-->

গণপরিবহন সেক্টরের ব্যবস্থপনা

যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়
গণপরিবহন সেক্টরের ব্যবস্থপনা

গণপরিবহনের সঠিক ব্যবস্থাপনার প্রশ্নে আমরা এখনও কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌছাতে পারিনি। এই সেক্টরে ভগ্নদশা তো আছেই, তার উপর চেপে বসেছে অব্যবস্থাপনা-অনিয়ম-অবহেলা। বহু প্রত্যাশা নিয়ে কেরানীগঞ্জের ঘাটার চর হতে রাজধানীর উপর দিয়ে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর পর্যন্ত গত ডিসেম্বরে ৫০টি বাস নামিয়ে চালু হয়েছিল ঢাকা নগর পরিবহন। সে সময় ঢাকা দক্ষিণের মেয়র আশা প্রকাশ করেছিলেন, এই রুটে আরো ১০০টি বাস যুক্ত হবে। সেই সঙ্গে আরো তিনটি নতুন রুটের কথাও ভাবা হয়েছিল। রুটভিত্তিক কোম্পানির অধীনে বাস চালুর এই উদ্যোগ প্রথম গ্রহণ করেছিলেন উত্তরের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। কথা ছিল, ক্রমান্বয়ে ঢাকার পুরোনো, জরাজীর্ণ গণপরিবহন সরিয়ে বিভিন্ন রুটে ৪ হাজার নতুন বাস নামানো হবে এবং প্রতিটি রুটে নির্দিষ্ট কোম্পানির অধীনে চালানো হবে, যাতে বাসে বাসে প্রতিযোগিতা না হয় এবং শৃঙ্খলা আনা যায়। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের খানিকটা উদ্যোগ গত ডিসেম্বরে নেওয়া হলেও ছয় মাস যেতে না যেতেই তা মুখ থুবড়িয়ে পড়ে। উদ্দেশ্য ও পরিকল্পনা খুবই ভালো ছিলÑবলাই বাহুল্য। যেখানে-সেখানে না থামা, টিকিট ছাড়া বাসে না তোলা, অন্য বাসের সঙ্গে প্রতিযোগিতা না করার কারণে যাত্রীদের কাছে জনপ্রিয়ও হয়েছিল। কিন্তু কী কারণে এটি বন্ধ হয়ে যাবার পথে তা সরেজমিনে গভীরভাবে খুঁজে দেখা প্রয়োজন। এই রুটের কোথায় দুর্বলতা তা খুঁজে না বাহির করলে সামনে যে আরো কয়েকটি রুটে বাস নামাবার পরিকল্পনা রয়েছে তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।

উন্নয়নশীল বিশ্বে আমরা প্রায়ই লক্ষ করি, বহু জনকল্যাণমুখী উদ্যোগ, বিশেষ করে সরকারের উদ্যোগ যতেœর অভাবে, সচেতনতার অভাবে সফল হতে পারে না। এই সকল দেশে ব্যক্তিমালিকানাধীন উদ্যোগ যতটা কার্যকর হতে দেখা যায়, ততটা কার্যকর হতে পারে না সরকারি সেবামূলক উদ্যোগগুলো

একসময় ঢাকার যানজট নিরসনের জন্য ওয়াটার বাস চালু করা হয়েছিল। ঢাকার মতো একটি মেগা সিটিতে রেলপথ, পানিপথ এবং সড়কপথ কাজে না লাগাতে পারলে যানজট হতে মুক্তি পাওয়া সহজসাধ্য হবে না। ঢাকার চারপাশে রয়েছে নদীপথ। কিন্তু কাজে লাগানো যাচ্ছে না এসব। বহু প্রত্যাশা নিয়ে গাবতলী হতে সদরঘাট, টঙ্গী হতে নারায়ণগঞ্জ এবং বুড়িগঙ্গা পার হবার জন্য ওয়াটার বাস চালু করা হয়েছিল। কিন্তু তা প্রায় শুরুতেই ব্যর্থ হয়েছে। ১২টি ওয়াটার বাসই বর্তমানে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। এই প্রকল্পের পেছনে প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। ২০১১ সালে এটা ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, যদিও তা আর অগ্রসর হয় নি।

২০১৬ সালে চালু হওয়া গুলশান-নতুন বাজার বনানী রুটে চালু হয়েছে ‘ঢাকা চাকা’। বহাল তবিয়তে চলছে এই উদ্যোগ। শুধু তাই নয়, ঢাকা চাকার পর চালু হয়েছে ‘গুলশান চাকা’। তাও চলছে সমানতালে। ১০টি বাস নিয়ে চালু হয়ে ঢাকা চাকা এখন আরো সম্প্রসারিত হয়েছে। কাজেই ভেবে দেখতে হবে যে, পার্থক্যটা কোথায়, সমস্যাটা কোথায় এবং গলদটা কোথায়! উন্নয়নশীল বিশ্বে আমরা প্রায়ই লক্ষ করি, বহু জনকল্যাণমুখী উদ্যোগ, বিশেষ করে সরকারের উদ্যোগ যত্নের অভাবে, সচেতনতার অভাবে সফল হতে পারে না। এই সকল দেশে ব্যক্তিমালিকানাধীন উদ্যোগ যতটা কার্যকর হতে দেখা যায়, ততটা কার্যকর হতে পারে না সরকারি সেবামূলক উদ্যোগগুলো। দায়িত্বজ্ঞান ও শৃঙ্খলার অভাব, ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা এসব অসফলতার প্রধান কারণ। এ সকল বিষয়ে তথা গণপরিবহন সেক্টরের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

 

মন্তব্য

Beta version