-->

মানবতার জননী উন্নয়নের কাণ্ডারি শেখ হাসিনার জন্মদিন

আবদুচ ছালাম
মানবতার জননী উন্নয়নের কাণ্ডারি শেখ হাসিনার জন্মদিন

আজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার শুভ জন্মদিন। বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে মহান রাব্বুল আল আমিনের কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া জানাই, আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনার মতো এমন একজন মহীয়সীকে আমাদের নেত্রী ও দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পেয়েছি।

 

১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার নিভৃত পল্লি টুঙ্গিপাড়ায় তাঁর জন্ম। প্রকৃতির নানা বৈচিত্র্যময়তাকে অবলোকন করেই বেড়ে ওঠা এই মহীয়সী নারী প্রকৃতি দ্বারা দারুণভাবে প্রভাবিত, তা তাঁর চিন্তা-চেতনায় ধরা পড়ে। তিনি প্রকৃতি ভালোবাসেন, তাই প্রকৃতিকে বুঝেন এবং প্রকৃতির মাঝে মিশে যেতে পারেন। যেকোনো পরিস্থিতিকে সামলে নেয়ার সহজাত ক্ষমতা বুঝি প্রকৃতি থেকেই তিনি পেয়েছেন। তা ছাড়া তাঁর পিতা-মাতাও ছিলেন অনন্য সাধারণ ব্যক্তিত্ব। তাঁদের মধ্যেও ছিল প্রকৃতি থেকে পাওয়া অনন্য সাধারণ গুণাবলি। পিতা শেখ মুজিবর রহমান গ্রামের ধুলাবালি গায়ে মেখে, গ্রামবাংলার মানুষকে ভালোবেসে বঙ্গবন্ধু হয়েছিলেন। যে ভালোবাসার তাড়না তাঁকে বাংলা ও বাঙালির মুখে হাসি ফোটাতে, বাঙালির অধিকার আদায়ের সংগ্রামে জীবনটাকে উৎসর্গ করতে প্রভাব রেখেছে।

 

বঙ্গবন্ধু বুঝেছিলেন বাংলার আছে অফুরান সম্পদ, আছে অসম শক্তি। বাঙালির কষ্টসহিষ্ণুতা, সুপ্ত আবেগ, সাহস জাগিয়ে ও অদম্য মানসিকতায় গড়ে তুলে নিজেদের সম্পদ ব্যবহারে স্বাধীনভাবে পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে পারলে দেশে সমৃদ্ধি আসবে। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হবে, মানুষের মুখে হাসি ফুটবে। দেশ সোনার বাংলায় পরিণত হবে। তিনি তার জীবন ও যৌবনের সবটুকু দিয়ে তাই করেছিলেন। বাঙালিকে মুক্তির মোহনায় টেনে এনেছিলেন এবং বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ যোদ্ধা জাতিতে পরিণত করে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তাই তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। দূরদর্শী নেতৃত্ব আর হিমালয়সম ব্যক্তিত্বের অধিকারী পিতা বঙ্গবন্ধুর গুণাবলি, আদর্শ কন্যা শেখ হাসিনা বুকে ধারণ করতে পেরেছেন। মাতা ফজিলাতুন্নেছা ছিলেন ত্যাগের প্রতিমূর্তি। মাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ধৈর্যশীলতা, ন্যায় পরায়ণতা, মানবিকতা, মমতাশীলতা, ত্যাগের মহান শিক্ষা কন্যা শেখ হাসিনার মননে ভালোভাবেই বাসা বেঁধেছে।

 

কৈশোরে ভাই বোন, পাড়া প্রতিবেশীদের সাথে খেলাধুলায় মেতে থাকা শেখ হাসিনার স্নিগ্ধতা সহজেই মানুষকে বিমোহিত করত। পরিবারে রাজনৈতিক আবহে বেড়ে ওঠার কারণে স্কুলজীবন থেকেই শেখ হাসিনার তৎকালীন আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ততা। রাষ্ট্রীয় পরিস্থিতি ও আন্দোলনমুখর পরিবেশ ছাত্রাবস্থাতেই তাঁর মাঝে সংগ্রামী চেতনার উন্মেষ ঘটায়। কলেজ জীবনে তিনি সরাসরি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হন।

 

বাংলার স্বাধিকার আদায়ের সংগ্রাম, ঐতিহাসিক ছয়দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ ও নেতৃত্বদানের মধ্য দিয়ে অসামান্য ভূমিকা রেখেছিলেন।বই পড়া, গান শোনা, আবৃত্তি ও সংস্কৃতিমনস্কতা শেখ হাসিনাকে একজন আধুনিক রমণী করে তুলেছে। তাঁর চলন, বলন, উপস্থিতি মানুষের মনে মুগ্ধতা ছড়াতে পেরেছে সহজেই। বিয়ের পিঁড়িতে বসে তিনি আদর্শ ঘরনি হতে পেরেছেন, হতে পেরেছেন আদরিনী বধূ, স্নেহময়ী ও মমতাময়ী মা।

 

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা ও মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় লাভের পর বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার হতে মুক্তিলাভ করে স্বদেশে ফিরে দেশের রাষ্ট্রপতি হলেও অত্যন্ত সহজ, সরল ও সাধারণ জীবনযাপন করতেন তাঁর পরিবার। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ছোট বোন শেখ রেহানাসহ জার্মানিতে থাকাবস্থায় দেশের জঘন্যতম ও কলঙ্কজনক হামলায় পিতা বঙ্গবন্ধু, মাতা, ভাইসহ পরিবারের সবাইকে হারিয়ে অনেকটা নিঃস্ব হয়ে পড়েন শেখ হাসিনা। স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনককে হারিয়ে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে নেমে আসে অমানিশার কাল। বঙ্গবন্ধু হত্যার বেনিফিশিয়ারি খন্দকার মোস্তাক, জিয়া গং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলে নিয়ে নেয়। বঙ্গবন্ধুর খুনি মোস্তাক-জিয়ার পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে ’৭১ এর পরাজিত রাজাকার, আলবদর, আল শামস দেশে পুনর্বাসিত হতে থাকে। পক্ষান্তরে বঙ্গবন্ধু কন্যাদের বেছে নিতে হয় প্রবাসের শরণার্থী জীবন। দীর্ঘ ছয়টি বছর লন্ডন ও ভারতের দিল্লিতে রাজনৈতিক আশ্রয়ে কাটাতে হয়। নানা অজুহাতে দেশে আসতে দেয়া হয়নি তাঁদের। এদিকে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দল একেবারে কোনঠাসা হয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগে ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্বের অভাবে সাংগঠনিক কাঠামো একেবারেই ভেঙে পড়ে। বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করাও এদেশে অনেকটা শাস্তিযোগ্য অপরাধে পরিণত হয়। এ অবস্থায় ১৯৮১ সালের ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ইডেন হোটেলে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু-কন্যাকে ঐক্যের প্রতীক হিসেবে সর্বসম্মতিক্রমে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। স্বৈরাচারী জিয়া সরকারের নানা ভয়ভীতিকে উপেক্ষা করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা যখন বাংলার মাটিতে পা রাখেন তখন লাখ লাখ মানুষ তেজগাঁও বিমানবন্দরে সমবেত হয়ে তাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রীকে প্রাণঢালা অভিনন্দন জানায়।

 

সেই থেকে রোদ, বৃষ্টি, রক্ত, ঘামের দুঃসহ সময় ও দুর্গম যাত্রায় বাংলার পথেপ্রান্তরে ঘুরে বাংলার জনগণকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সংগঠিত করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা হয়ে ওঠেন জনগণের নেত্রী। মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার আদায় এবং গণতন্ত্রের জন্য লড়াই সংগ্রাম করতে গিয়ে বহুবার নিশ্চিত মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয় গণমানুষের প্রিয় জননেত্রী শেখ হাসিনাকে। প্রতিবারই গণমানুষই বর্ম হয়ে তাদের প্রিয় নেত্রীকে রক্ষা করেছেন। সর্বোপরি, মহান সৃষ্টিকর্তার অপার কৃপা জননেত্রী শেখ হাসিনার ওপর ছিল বলেই তিনি বারবার বেঁচে যান। বারবার জালিমের জেল, জুলুম, হামলা, মামলা ও মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা হয়ে ওঠেন লৌহমানবী।

 

১৯৯৬ সালে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করে দেশকে উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে এগিয়ে নিতে থাকেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘদিন ধরে রাজাকার-স্বৈরাচার ও মৌলবাদী মোর্চা দেশে তাদের ডালপালার বিস্তার ঘটিয়েছে। এটিকে কাজে লাগিয়ে এবং পাকিস্তানের আইএসের অর্থনৈতিক সহায়তায় ২০০১ সালে নির্বাচনে কারচুপির মাধ্যমে আবারো শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষমতা থেকে সরিয়ে নিজেরা সরকার গঠন করে। এবারে তারা ধৃষ্টতার সব মাত্রাকে ছাড়িয়ে স্বীকৃত খুনি ও রাজাকারদের মন্ত্রিসভায় স্থান করে দেয়। সারা দেশে জঙ্গি ও মৌলবাদের বিস্তার ঘটায়। আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়ে দেশকে অতল গহ্বরে টেনে নিয়ে যায়। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে জঙ্গি গোষ্ঠীকে বঙ্গবন্ধুকন্যাসহ আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃবৃন্দকে হত্যা করে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করে নিশ্চিহ্ন করার সব ষড়যন্ত্র করে। বাংলার মানুষের দোয়া, ভালোবাসা ও আল্লাহর অসীম মেহেরবাণীতে বারবারই আমাদের নেত্রী রক্ষা পেয়ে যান। বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন ও সমৃদ্ধি আল্লাহ আয়ালা তার হাতেই রেখেছেন বলেই হয়তো তিনি তাঁকে রক্ষা করে যাচ্ছেন বারবার। ২০০৮ সালে পুনরায় সরকার গঠন করে তিনি বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে দেশকে পরিচালিত করে উন্নয়ন আর অগ্রগতির যে ধারায় নিয়ে আসতে সক্ষম হন, তাতে ২০১৪ ও ২০১৯ সালের নির্বাচনেও জনগণ তাঁকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দেন। লেখার কলেবর বৃদ্ধি না করে বিভিন্ন খাতের উন্নয়নের আলাদা আলাদা বিবরণ, পরিসংখ্যান ও সূচক উল্লেখ না করেও এককথায় বলা যায়, জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে অদম্য গতিতে। উন্নয়নে, অগ্রগতিতে, মানবিকতায়, ন্যায় নিষ্ঠতায়, সুশাসনে তিনি আজ সারা বিশ্বের বিস্ময়, অগ্রগতির দৃষ্টান্ত, বাংলার অহংকার।

 

আমি প্রিয় নেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার শুভ জন্মলগ্নে তাঁর সুস্বাস্থ্যময় দীর্ঘ জীবন কামনায় মহান রাব্বুল আল আমিনের দরবারে দুহাত তুলে ফরিয়াদ ব্যক্ত করছি।

বাংলাদেশ চিরজীবী হোকজয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধুজয়তু শেখ হাসিনা।

 

লেখক: সাবেক চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও কোষাধ্যক্ষ, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version