক পড়াশোনা

জয় চৌধুরী
এক্সট্রা কারিকুলাম ও একাডেমিক পড়াশোনা

জয় চৌধুরী: ক্যারিয়ারের দিকে মনোযোগী হওয়ার স্টেজ হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন। কিন্তু আমরা বেশিরভাগই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুর দিকে ক্যারিয়ার সচেতন হই না। বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া উচিত এমনই যেখানে শিক্ষার্থীরা পাঠ্যপুস্তক থেকে যা অর্জন করবে সেটা তারা বাস্তবজীবনে প্রয়োগ করতে পারবে, যেখানে পাঠ্যপুস্তক পড়ার চেয়ে ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জনের সুযোগ বেশি থাকবে।

 

তাই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনটাকে শুধু পড়ালেখার গন্ডির ভেতর না রেখে, আউট নলেজ অর্জনের দিকেও ফোকাস রাখতে হবে। ভার্সিটি জীবন পার করার আগেই প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীরই একজন ভালো টিম লিডার, ভালো কমিউনিকেটর, কুইক আইডিয়া জেনারেটর, ডেডিকেটেড এবং ইনফরমেটিভ হওয়া উচিত। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার পাশাপাশি এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিসে সক্রিয় হওয়া উচিত। এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিসের মাধ্যমে অর্জিত দক্ষতাগুলো একজন শিক্ষার্থীকে পেশাগত এবং ব্যক্তিগত জীবনে উপকৃত করবে।

 

আমরা সবাই কমবেশি ‘এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিস’ শব্দটির সঙ্গে পরিচিত। এটার বাংলা করলে দাঁড়ায় পাঠ্যক্রমবহিভর্‚ত কার্যক্রম কিংবা সহশিক্ষা কার্যক্রম। আরেকটু সহজ করে বললে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা পুঁথিগত বিষয়ের বাইরের জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হয়ে যে কাজগুলো করে থাকে তাকে একস্ট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিস বলা হয়। ইংরেজিতে এটাকে সংক্ষেপে ‘ইসিএ’ বলা হয়।

 

উদাহরণস্বরূপ কিছু এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিস হচ্ছে- ক্লাবিং, ডিবেটিং, স্কাউটিং, ভোলান্টিয়ারিং, রিসার্চিং, বই পড়া, খেলাধুলা, ছবি আঁকা, নাচ-গান-আবৃত্তি, ব্লগিং, লেখালেখি এবং বিজ্ঞানচর্চা।

 

এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিস একজন শিক্ষার্থীকে কোন কোন দক্ষতাগুলো অর্জনে সহায়তা করে?

 

দক্ষতাকে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। প্রথমটা হচ্ছে হার্ড স্কিল এবং দ্বিতীয়টা হচ্ছে সফট স্কিল। হার্ড স্কিলটা অনেক কিছুকে অন্তর্ভুক্ত করে থাকে। হার্ড স্কিলের অংশ হিসেবে কম্পিউটার স্কিলের কথা যদি বলি এটা বর্তমান ডিজিটাল যুগের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্কিল। কিছু কম্পিউটার স্কিলের নাম হচ্ছে- বেসিক শর্টকার্ট অব কম্পিউটার, ইন্টারনেট বেসিকস, মাইক্রোসফট অফিস, গোগল স্যুইট, প্রোডাক্টিভিটি সফটওয়্যার, অপারেটিং সফটওয়্যার, প্রেজেন্টেশন সফটওয়্যার, প্রোগ্রামিং, ওয়েবসাইট ডিজাইনিং বা ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিক্স ডিজাইনিং এবং কমিউনিকেশন ট্যুল। কিছু গুরুত্বপূর্ণ সফট স্কিল যেগুলো একস্ট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিসের মাধ্যমে অর্জিত হয়।

 

নেটওয়ার্কিং স্কিল : নেটওয়ার্কিং স্কিলটা বাস্তবজীবনে কত বেশি প্রয়োজন সেটা ‘প্রয়োজন’ সম্মুখে না আসা পর্যন্ত বোঝা অসম্ভব। আমরা বেশিরভাগই মনে করি, মামা-চাচা না থাকলে চাকরি পাওয়া খুব দুষ্কর। কথাটা পুরোপুরি সত্য নয়। এই যুগে নেটওয়ার্কিংটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন এবং সেটা যদি চাকরির ক্ষেত্রে হয় তাহলে তো আর কোনো কথাই নাই। বিভিন্ন সংগঠনে যুক্ত হলে সিনিয়রদের সঙ্গে ভালো একটা নেটওয়ার্কিং করার সুযোগ থাকে। শুধু যে সিনিয়রদের সঙ্গে হয় তা কিন্তু না। একটা সংগঠনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীরা থাকে- সেক্ষেত্রে এক ডিপার্টমেন্টের হয়ে অন্য ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নেটওয়ার্কিং ক্রিয়েট করা যায়।

 

কমিউনিকেশন স্কিল : ব্যক্তিগত এবং প্রফেশনাল জীবনে কমিউনিকেশন স্কিলটার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। কমিউনিকেশন স্কিলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে কোনোভাবে কমিউনিকেশন গ্যাপ বা ইনফরমেশন গ্যাপ হতে না দেয়া। এই স্কিলটা তখনই অর্জন করা সম্ভব হবে যদি আপনি এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিসের সঙ্গে সংযুক্ত থাকেন।

 

নেতৃত্বদানের স্কিল এবং ভালো টিম প্লেয়ার : একস্ট্রা-কারিকুলার এক্টিভিটিসের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী কার্যকরীভাবে টিমে কাজ করার সুযোগ পায় যা তাকে একজন টিম প্লেয়ার হতে সহায়তা করে। একজন শিক্ষার্থী টিমে কাজ করে যা শিখতে পারবে তা কখনো বইয়ের পাতা থেকে শেখা সম্ভব নয়। যারা টিমওয়ার্কে অভ্যস্ত না তারা চাকরিজীবনে গিয়ে যখন টিমওয়ার্ক করতে হয় তখন তারা দিশেহারা হয়ে পড়ে। টিমওয়ার্কের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী বিভিন্ন মানসিকতার, দক্ষতার, ক্যাটাগরির এবং সৃজনশীলতার অধিকারী ব্যক্তিদের সঙ্গে কাজ করে তখন সে একেকজনের কাজ থেকে একেকরকম ইনফরমেশন পায় এবং নিজেকে আরো ইম্প্রুভ করতে সহায়তা করে। নেতৃত্বদানের দক্ষতা বাড়িয়ে দেয় এবং একজন ভালো টিম প্লেয়ার হতে সহায়তা করে।

 

প্রেজেন্টেশন এবং পাবলিক স্পিকিং স্কিল : সংগঠন বা ক্লাবিং করার মাধ্যমে প্রেজেন্টেশন এবং পাবলিক স্পিকিং স্কিলও বৃদ্ধি করা যায়।

 

মাল্টিটাস্কার এবং টাইম ম্যানেজমেন্ট : চাকরিজীবনের এই স্কিলটাও বেশ প্রয়োজন। কেননা কিছু কিছু সময় নিজের কাজের দায়িত্বের বাইরেও অনেক কাজ চলে আসে তখন নিজের কাছে বেশ চাপ বা কাজের প্রেসার লাগে। কিন্তু একজন মাল্টিটাস্কার এই দায়িত্ব খুব সুনিপুণতার সঙ্গে ম্যানেজ করে নিতে পারবে। মাল্টিটাস্কার হতে পারলে টাইম ম্যানেজমেন্টেও খুব পারদর্শী হয়ে ওঠা যায়। পড়ালেখার পাশাপাশি একজন শিক্ষার্থী যখন বিভিন্ন এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিসের সঙ্গে সংযুক্ত হয় এবং খুব দায়িত্বের সঙ্গে সবকিছু মেনটেইন করে নিজের পড়ালেখাও বেশ ভালোভাবে চালাতে পারে এটাকেই বলে মাল্টিটাস্কার।

 

এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিস আরো অনেক বিষয়ে সহায়তা করে যেমন- সৃজনশীলতা বাড়ায়, মানসিক চাপ কমাতে সহযোগিতা করে, প্রতিভার বিকাশ করতে সহযোগিতা করে, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে সহযোগিতা করে এবং সর্বোপরি নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং উন্নতি ঘটায়।

 

বর্তমানে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীদের বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যাওয়ার আগ্রহ বেশ প্রবল। কিন্তু এই ইচ্ছা পূরণের জন্য সবসময় ভালো রেজাল্ট একমাত্র হাতিয়ার হতে পারে না। তাই পড়াশোনার পাশাপাশি এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিসের সঙ্গে সংযুক্ত থাকা জরুরি।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version