-->

শুভ জন্মদিন রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা

মুজতবা আহমেদ মুরশেদ
শুভ জন্মদিন রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা

যে দেশ একজন সঠিক নেতা লাভ করে না, সে দেশ অগ্রগতিতে পৌঁছোয় না। যে দেশে একজন রাষ্ট্রনায়ক থাকেন না, সে দেশের জনগণ অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকে। সে দেশের মানুষের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসে না। জনগণ আধুনিক জীবনধারায় বিশ্বের মানচিত্রে মর্যাদার আসনে আসীন হয় না। কিন্তু বাংলাদেশ পেয়েছে আপনাকে। বাংলাদেশের জনগণ পেয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে এবং তাঁর সুদক্ষ নেতৃত্বকে। এ কারণেই জননেত্রী শেখ হাসিনার যথাযথ নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে জায়গা করে নিয়েছে। সে কারণেই বাংলাদেশের জনগণ স্মরণ করে আপনাকে, শুভেচ্ছা জানায় আপনার জন্মদিনে। শুভ জন্মদিন আমাদের নেত্রী, আমাদের হাসু আপা।

 

অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অগ্রগতির ধারার সাথে বাংলাদেশের ইতিহাসের পাতায় আরো বিশেষ যে কারণে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন, তা হলো একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতাকারী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছেন। স্বাধীনতা অর্জনের গৌরবোজ্জ্বল অহংকার ও নেতৃত্ব মুছে দিতে বিপথগামী যে সামরিক কর্মকর্তারা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করেছিল, তাদেরকেও আদালতের কাঠগড়ায় নিয়ে সর্বোচ্চ সাজা প্রদান করে জাতিকে কলংকমুক্ত করেছেন তিনি।

 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার আগে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পরিস্থিতি বহুলাংশে ছিল দুর্বল। কুড়ি বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্রক্ষমতায় এলো এবং ২০০৮ সাল থেকে পরপর তিনবার ধারাবাহিকভাবে তিনটি নির্বাচনে জয়লাভ করে ক্ষমতায়। ফলে উন্নয়নের ছোঁয়া চারদিকে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি আজ দৃশ্যমান। বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় এখন ২৮২৪ মার্কিন ডলার। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে; যদিও একইসাথে এ কথাও বলতে হয় যে, প্রতিটি নাগারিক এর সমান সুফল লাভ করছে না। যেটি ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনায় একটি অনিবার্য ফল। তবে শেখ হাসিনার প্রচেষ্টা একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্রপদ্ধতি গড়ে তোলা, যেখানে সব নাগরিক উন্নত জীবনযাপন করতে পারবে। এ সিদ্ধান্ত সামনে রেখেই তিনি কাজ করছেন। সে কারণে বাংলাদেশের সামনে রয়েছে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির রোডম্যাপ- ভিশন-২০৪১।

 

আমরা বিশ্বের অর্থনৈতিক চিত্রের দিকে তাকালে দেখতে পাই, বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশে^র মধ্যে ৩৯তম এবং ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে (পিপিপি) ২৯তম, যা দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয়। লক্ষ্যণীয়, গত এক দশক ধরে বাংলাদেশ গড়ে ৬.৩ শতাংশ হার ধরে রেখে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে এবং বর্তমানে বিশ্বের সপ্তম দ্রুত উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে।

 

বাংলাদেশের জিডিপির আকার এখন ৩৯৭ বিলিয়ন বা ৩৯ হাজার ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার। এই জিডিপির আকার হিসাবে নিয়েই বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। দেখা যাচ্ছে, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে একমাত্র ভারতই বাংলাদেশের ওপরে রয়েছে। দেশটির জিডিপির আকার ৩ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন বা তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। বৈশ্বিক তালিকায় ভারতের অবস্থান ষষ্ঠ। জিডিপির ভিত্তিতে শীর্ষ ৫০-এ দক্ষিণ এশিয়ার আর কোনো দেশ নেই।

 

আমরা অর্থনৈতিক বিকাশের দিকে তাকালে দেখতে পাই- এ অগ্রগতি সাধিত হওয়ার পেছনে বাংলাদেশে উন্নত ভৌত অবকাঠামো মজবুত করা এবং এটি অর্থনৈতিক কাঠামোর ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে। কর্ণফুলি নদীর তলদেশের টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট সিস্টেমসহ টেকসই বৃহৎ অবকাঠামো নির্মাণ করা ছিল শেখ হাসিনার অন্যতম ভাবনা। সেই সাথে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু’। এটি বাংলাদেশের স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে সহজতর করবে এবং আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধি করবে। বলাবাহুল্য, এই সেতু জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ১ দশমিক দুই-তিন শতাংশ হারে অবদান রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

 

একটি দেশকে আধুনিক জীবনযাত্রায় এগিয়ে নিতে হলে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে মানবসম্পদের উন্নয়ন অতি আবশ্যক। মানুষ আছে বলেই রাষ্ট্র গঠিত হয়। সেই মানুষের সব ধারার মানোন্নয়ন না করতে পারলে একটি রাষ্ট্র ব্যর্থ বলে বিবেচিত। সে পরিপ্রেক্ষিতে এ কথা মানতেই হবে, শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশে মানুষের জীবনযাপন মানের সব সূচক ঊর্র্ধ্বমুখি। আমাদের দেশে নারীর সংখ্যা প্রায় অর্ধেক। এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে অশিক্ষিত, কর্মবিমুখ এবং রাষ্ট্র পরিচালনা করার দক্ষতা অর্জনের বাইরে রেখে বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পারবে না। একইসাথে এটিও সত্য, তাদেরকে পিছিয়ে রাখা মানবতারও লঙ্ঘন। সুতরাং নারীর ক্ষমতায়নের গুরুত্ব অনুধাবন করেছেন শেখ হাসিনা। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশের নারী সমাজ এগুচ্ছে। তাদের ক্ষমতায়নের সূচক উঠতির দিকে। বাণিজ্য অথবা সরকারি ও বেসরকারি কাজের প্রতিটি বিভাগেই অসংখ্য নারী এখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

 

কর্মক্ষম জনশক্তির বাইরে সামাজিক বৈষম্য দূর করতে সমাজের সবচেয়ে দুর্বল ব্যক্তিদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার। যাতে সমাজের কেউ পিছিয়ে না থাকে। সেদিকে মনোযোগী হয়েছে। স্বামী-পরিত্যক্ত নারী, বিধবা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, তৃতীয় লিঙ্গ এবং অন্যান্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সামাজিক ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিদ্যমান সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় উপকৃত হচ্ছেন।

 

প্রাথমিক শিক্ষা, খাদ্য নিরাপত্তা, মা ও শিশু মৃত্যু হ্রাসের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। আমরা যদি স্বাক্ষরতা হারের কথাই ধরি, তবে সুস্পষ্টভাবে গত এক দশকে সাক্ষরতার হার ৫০ শতাংশ থেকে ৭৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। শিক্ষা কেবল প্রচলিত ধারায় অর্জন করলে বিশ্বের সাথে তাল মেলানো সম্ভব নয়। সে জন্য প্রয়োজন টেকনোলজিক্যাল শিক্ষা। বর্তমান সরকার তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের ওপর অধিক গুরুত্বারোপ করেছে।

 

বিগত দশকগুলোতে বাংলাদেশে জন্মের পরই অনেক শিশু অকালেই ঝরে যেত। সে অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে দীর্ঘ লড়াই করছে সরকার। বাংলাদেশের শিশুমৃত্যুর হার এখন প্রতি হাজারে ২১ জনে এবং প্রতি লাখ জীবিত জন্মে মাতৃমৃত্যু হার ১৭৩ জনে নেমে এসেছে। মানুষের গড় আয়ু এখন ৭৩ বছরের অধিক। সমাজের মাঝে এমন ধারার অর্থনৈতিক গতি সঞ্চালনের পাশাপাশি বাংলাদেশকে একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট হিসেবে গড়ে তুলতে এ দেশে তিনি ঘটিয়েছেন সাংস্কৃতিক জাগরণ।

 

একটি দেশ নিজের প্রচেষ্টায় অর্থনৈতিক অগ্রগতি নির্মাণে বা গণতান্ত্রিক শক্তিকে মজবুত করতে এগিয়ে যেতে সক্ষম। কিন্তু সারা বিশ্বের প্রাকৃতিক পরিবেশ ঠিক রাখতে সক্ষম নয়। অতি উন্নত বা অনুয়নের ধারায় সম্পৃৃক্ত করতে শিল্প-কলকারখানা নির্মাণ করে উৎপাদন বাড়াতে সক্ষম দেশগুলো ধারাবাহিকভাবে বিশ্বের প্রাকৃতিক পরিবেশ বিঘ্ন করছে। এ বিপর্যয়ের দায়ভাগ নিয়ে আন্তরিকভাবে পরিবেশের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে না সঠিকভাবে। এমন এক বিবর্ণ পরিস্থিতিতে মানবজাতির জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হলো জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব। জলবায়ু নিয়ে প্রতিশ্রুতি দেয়া আর ভাঙার একটি দুষ্টচক্র আমরা অতীতে দেখেছি। আমাদের এখনই এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সেখানেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাঁর কণ্ঠ সোচ্চার করেছেন।

 

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের সঙ্গে এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ অসংখ্য পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ। ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের সভাপতি থাকাকালে বাংলাদেশ ‘মুজিব ক্লাইমেট প্রস্পারিটি প্লান’ গ্রহণ করে, যার লক্ষ্য হলো বাংলাদেশকে ‘ঝুঁঁকির পথ থেকে জলবায়ু সহনশীলতা ও জলবায়ু সমৃদ্ধির টেকসই পথের’ দিকে নিয়ে যাওয়া। জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কিত আমাদের জাতীয় পরিকল্পনা এবং নীতিগুলো জেন্ডার সংবেদনশীল করে তৈরি করা হয়েছে। ঝুঁঁকিতে থাকা অন্য দেশগুলোকে তাদের নিজস্ব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করতে বাংলাদেশ প্রস্তুত বলে আমাদের প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন। অন্তর্ভুক্তিমূলক জলবায়ু কার্যক্রমের প্রসারের জন্য শেখ হাসিনা বিশ^ নেতৃবৃন্দকে আহ্বান জানিয়েছেন।

 

নিজেদের ভালো রাখতে হলে প্রতিবেশী দেশের সাথে সুসম্পর্ক দৃঢ় করা একটি অনস্বীকার্য বিষয় এবং সেখানে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সমুদ্রসীমার শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি করেছেন তাঁর নেতৃত্বের সরকার। ফলে বাংলাদেশের উন্নয়নের নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে সুনীল অর্থনীতি। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে সামুদ্রিক সম্পদের টেকসই ব্যবহার, সংরক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনার জন্য বিশ্বব্যাপী অংশীজনদের সঙ্গে একযোগে কাজ করার দৃঢ় ইচ্ছা পোষণ করে বাংলাদেশ। সামুদ্রিক সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনার জন্য সমুদ্র আইন সম্পর্কিত জাতিসংঘের কনভেনশনের বিধানগুলোর কার্যকর বাস্তবায়ন অপরিহার্য। এ বিষয়ে যেকোনো দুর্বলতা উত্তরণের জন্য ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার এবং জাতীয় এখতিয়ারের বাইরের অঞ্চলে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবহারের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় আন্তর্জাতিক আইন যা ‘বি বি এন জে’ নামে পরিচিত, সেটি প্রণয়নে আরও তৎপর হওয়ার জন্য সদস্য দেশগুলোকে আহ্বান জানাই।

 

শেখ হাসিনার সুদূরপ্রসারি চিন্তার আলোকে নির্মিত পরিকল্পনায় বাংলাদেশ যে কেবল অর্থনীতিতে শক্তিশালী হয়েছে তা নয়, তিনি সব সময় ডাক দিয়েছেন শান্তির। শান্তি ও মানবতার খাতিরেই তিনি মিয়ানমারের সেনা শাসকের নির্যাতনে আপন জন্মভূমি থেকে উচ্ছেদ হওয়া এগারো লক্ষাধিক রোহিঙ্গা আজ বাংলাদেশে শরণার্থী। এ কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মাদার অব হিউম্যানিটি উপাধি প্রদান করেছে বিশ্ববাসী।

 

আমাদের নেতা শেখ হাসিনাকে বিশ্বের মানুষ নানাভাবে মর্যাদা দিয়েছে। ২০১৮ সালে বিশ্বনেতা কে?- এমন একটি প্রশ্নের উপরে বিশ্লেষণী জরিপ হয়। প্রশ্নটি দাঁড়ানো মূলত ৫টি বিষয়ের ওপর। সেসব উত্তর বিবেচেনা করে বিশ্বনেতা নির্বাচন করা হয়। এগুলো হলো- ১. বিশ্বশান্তি ও কল্যাণকামিতার কথা ওই সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান কতটা ভাবেন। ২. তাঁর নীতি এবং কাজ কীভাবে বিশ্বকে ইতিবাচক ধারায় নিতে প্রভাবিত করে। ৩. একটি সুনির্দিষ্ট কাজ যা বিশ্বকে সরাসরি উপকৃত করেছে। ৪. বিশ্বের অন্যান্য দেশের নেতাদের তিনি কতটা প্রভাবিত করতে পারেন এবং ৫. তার গৃহীত কর্মের দীর্ঘস্থায়ী ইতিবাচক প্রভাব কেমন।

 

বিশ্বের খ্যাতিমান বারোটি বিশ্ববিদ্যালয় এ কাজটি করে। এদের মধ্যে আছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, ইয়েল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো, জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি, বোস্টন ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গ, ইউনিভার্সিটি অব মিউনিখ এবং ইউনিভার্সিটি অব টোকিও।

 

ওই বারোটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ও সরকার বিষয়ে উচ্চতর গবেষণা করেছেন এমন একশজন শিক্ষার্থীর মতামতের ভিত্তিতে এই তালিকা তৈরি করেছে গবেষণা সংস্থা পিপলস অ্যান্ড পলিটিক্স। তাঁদের ভোটে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছেন অ্যাঙ্গেলা মার্কেল। তবে, বিশ্ব নেতার তালিকায় পঞ্চম স্থানে আছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

সম্প্রতি বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্তে বিনা কারণে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী শক্তি প্রদর্শন করছে। গোলাগুলি ছুঁড়ে যুদ্ধের উসকানি প্রদান করছে। কিন্তু বাংলাদেশ শান্তির প্রয়োজনে অসীম ধৈর্য ধারণ করে আছে। এমনকি এখনো বাংলাদেশ জাতিসংঘে এ বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করেনি। তবে সে পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৩ সেপ্টেম্বর, জাতিসংঘের ৭৭তম অধিবেশনে আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি এখন আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করব মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দিকে। গত মাসে ২০১৭ সালে স্বদেশ থেকে বস্তুচ্যুত হয়ে তাদের গণহারে বাংলাদেশে প্রবেশের পাঁচ বছর পূর্ণ হয়েছে।

 

রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে প্রত্যাবাসনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরিতে দ্বিপাক্ষিক, এবং জাতিসংঘসহ অন্যান্য অংশীজনদের নিয়ে আলোচনা সত্ত্বেও একজন রোহিঙ্গাকেও তাদের মাতৃভূমিতে ফেরত পাঠানো যায়নি। মিয়ানমারে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সশস্ত্র সংঘাত বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনকে আরও দুরূহ করে তুলেছে। আশা করি, এ বিষয়ে জাতিসংঘ কার্যকর ভূমিকা রাখবে।’

 

প্রসঙ্গত তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘায়িত উপস্থিতি বাংলাদেশের অর্থনীতি, পরিবেশ, নিরাপত্তা এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। তাদের প্রত্যাবাসনের অনিশ্চয়তা সর্বস্তরে ব্যাপক হতাশার সৃষ্টি করেছে। মানবপাচার ও মাদক চোরাচালানসহ আন্তঃসীমান্ত অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনকি এ পরিস্থিতি উগ্রবাদকেও ইন্ধন দিতে পারে। এ সংকট প্রলম্বিত হতে থাকলে তা এই উপমহাদেশসহ বিশ্বের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।

 

রোহিঙ্গা সমস্যার বাইরে তিনি বিশ্ববিবেকের কাছে আবেদন জানিয়ে বলেন, ‘বিশ্ব বিবেকের কাছে আমার আবেদন, অস্ত্র প্রতিযোগিতা, যুদ্ধ, স্যাংশন বন্ধ করুন। শিশুদের খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপত্তা দিন। শান্তি প্রতিষ্ঠা করুন। আমরা দেখতে চাই একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্ব। যেখানে থাকবে বর্ধিত সহযোগিতা, সংহতি, পারস্পরিক সমৃদ্ধির ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা’।

 

তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সম্পর্কে বলেন, ‘আমরা ইউক্রেন ও রাশিয়া সংঘাতের অবসান চাই, নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা নিষেধাজ্ঞা মানি না। একটি দেশকে শাস্তি দিতে গিয়ে, নারী, শিশু ও গোটা মানবজাতিকে শাস্তি দেওয়া হয়। এর প্রভাব একটি বিশেষ অঞ্চলে থাকে না। বরং সব মানুষের জীবন-জীবিকা মহাসংকটে পতিত হয়। মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা বঞ্চিত হয়। বিশেষ করে শিশুরাই বেশি কষ্ট ভোগ করে। তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে হারিয়ে যায়।’

 

একাত্তর ও পঁচাত্তরে তাঁর নিজের জীবনের যুদ্ধ ও ষড়যন্ত্র ক্যুয়ের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘তাই যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই, মানব কল্যাণ চাই। মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন চাই, আগামী প্রজন্মের জন্য শান্তিময় বিশ্ব ও উন্নত সমৃদ্ধ জীবন নিশ্চিত করতে চাই। আমার আকুল আবেদন, যুদ্ধ, অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করুন। সমুন্নত হোক মানবিক মূল্যবোধ, আসুন, সবাই একসঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ তৈরির পথে এগিয়ে যাই। আমাদের আগামী প্রজন্ম যেন শান্তিতে বসবাস করতে পারে, উন্নত জীবন পায়। সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ।’

 

তাঁর নেতৃত্বে অন্যতম অর্জন হলো বাংলাদেশের সমুদ্র সীমা নিষ্পত্তি। মিয়ানমার ও ভারতের সমুদ্রসীমা নিয়ে আইনি বিরোধের চূড়ান্ত নিষ্পত্তির মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের এলাকাভুক্ত সমুদ্রের অংশ, এক্সক্লুসিভ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও মহীসোপানসহ মোট ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার এলাকার ওপর স্বত্বাধিকার লাভ করে। বাংলাদেশ এখন আর ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল নয়। এর সাথে যুক্ত হয়েছে সুবিশাল সমুদ্র অঞ্চল। আরও একটি বাংলাদেশ। মাটি ও পানি নিয়ে গঠিত বাংলাদেশ এগুচ্ছে এবং এগিয়ে চলবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। সমুদ্রের নীল জলরাশি ও সেখান থেকে সম্পদ আহরণ করার পরিকল্পনা ২০৪১-এ সুনীল অর্থনীতির কৌশল গ্রহণ করেছে এ সরকার। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ আরও সমৃদ্ধশালী হবে।

 

বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক সমৃদ্ধির নেতৃত্ব নিয়ে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বলা দরকার, একজন নেতাকে রাষ্ট্রনেতা বা রাষ্ট্রনায়ক বলে যখন অভিষিক্ত করা হয়, তখন হিসাব করে দেখা যায়, দেশের জন্য করা তাঁর অসংখ্য কাজ ও জনগণের সার্বিক মুক্তির প্রতি গভীর করে অবদান থাকে। সে নেতার গৃহিত কাজগুলো দেশের জনগণের জন্য বয়ে আনে সুদূরপ্রসারি ইতিবাচক ফল। বলা হয়, রাষ্ট্রনায়ক হলেন তিনি, যিনি সরকারের নীতি প্রণয়নে পারদর্শী। বিশেষত: সেজন্য রাষ্ট্র পরিচালনায় একজন সক্রিয় শক্তি তিনি। রাষ্ট্র পরিচালনায় গৃহিত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দক্ষ পরিচালক সে মানুষ। অবশ্যই সে ব্যক্তি জ্ঞানী, দক্ষ এবং সম্মানিত রাজনৈতিক নেতা। এমন তাত্ত্বিক হিসাবের প্রতিটি অনুপরমাণু ভাঙলে বাংলাদেশ পরিচালনায় একটি নামই সমুজ্জ্বল, তিনিই হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

এ লেখাটি শেষ করতে গিয়ে মনে পড়ছে, গত বছর মার্চে নেপালের প্রসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেছেন, ‘আপনি বিশ্বের দারুণ এক অনুপ্রেরণাদায়ী নেতা।’ এই আবেগমণ্ডিত উক্তিটির সাথেই আমরাও একস্বরে প্রতিধ্বনি করি। ব্যক্তিগতভাবে বলি, জাপানি এবং জার্মান দূতাবাসে সিকি শতাব্দী ধরে রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করার সুবাদে বিরোধীদলীয় নেত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার সাথে আমার দেখা হয়েছে রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার সভায় অনেকবার। আনুষ্ঠানিক সভা শেষে প্রতিবার তিনি কোমলস্বরে আমার এবং আমাদের পরিবারের খোঁজ করেছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমার পিতা অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আজিজুর রহমান, এমএনএ ছিলেন সহপাঠী। তিনি ছিলেন বৃহত্তর দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের তিন দফায় নির্বাচিত সভাপতি এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে সে অঞ্চলের প্রধান সংগঠন। দেশপ্রেমিক ও সর্বস্বত্যাগী অমন এক নেতার পুত্র হওয়ার সুবাদেও জননেত্রী শেখ হাসিনার স্নেহ পেয়েছি এবং বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচকভাবে কাজ করতে আমাকে অনুপ্রাণিত করেছেন গভীরভাবে।

 

যে রাষ্ট্রনায়কের জন্য এমন আবেগ, বাংলাদেশের সেই মহান নেতার আজ ৭৬তম জন্মদিন। এ দেশের জনতার পক্ষ থেকে আবারো আপনাকে অভিবাদন। আবারো জন্মদিনের শুভেচ্ছা। শুভ জন্মদিন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। আপনি দীর্ঘজীবী হোন।

 

লেখক : উপদেষ্টা সম্পাদক, দৈনিক ভোরের আকাশ, কবি, কথাসাহিত্যিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version